×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মানুষের গল্প বলছেন সোহিনী

    রুষা ভট্টাচার্য ও বিতান ঘোষ | 18-03-2020

    সোহিনী সেনগুপ্ত


    গ্রামের মানুষের সব ছেড়ে শহরে চলে আসার গল্প এখন মঞ্চে। নান্দীকারের সাম্প্রতিকতম নাটক "মানুষ’তার মহড়ায় প্রায় একা হাতে সবদিক সামলাচ্ছেন পরিচালক। এরই মধ্যে সোহিনী সেনগুপ্ত কথা বললেন তাঁর নাট্যভাবনা, এখনকার নাটক, সমাজে নাটকের অবস্থান নিয়ে।

     

    প্রঃ- পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলা পরিচালক হিসেবে কাজ করতে কোনও অসুবিধা হয়েছে?

    উঃ- আমার বাবা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বর সপ্তর্ষি, আমার শ্বশুরমশাই সবাই খুব ফেমিনিস্ট। আমার শ্বশুরমশাইয়ের দিদা সেই সময় ফরিদপুরে মহিলা-ম্যাগাজিন চালাতেন। এদের থেকে সবসময়ই আমি সহযোগিতা পেয়েছি। এখনও কোন পুরস্কার পেলে আমি প্রথম ফোনটা পাই শিবু-র (পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) কাছ থেকে। আবার আমি যে স্কুলে পড়াই, সেখানকার অফিস-স্টাফও আমার নাটকের শো-এর খুঁটিনাটি বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়। এরাও তো প্রত্যেকে পুরুষ, এরপরও আমি কী করে বলবো যে আমি তাঁদের সহযোগিতা পাইনি?  এটা ঠিক যে, অনেকসময় আমার অনেক সহ-অভিনেতার সঙ্গে কিছু সমস্যা হয়েছে, কিন্তু তাই বলে আমি কখনও পিছিয়ে আসিনি। আসলে আমার মনে হয় ফেমিনিজম্ একটা আদর্শগত ধারণা, শুধুমাত্র নারী-পুরুষের ব্যাপার নয়।

     

    প্রঃ- কোনও নাটক মঞ্চস্থ করার পিছনে মূল ভাবনা কী থাকে?

    উঃ- নান্দীকারে আমরা অনেকে মিলে কাজ করি। কোনও নাটক মঞ্চস্থ করার আগে আমি দেখি সবাইকে সুযোগ দিতে পারছি কি না। দলের প্রত্যেক ছেলেমেয়ে নাটকের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারছে কি না, সেটা মাথায় রেখে স্ক্রিপ্ট করি। আমার মায়ের গুরু, শ্রদ্ধেয় এ.সি. ব্যানার্জি বলতেন, "একটা চিত্রনাট্য যতই খাজা হোক না কেন, চেষ্টা না করে হাল ছেড়ে দিও না'। তাই কোনও গল্প একবার চেষ্টা না করে ছেড়ে দিতে চাই না। আসলে আমার মনে হয়, কোনও খারাপ গল্প নিয়ে কাজ করতে করতে সেটা থেকে একটা সময় ভাল কাজ বেরিয়ে আসে

     

     

    প্রঃ- নান্দীকার-এর নবীন সদস্যদের নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?

    উঃ- এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো প্রত্যেকে ভীষণ প্রতিভাবান। এরা আনন্দের সঙ্গে কাজটা করে। নান্দীকারের একটা সার্টিফিকেট কিন্তু এদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। মঞ্চের পাশাপাশি এরা যাতে জীবনমঞ্চেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সবসময় সেই চেষ্টাই করি। এদের মধ্যে অনেকেই অন্য নাট্যদলে কিংবা ছোটপর্দার ধারাবাহিকে কাজ করেন। এক্ষেত্রে আমার কোন ‘ট্যাবু’ নেই।

     

    প্রঃ- নাট্য পরিচালনায় কী কারণে মেয়েরা এগিয়ে আসছে বলে মনে হয়? পরিবেশগত পার্থক্য না সময়ের দাবি?

    উঃ- বাকিদের কথা বলতে পারব না। তবে আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমি এটা করছি কারণ আমি এটা করতে চেয়েছি। নান্দীকারকে ছেড়ে অন্য কিছু করার কথা কখনও ভাবিনি। আসলে, ব্যক্তিগত জীবনে আমার চাহিদা খুব কম। একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে যেটুকু উপার্জন করি, তাতে আমার দিব্যি চলে যায়। তবে হ্যাঁ, নিজের এই স্বপ্নের পথে হাঁটতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তার জন্য আমি কখনোই আমার এই স্বপ্নের সঙ্গে সমঝোতা করিনি।

    প্রঃ- ‘পারমিতার একদিন'-এর পর বড় পর্দায় আপনাকে নিয়মিতভাবে দেখা গেল না কেন?

    উঃ- "পারমিতার একদিন'-এর পর আমি তো "ইচ্ছে', "অলীক সুখ' -এর মত সিনেমাতেও অভিনয় করেছি। ছোট পর্দায় ‘ঠাকুমার ঝুলি’ করতে বেশ ভাল লেগেছিল আসলে মনে হয়, আমি সেরকম পরিচালক বা চিত্রনাট্য পাইনি, যেখানে আমি নিজেকে চরিত্রটির জন্য সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবআমার তেমন কোনও অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা নেই যে, আমাকে বড়পর্দায় অভিনয় করতেই হবে। যে কাজগুলো বিশ্বাস করেছি, সেগুলোই করেছি। ভবিষ্যতেও করব। এই তো পরমব্রত সৌমিত্রকাকুর যে বায়োপিক বানাচ্ছে, সেখানে অভিনয় করছি

     

    প্রঃ- বাংলার গ্রুপ থিয়েটারের বর্তমান পরিস্থিতি কী?

    উঃ- খুব ভাল পরিস্থিতি। অর্ণ, অনির্বাণ, সপ্তর্ষি, জয়রাজদের মত নতুন ছেলেরা খুব ভাল কাজ করছে। "কলকাতা রঙ্গিলা'র কৌশিক কর কিংবা "ইচ্ছেমতো'র তুর্ণাদের কাজ রীতিমতো প্রশংসনীয়। শুধু কলকাতায় নয়, এখন মফঃস্বলেও খুব ভাল কাজ হচ্ছে। যাঁদের পয়সা আছে তাঁদের তুলনায় যাঁদের নেই, তাঁরা ভাল কাজ করছেন (হাসি)আমি বলব, এইসময়ে দাঁড়িয়ে থিয়েটার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে ভাল কাজ হচ্ছে।

    প্রঃ- গণনাট্য আন্দোলন একসময় সমকালকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। তাহলে এখন বর্তমানে গণ আন্দোলনের সঙ্গে নাটকের তেমন যোগ নেই কেন?

    উঃ- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা তো পাল্টাবেই। আমার মনে হয় এখন প্রতিবাদের ধরণটা পাল্টে গেছে। আগেকার মত এখন শুধু পথে নেমে আন্দোলন হয় না। সমাজ বদলের সঙ্গে সঙ্গে আর্টফর্মেও বদল আসছে। আমাদের উচিত এই পরিবর্তনটাকে মেনে নেওয়া। এখন কাজের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু বক্তব্য আছে, সেটা বলতে দিতে হবে। আমার কাছে নাটক শুধুই একটা আর্টফর্ম। এই ধরো, যখন প্রফুল্ল রায়ের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি ‘মানুষ' নাটকটি আমরা বানাচ্ছি, তখন ‘ডিমনিটাইজেশন’ হয়ে গেছে। এনআরসি, সিএএ হয়নি। এই নাটকে একজন গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সমকালীন সব ঘটনার সঙ্গেই তাকে ‘রিলেট’ করা যাচ্ছে

     

    প্রঃ- বর্তমান প্রজন্ম কেন থিয়েটারে আগ্রহী হবে?

    উঃ- এটার বোধহয় একটাই উত্তর হয়; ভালবাসা। প্রেমে পড়লে যেমন একটা অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি হয়, এটা অনেকটা তেমনই। থিয়েটারে কাজ করার মধ্যে একটা আলাদা আকর্ষণ আছে, ভালবাসা আছে। যাঁরা থিয়েটারে কাজ করছেন তাঁরা ভালবেসে ও প্যাশানের সঙ্গে কাজ করেন। এই প্যাশন বা ভালবাসার কারণ ওরা নিজেরাই ব্যাখ্যা করতে পারে না।

     

    প্রঃ- আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

    উঃ- আপাতত অনেকগুলো কাজ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে। ৮-৯টা স্ক্রিপ্ট তৈরি আছে। সপ্তর্ষি, অনিন্দিতা-র অনেকগুলো ইন্টারেস্টিং স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়ে আছে। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তবে এখনই সেগুলো প্রকাশ্যে আনতে চাই না (হাসি)

     

    সাক্ষাত্কার : রুষা ভট্টাচার্য ও বিতান ঘোষ


    রুষা ভট্টাচার্য ও বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    নান্দীকারের সাম্প্রতিকতম নাটক ‘মানুষ’ এর মহড়ায় একা হাতে সবদিক সামলাচ্ছেন পরিচালক সোহিনী সেনগুপ্ত।

    মানুষের গল্প বলছেন সোহিনী-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested