আশীর্বাদ না অভিশাপ, কতটা ভালো কতটা মন্দ। এসব নিয়ে আর তর্কের জায়গা নেই। জীবন এখন সোশাল মিডিয়াময় মরণ বোধহয়।
এই বিশ্বমহামারীর সময়ে কেউ কেউ সোশাল মিডিয়াকেই অস্ত্র বানিয়ে নেমে পড়েছেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। সোশাল মিডিয়াতেই তাঁরা সাহায্য প্রার্থনা করেছেন মানুষের কাছে। ফলও পাওয়া গিয়েছে।
ফেসবুকে স্বর্নাভ দে, নির্মাল্য সেনগুপ্ত, পলাশ হক সহ আরও তিনজন আবেদন জানিয়েছিলেন সোনাগাছির যৌনকর্মীদের সাহায্যের জন্য। অভূতপূর্ব সাড়া পান তারা। কয়েক দিনেই উঠে আসে এক লক্ষেরও বেশি টাকা। সেই টাকা দিয়ে তারা দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সঙ্গে কথা বলে, তাদের হাতে তুলে দেন চাল, ডাল, সাবান, মাস্ক প্রভৃতি।
হাওড়ার বালি অঞ্চলে আটকে থাকা কিছু পরিযায়ী শ্রমিক বিপদে পড়েন। অনাহারে বিনা আশ্রয়ে থাকছিলেন তারা। খবর শুনেই স্থানীয় কয়েকজন গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। সপ্তর্ষি বৈশ্য, অর্কেন্দু ভট্টাচার্য, সৌনক ঘোষ গিয়ে তাদের চাল, ডাল, আলু, তেল কিনে দিয়ে আসে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের সঙ্গে কথা বলে লালবাবা কলেজে তাদের থাকার ব্যবস্থাও করে দেয় ওরা।
তেমনই, কলকাতা পুলিশ যে বিভিন্ন ধরনের অভিনব পদক্ষেপ নিচ্ছে মানুষকে সতর্ক করে বাড়ি থাকার অনুরোধ করে, তাও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমেই সামনে আসছে। কোথাও তারা গাইছে ‘বেলা বোস’ বা কোথাও ‘আমরা করব জয়’-এর প্যারোডি। একই পন্থা অবলম্বন করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও। সোশাল মিডিয়ায় রীতিমত ভাইরাল হয়েছে তা।
আরও পড়ুন: |
গড়িয়াহাট অঞ্চলের একটি দল পথে নেমেছে পাড়ার বয়স্কদের বাড়ি বাড়ি ওষুধ এবং অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে। একই ভাবে কাজ করছে বাগুইআটির অর্জুন রায়চৌধুরী এবং তার দল। এঁরা পেশায় কেউ অধ্যাপক, কেউ বা আইটিতে আছেন, কিন্তু এই কঠিন সময়ে হাতে হাত রেখে লড়ে চলছেন।
সবই হয়েছে সোশাল মিডিয়ার হাত ধরে।
সঙ্গে সোশাল মিডিয়াই এখন পাড়ার আড্ডার ঠেক। গল্প, নানান খেলা সবই চলছে সেখানে। কেউ যা রান্না করছে তা পোস্ট করছে, কেউ একে অন্যকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে, আবার কেউ নিজের ‘ট্যালেন্ট’ প্রকাশ্যে আনছে। সময় কাটাতে বহু বইয়ের পিডিএফ ছড়িয়ে পড়ছে এখানেই। ‘চ্যালেঞ্জ-চ্যালেঞ্জ’ খেলায় আক্রান্ত এখন ফেসবুক। একজন তো মজা করে লিখেই ফেললেন, ‘দেব-এর সিনেমা এখন ফেসবুকে!’ করোনা থেকে বাঁচতে বাড়ি-বন্দি সবাই। আর সেই বন্দিদশায় সঙ্গী ফোন আর সোশাল মিডিয়া।
অন্যদিকে, ভুল খবরও ছড়াচ্ছে এই সোশাল মিডিয়ার হাত ধরেই। ভুয়ো তথ্য নানান ভাবে ‘কপি ফরওয়ার্ড’ হচ্ছে। ফলে অনেক সময়ই বাড়ছে বিভ্রান্তি। আর এখন যেন হাসপাতালে নয় সব থেকে বেশি ডাক্তারের দেখা মিলছে সোশাল মিডিয়াতেই। যে যেমন পারছে ডাক্তারি-জ্ঞান ফলাচ্ছে সেখানে। খোঁজ নিয়ে হয়তো দেখা যাবে, ওই নামে ওই হাসপাতালে কোনও ডাক্তার নেই।
আরও পড়ুন: |
যে যার ইচ্ছে মতো, সুবিধে মতো ব্যবহার করছে এই মাধ্যমকে। কেউ দূরে থাকা আত্মীয় বা বন্ধুকে এক ঝলক দেখে নিচ্ছে ভিডিও কলে। কেউ সচেতন বার্তা দিচ্ছে, আবার কেউ ভুয়ো খবর। বিরক্তি কাটাতে, এক ঘেয়েমি কাটাতে, বা খবরের জন্যে ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, ইনস্টাগ্রামই হল এখন সবার ঠিকানা।
করোনার সুনামি গ্রাস করেছে গোটা বিশ্বকে। সোশাল মিডিয়াকে আঁকড়ে ধরে বাঁচছে মানুষ। এখন আর কেউ প্রশ্ন করছে না, সোশাল মিডিয়া বর্তমান প্রজন্মের রাখাল ছেলে না সুবোধ বালক!
পরীক্ষার ধরন পড়ুয়াদের ক্ষতি করছে কিনা, করলেও কতটা, তা বোঝা কেবল সময়ের অপেক্ষা।
দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে সামিল নারীরা প্রাণদান করেছেন বয়স, সমাজ, সংসার সমস্ত বাধা উড়িয়ে দিয়ে।
মার্কের এই সফল প্রত্যাবর্তন ভবিষ্যতের নানান গবেষণার দিক খুলে দিল।
শহরের আনাচ কানাচে খোঁজ পাওয়া যায় রমা সর্দারদের যাঁরা নিজের শর্তে বাঁচেন।
বাংলার সঙ্গীত জগৎ আপাতত ডিজিটাল কনসার্টময়।
বর্তমান সময়ে যেমন বেড়েছে দাবানলের ঘটনা তেমনই বেড়েছে তার তীব্রতা। কিন্তু কেন?