করোনার যুগে বিনোদন যদি ভার্চুয়ালই হয়, তবে থিয়েটার কি শেষ পর্যন্ত আদৌ টিকবে?
করোনার প্রভাব না কমলেও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জনজীবন। সরকারি থেকে বেসরকারি অফিস সহ শপিং মল, দোকান, রেঁস্তোরাও খুলছে ধীরে ধীরে। কিছু বিধিনিষেধ মেনে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে সিরিয়ালের শুটিং। সিনেমার শুটিংও শুরু হবে 10 জুন থেকে। তবে সবকিছুই হবে বিধিনিষেধ মেনে, দূরত্ব বজায় রেখে, সীমিত সংখ্যক শিল্পী এবং কলাকুশলী নিয়ে। সিনেমা অথবা সিরিয়ালের শুটিং শুরু এবং উপস্থিতির হার নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে থিয়েটারের ক্ষেত্রে। কারণ দর্শক না থাকলে থিয়েটার হয় না। থিয়েটারের আর্থিক অবস্থা কোনও কালেই স্বচ্ছল ছিল না। তার মধ্যে করোনার থাবায় দিশেহারা থিয়েটারের কারিগররা। কলকাতার থিয়েটার হয়তো কোনও রকমে প্রাণে বাঁচলেও জেলার থিয়েটার দলগুলোর অবস্থা বেহাল। প্রচুর মানুষ আছে যারা শুধুমাত্র থিয়েটারের উপর ভরসা করেই জীবন চালা। আজ তারাই সবচেয়ে বেশি অসহায়। কারণ থিয়েটারের অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে। সিনেমা মুক্তি পেতে পারে ইন্টারনেটে কিন্তু থিয়েটারের ক্ষেত্রে তার উপায় নেই। থিয়েটারের শ্বাস-প্রশ্বাসে থাকে সজীবতা, তা কখনও ভার্চুয়াল হতে পারে না, তার শিরা-উপশিরা সরাসরি সংযুক্ত হয় দর্শকদের সঙ্গে। দর্শকই থিয়েটারের মুখ্য মাধ্যম। দর্শককে বাদ দিয়ে থিয়েটার অসম্ভব। এদিকে যে কোনও জমায়েতের উপর রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা।
থিয়েটারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন পরিচালক, অভিনেতা, কলাকুশলী সকলেই। অভিনেত্রী-পরিচালক তুলিকা দাসের বক্তব্য "মানুষ কালকে বাঁচবে কিনা তারই কোনও নিশ্চয়তা নেই, সেখানে থিয়েটার আবার কবে আগের মতো হবে, তা বলা মুশকিল। আগামী এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে থিয়েটারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে।'
আরও পড়ুন: অন্তর্যাত্রায় ‘ঊষা’ |
নাট্য ব্যক্তিত্ব প্রবীর গুহ’র মতে, "এই তিনমাস লকডাউনের ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক কিছু পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ মানুষের হাতে টাকা না থাকায় তাঁরা আর বিনোদনের কথা ভাবছেন না। একদিন থিয়েটার দেখতে যে পয়সার প্রয়োজন, তা দিয়ে এক দিনের সংসার খরচ চলে যাবে। এখন সবার আগে আমাদের মানুষকে বোঝাতে হবে বা বিশ্বাস করাতে হবে, থিয়েটার সমাজের কল্যাণের জন্য। দ্বিতীয়ত, প্রোডাকশনের কাজের ধরন বদলাতে হবে যাতে কম খরচে একটা প্রোডাকশন নামানো যায়। সর্বোপরি, আগে মানুষ আসত আমাদের কাছে, এখন আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে। এতে দর্শকের ধরন পরিবর্তন হবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের নাটকের ধরনেও কিছু বদল আনতে হবে'।
আরও পড়ুন: "মানুষ'-এর গল্প বলছেন সোহিনী |
অনেক ছোট দল, বিভিন্ন ছোট ছোট উপস্থাপনা ইউটিউবের মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন ভিডিও কনফারেন্স প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট সময় একজন বা দুজনের নাটক দেখানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: অর্পিতা ঘোষের "ভিট্টন' |
অভিনেত্রী-পরিচালক সুরঞ্জনা দাশগুপ্তের মতে, "এগুলো সবই থিয়েটারে মতো, থিয়েটার নয়। ইউটিউব বা অনলাইনে সব নাটকই নির্ভর করে 'like & subscribe' এর উপর। নাটকের সেই ফ্লেভারটা তাতে থাকে না। থিয়েটারে আমরা সবসময় শিখেছি এবং শিখিয়েছি সবাইকে জড়িয়ে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে, সকলকে বেঁধে রাখতে। সেই ভাবনাতেই এখন আঘাত নেমে এসেছে, ফলে অনেকটাই ভেঙে পড়েছি'।
আরও পড়ুন: "এভাবেই যদি কাঁদতে থাকে গালিব' |
এই পরিস্থিতিতে থিয়েটারের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়িয়ে, তা নিশ্চিতভাবে জানা নেই কারও। তবে নাটক মানুষের শুভ চেতনার একাধারে ফসল এবং বীজ। তাই, কীভাবে সুদিন ফিরবে না জানা থাকলেও আশাবাদী সকলেই: কোনও একটা আগামী দিন এক উজ্জ্বল সকাল নিয়ে আসবেই। শুধু সেটা কবে কেউ জানে না।
কলকাতাকে গো-হারান হারিয়ে দিল চন্দননগর। সংযমে, শৃঙ্খলায়, দায়িত্ববোধে
মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে নিরন্ন মানুষের হাতে ব্যাগ ভরতি বাজার তুলে দিচ্ছেন ওঁরা।
একটা রোগ কীভাবে মানুষকে এক করে দিচ্ছে, অপরের জন্য ভাবতে শেখাচ্ছে সেটাও শেখার।
ইছাপুরের মানুষের কাছে রাজা দা বেঁচে থাকবে ওর কাজের মাধ্যমে।
আগামী এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে থিয়েটারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে
ইরফান খানের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার এক নক্ষত্র পতন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে।