×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • গালিবের স্মৃতিচরণ

    সঞ্চারী সেন | 27-02-2020

    নাটকের একটি দৃশ্য

    এভাবেই যদি কাঁদতে থাকে গালিব

    তবে হে পৃথিবীর বাসিন্দাগণ

    দেখবে, এই বসতি পরিণত হয়েছে

    এক শূন্য প্রান্তরে –

     

    এমনই এক পংক্তিযুগল প্রায় দু শতক আগে লেখা গালিবের কলমে,যা দুর্ভাগ্যক্রমে আজও সত্যি। আজও বাস্তব তাঁর সাধের দিল্লীর বিশেষ বিশেষ মহল্লার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনা। সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশের দিল্লী দখলের পর ফার্সি এক কবিতায় লিখেছিলেন,

    এখন শস্ত্রধারী ইংরেজ সেনা স্বেচ্ছাচারীস্বাধীন

    আতঙ্কহিম নিশ্চল মানুষ পথ জনহীন।

    নিরানন্দ বাসভূমি আজ কারাগার

    শহর নাগরিকের রক্তরঙিন...

     

    এমন সমাপতন ভাল লাগেনা। তাই প্রায় একরকম জোর করেই  চলে যাই ১৮২৮ এর ফেব্রুয়ারি মাসে। সে সময়েই, এমনই এক বসন্তদিনে গালিব এসেছিলেন এই কলকাতায়। নিছক জীবনরক্ষার তাগিদেই, পারিবারিক পেনশন নিয়ে রাইটারস বিল্ডিং এ দরবার করতে।

     

    কিন্তু ভাল লেগে গিয়েছিল এই বাংলার নিবিড় শ্যামলিমা, এখানকার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, এখান থেকে প্রকাশ হওয়া ভারতবর্ষের প্রথম উর্দু-ফার্সি সংবাদপত্র, যার মধ্যে রামমোহন রায়ের মিরাত উল অখবার ও ছিল। আর ভাল লেগেছিল এখানকার আম। হুগলীর ইমামবাড়ার সে সময়ের এক ট্রাস্টিকে লিখেছিলেন, গোলাপবাগানের গোলাপ এবং হুগলীর আম, এই দুই সমার্থক... আমার উত্‍সুক হৃদয়ের প্রত্যাশা, মরসুম শেষ হবার আগে অন্তত দু তিনবার আপনি আমায় স্মরণ করবেন।

     

    অত্যন্ত রসিক, হাজির জবাব এই মানুষটি কলকাতার মাদ্রাসা আলিয়ায় আয়োজিত এক মুশায়রা বা কবিসম্মেলনে কাব্যসংক্রান্ত এক বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন, কোনও একটি  শব্দের ব্যাকরণগত শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সেকালের কিছু ফার্সিনবীশ, যদিও সে আপত্তি শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি, কিন্তু গালিব দস্তুরমত দুঃখিত হয়েছিলেন এই ঘটনায়।

     

     আমাদের আশ্চর্য করে দিয়ে কলকাতার এই ঘটনা পুনরভিনীত হল সেই আলিয়ার প্রাংগনেই, যেটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।  না বাস্তবে নয়, অভিনব এই নাটকের আয়োজক পশ্চিমবঙ্গ উর্দু আকাদেমি। নাট্যদলের পুরোধা দিল্লীরই ড. সয়ীদ আলম। এক মহান কর্ম  সম্পন্ন করেছেন এই  আকাদেমি, পাঁচ দিন ধরে নানাভাবে, আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং  কবিসম্মেলন, গজল গায়ন, কাব্যপাঠ, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে ১৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গালিবকে স্মরণ করে। এই বাংলার মাটিতে, নানা ভাষার সাহিত্যের পীঠস্থানে, সকলকে নিয়েই।

     

    তবে গালিবের মত কবিদের জীবনান্ত বলে কিছু নেই। কলকাতাও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেছে। শক্তি চট্টোপাধ্যায় গালিবেরই একটি কবিতার অনুবাদ করেছিলেন এভাবে-

    কিচ্ছু না থাক বিবাদ আছে, সেও তো বড় কমটি নয়

    আমার সাথে তোমার বাঁধন চুকিয়ে দেবার অর্থ হয়!

     

    সম্পর্ক চোকানোর প্রশ্নই নেই, বরং এই আকালে আরও আঁকড়েই ধরি সেই কবিকে, যিনি কলকাতা সম্পর্কে পরম আবেগে বলে উঠেছিলেন,

    কলকত্তে কা যো জিকর কিয়া তুনে  হমনশিন

    এক তির মেরে সিনে মে মারা কে হায় হায়...

     

    কাব্য, সাহিত্যের এ বিনিময় চলতে থাকুক। আমিন।

     


    সঞ্চারী সেন - এর অন্যান্য লেখা


    বশিষ্ঠ রামের হাতে মিষ্টি (প্রসাদ?) দিলেন দারাকে দেওয়ার জন্য

    পেশোয়ারী খানদান আর অভিনয় দক্ষতার বৈচিত্রে তিনিই যেন মিনি ভারতবর্ষ।

    বাংলার ভোটে সংযুক্ত মোর্চার হার মানেই তার রাজনৈতিক প্রয়োজনের অবসান নয়।

    কিছুদিন আগের জন্মদিনে ইসমতের বয়স হল একশো পাঁচ। কিন্তু আজও কী তারুণ্য তাঁর লেখায়!

    আমাদের ছোটবেলায় জন্মদিনে বই দেওয়ার প্রথা ছিল

    আজও বাস্তব গালিবের সাধের দিল্লীর বিশেষ বিশেষ মহল্লার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনা।

    গালিবের স্মৃতিচরণ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested