×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • চন্দননগরের শিক্ষা

    রুষা ভট্টাচার্য | 23-11-2020

    তেঁতুলতলার প্রতিমা

    কলকাতাকে গো-হারান হারিয়ে দিল চন্দননগর। বিত্ত, বৈভব, আড়ম্বর কিংবা হুল্লোড়ে নয়সংযমে, শৃঙ্খলায়, দায়িত্ববোধে। করোনা আবহে পুজো নিয়ে মাতামাতি যাতে রোগ সংক্রমণের কারণ হয়ে না ওঠে, তার জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছিল কলকাতা সহ সারা রাজ্যের দুর্গা পুজোয়। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো ট্র্যাডিশন অনুসারে কলকাতার দুর্গা পুজোর সঙ্গেই তুলনীয়। সেখানে কিন্তু এবারের জগদ্ধাত্রী পুজো কোভিড বিধি মানার আদর্শ দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।  

     

    চন্দননগরের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অপূর্ব জগদ্ধাত্রী প্রতিমা ও চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা তেঁতুলতলা, বাগবাজার, ফটকগোড়া প্রভৃতি পুজোর টানে কলকাতা সহ দূর দূরান্ত থেকে মানুষ প্রতি বছর এই সময়ে চন্দননগরে আসে। কলকাতার দুর্গাপুজোর মতোই চারদিন ধরে চলে এখানকার পুজো। রাত জেগে ঠাকুর দেখা, অসংখ্য লোকের ভিড়, সুবিশাল প্রতিমা, দুর্দান্ত আলোকসজ্জা সব মিলিয়ে জমে ওঠে বছরের এই চারটে দিন।

     

     

    এ বছরটা অন্যান্য বছরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কোভিড-19 এর থাবা বসেছে চন্দননগরেও। সমস্ত পুজো কমিটিগুলির প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত জগদ্ধাত্রী পূজা সেন্ট্রাল কমিটি এবার তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, নিয়ম রক্ষার পুজো হবে, আড়ম্বর এবং জৌলুস সম্পূর্ণ বাদ দিয়েইতাই ফটকগোড়া বারোয়ারি, শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বাগবাজার অথবা শ্রেষ্ঠ আলোকসজ্জার শিরোপার জন্য খ্যাত বিদ্যালংকার বারোয়ারি তাঁদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে সরিয়ে রেখে বেছে নিয়েছে ঘট পুজোকে, কেবলমাত্র এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি বারোয়ারি পুজো কমিটি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে ঘরে বসে অঞ্জলি দিতে পারে এলাকার অধিবাসীরারাস্তার ধারে স্টল বা মেলার পসরা নিয়ে বসা সাধারণ মানুষের থেকে কোনও চাঁদা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা আড়ম্বরহীন, অথচ সামাজিক দায়িত্বসম্পন্ন এই পুজোকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা। শহরের ভূমিকন্যা, স্নাতকোত্তর ছাত্রী রিমঝিম রায়ের কথায়, “এমন পুজো জীবনে দেখিনি, আশা করি আর দেখবও না। কিন্তু এই বছরের জন্য এটাই ঠিক।''

     

    চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিশেষ আকর্ষণ প্রতিমা বিসর্জনের দিনটি। সেদিন বিভিন্ন  বারোয়ারির মধ্যে আলোকসজ্জার প্রতিযোগিতা হয়কার আলোকসজ্জায় কতটা নতুনত্বের ছোঁয়া, তা নিয়ে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতাও এবার বন্ধ। বন্ধ সমস্ত আলোকসজ্জা। তবে আলোকসজ্জা ত্যাগ করলেও তারা ভোলেনি আলোকশিল্পীদের কথা। বেশ কিছু বারোয়ারি আড়ম্বরের বদলে বেছে নিয়েছে সহযোগিতার পথ। আলোকশিল্পী থেকে প্যান্ডেল, চালচিত্র, সমস্ত ধরনের শিল্পী ও কারিগরদের দিকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পুজো কমিটিগুলি

     

    চন্দননগরের 2020 সালের বারোয়ারি পুজো গোটা বাংলাকে শেখাল এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কীভাবে সংযমের সঙ্গে, ঐতিহ্য মেনে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ধর্মাচারণ করা যায়। দুর্গা পুজো বা দীপাবলির মতো আদালতের হস্তক্ষেপের দরকার পড়েনি এখানে। চন্দননগর দেখিয়ে দিল উৎসব মানুষের জন্য, উৎসবের জন্য মানুষ নয়


    রুষা ভট্টাচার্য - এর অন্যান্য লেখা


    একটা রোগ কীভাবে মানুষকে এক করে দিচ্ছে, অপরের জন্য ভাবতে শেখাচ্ছে সেটাও শেখার।

    ইছাপুরের মানুষের কাছে রাজা দা বেঁচে থাকবে ওর কাজের মাধ্যমে।

    মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে নিরন্ন মানুষের হাতে ব্যাগ ভরতি বাজার তুলে দিচ্ছেন ওঁরা।

    কলকাতাকে গো-হারান হারিয়ে দিল চন্দননগর। সংযমে, শৃঙ্খলায়, দায়িত্ববোধে

    আগামী এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে থিয়েটারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে

    ইরফান খানের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার এক নক্ষত্র পতন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে।

    চন্দননগরের শিক্ষা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested