সোমবার সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ, ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যেই এক বন্ধুর ফোন, "জানিস একটা খুব বাজে খবর আছে, রাজা দা আর নেই।' প্রথমে খবরটা শুনেও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। মুহূর্তখানেক স্থির থেকে সম্বিৎ ফিরল। বুঝলাম আমাদের সকলের প্রিয় সুশান্ত সরকার ওরফে রাজা দা আর নেই। খবরটা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম। চোখের সামনে অনেকগুলো দৃশ্য যেন জীবন্ত হয়ে উঠল। এই তো সেদিন, লকডাউনের শুরুতে কমিউনিটি কিচেন হোক বা বয়স্কদের বাড়ি বাড়ি সবজি, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, রাজা দা সবসময় সক্রিয়। তারপর আম্পান পরবর্তী সময়ে ত্রাণ বিলি থেকে ত্রিপল খাটানো, দুঃস্থদের মাথার উপরে ছাদ জোগাড় সব সময়ে ব্যস্ত ছিল রাজা দা। এমনিতেও কলেজে ভর্তি হওয়া অথবা বাড়ির কারও অসুখ, সবেতেই সবাই পাশে পায় যাকে সে হল রাজা দা।
যে মানুষটাকে সবসময় সবার বিপদে পাওয়া যেত, সবার সব সমস্যায় যে হাসি মুখে পাশে দাঁড়াত সেই রাজা দাকে আর কেউ দেখতে কোনওদিন পাবে না। এ যেন এক অপূরণীয় ক্ষতি, অকারণও বটে।
যুব ফেডারেশনের নর্থ ব্যারাকপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক, জেলা কমিটির সদস্য ছিল কমরেড সুশান্ত সরকার। তবে পার্টির রং কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি রাজা দা আর মানুষের উপকারের মাঝে। দল রং নির্বিশেষে সকলের জন্যই সে ছিল সমান দায়িত্ববান। রক্তদান শিবির হোক বা স্বাস্থ্য শিবির, কলেজে ভর্তি অথবা দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীর মাইনে মুকুব, সকলের সব সমস্যার মুশকিল আসান ছিল "রাজা দা।'
সোমবার সকালে ফুলিয়া থেকে মোটর বাইকে ফিরছিল রাজা দা। তখনই কল্যাণী রোডের, কাঁপার মোড়ে ঘটে দুর্ঘটনাটি। তার সঙ্গে ছিল বন্ধু সৌমিল। তার কোথায় "মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লুচি ঘুগনি খাই, তারপর বৃষ্টি একটু কমায় আবার বাইক স্টার্ট করি। কিছুদূর যাওয়ার পরই ফের বৃষ্টি শুরু হয়। সামনে একটা টোটো যাচ্ছিল। আমাদের গাড়ির স্পিডের কাঁটা 30-32-এ ওঠানামা করছিল। হঠাৎ টোটোটা দাঁড়িয়ে পড়ায় ব্রেক কষে রাজা দা আর তখনই হালকা স্কিড করে গাড়ির চাকা। টাল সামলাতে না পেরে আমরা ডান দিকে হেলে যাই আর তখনই উল্টো দিক থেকে আসা একটা সাদা গাড়ি আমাদের ধাক্কা মারে। তারপর আর কিছু মনে নেই। পরে জানতে পারি সাদা গাড়িটা অ্যাম্বুলেন্স ছিল।'
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পাড়ার ছেলেরা। কল্যাণী জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওদের। সেখানেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয় রাজা দাকে, এবং সৌমিলের হাত ভেঙেছে সে খবর আসে। এক প্রতিবেশী ভাই রনি'র কথায় "রাজা দা নেই ভাবতে পারছি না, বয়সে বড় হলেও রাজা দা 12-72 সবার বন্ধু ছিল। পাড়ার স্বরস্বতী পুজো বা রক্তদান শিবির সবসময় রাজা দা'ই ছিল মূল উদ্যোক্তা।'
পাড়া প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়স্বজন সকলের কাছেই এ ঘটনা অকল্পনীয়। অকারণে রাজা'র মত একটি তরতাজা প্রাণের চলে যাওয়াটা পার্টি এবং সমাজের কতটা ক্ষতি তা বোঝানোর ভাষা নেই। C.I.T.U-এর জেলা সম্পাদক গার্গী চ্যাটার্জীর মতে "রাজার চলে যাওয়া এক অপূরণীয় ক্ষতি। দলমত নির্বিশেষে সে ছিল মানুষের নেতা। ইছাপুরের মানুষের কাছে ও বেঁচে থাকবে ওর কাজের মাধ্যমে।'
ইছাপুরের মানুষের কাছে রাজা দা বেঁচে থাকবে ওর কাজের মাধ্যমে।
মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে নিরন্ন মানুষের হাতে ব্যাগ ভরতি বাজার তুলে দিচ্ছেন ওঁরা।
আগামী এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে থিয়েটারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে
একটা রোগ কীভাবে মানুষকে এক করে দিচ্ছে, অপরের জন্য ভাবতে শেখাচ্ছে সেটাও শেখার।
কলকাতাকে গো-হারান হারিয়ে দিল চন্দননগর। সংযমে, শৃঙ্খলায়, দায়িত্ববোধে
ইরফান খানের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার এক নক্ষত্র পতন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে।