×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ছক ভাঙা রমা

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 07-01-2021

    তার বাহনের সঙ্গে রমা সর্দার

    রোজকার জীবনে কত মানুষের সঙ্গেই না আলাপ হয় আমাদের, কাউকে ভুলে যাই কেউ আবার মনে থেকে যান তাঁদের ব্যক্তিত্ব, জীবনযাপনের জন্য। আর তেমনই একজন হলেন আনন্দপুরের বাসিন্দা রমা সর্দার। জীবনের প্রতিটা ধাপে রমা চেনা ছক, প্রথা ভেঙে নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছেনতিনি জীবনের প্রতিটা ধাপে বারংবার প্রমান করে দিয়েছেন লিঙ্গ অনুযায়ী পেশা ভাগ করা যায় না। লিঙ্গভেদে এই পেশা বিভাজন নিতান্তই মূর্খামিআসলে সব কাজ সবাই পারে, শুধু ইচ্ছেটুকু থাকতে হয়। বরাবরই যা সবাই করে তার থেকে অন্য কিছু করে দেখানোর নেশা ছিল রমার, কিন্তু তা যে নিজের প্রেম থেকে চাকরি সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, সেটা বোধহয় ভাবতে পারেননি তিনি 

     

     

    2008 সালে রমা গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন শুধুমাত্র গাড়ি চালাতে ভাল লাগত বলে। তখনও তিনি ভাবেননি সেই শিক্ষাই তার জীবিকা নির্বাহ করতে সাহায্য করবেআজ রমা কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত পরিবহন সংস্থার ক্যাব চালক। যে পেশায় মূলত পুরুষদেরই দেখা যায়, সেখানে তিনি বাকিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে চলেছেন শেষ দু’ বছর ধরে। তিনি এই পেশায় আসেন 2018 সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু এই পথচলা শুরু করার নেপথ্যে রয়েছে আরও এক দারুন কাহিনী।

     

    রমার ‘বিশেষ বান্ধবী’ হলেন অঞ্জু হালদার। দু’জনে জীবনের নানান ওঠা পড়ায় একসঙ্গে আছেন প্রায় 9বছর। অঞ্জুই রমাকে উদ্বুদ্ধ করেন এই পেশায় আসার জন্য, ছক ভেঙে অন্য কিছু করে দেখানোর জন্য। বর্তমানে রোজ 10-12 ঘন্টা করে কাজ করেন রমা। নানাভাবে সাহায্য পান সংস্থার থেকেও। কিন্তু বিপদ বা অসুবিধা তো যখন খুশি আসতে পারে এই পেশায়। তখন? তিনি অকপটে বলেন, ‘জীবনে তো কম্প্রোমাইজ করতে হবেই। সব জেনেই তো এই পেশায় এসেছিআলাদা কিছু করব বলে যে পথে আসা, সেই পথে বাধা বিপত্তি তো আসবেই। মানিয়ে নিতে হবে। যদিও এখনও অবধি তেমন অসুবিধায় পড়িনি। আসলে আমি মনে করি, নিজে যদি ভাল হও সবাই সাহায্য করবে। সবার সঙ্গে তার জন্য ভাল ব্যবহার করতে হবে। ওটাই আসল। জীবনটাই তো একটা চ্যালেঞ্জ, সেটাকে নিতে হবে। সব কাজই সবার জন্য, যদি সেটা করার ইচ্ছে থাকে। ভয় পেলে চলবে না।'

     

     

    কিন্তু যতই ছক ভাঙতে চান, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কি সমস্যায় পড়তে হয় না, এই যেমন খাবার, বা বাথরুম কিংবা মাসের বিশেষ দিনগুলোয়? রমা জানান, না তাকে কখনওই তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। এতদিন গাড়ি চালানোর সুবাদে মোটামুটি তার আন্দাজ বা পরিচিতি ঘটে গেছে শহরের শৌচালয়গুলোর সঙ্গে। খাবারও তিনি সঙ্গে নিয়েই বেরোন। কারণ? কারণ সতর্কতা, রাস্তার খাবার থেকে শরীর খারাপ হতে পারে সেই কারণেই তিনি বাইরের খাবার খান না। আর ঘরণী পরম স্নেহে রান্না করে দিলে তা উপেক্ষা করে রাস্তার খাবার খাওয়া নেহাতই অপরাধ!

     

    আজকাল অনেকেই নতুন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চান, করে দেখাতে চান নতুন কিছু, যা তাকে সবার থেকে আলাদা করে তুলবে। তাদের উদ্দেশ্যে রমা বললেন, ‘যা ইচ্ছে হয় তাইই করুন। শুধু ইচ্ছেটাকে মরে যেতে দেবেন না।‘ সঙ্গে শহরের বাসিন্দাদের এও জানাতে ভুললেন না যে, পথে অকারণ তাড়াহুড়ো করবেন না। রমা বলেন, ‘আপনাদের বাড়িতে যেমন কেউ অপেক্ষারত আমাদের বাড়িতেও তেমনই কেউ অপেক্ষারততাই অযথা ড্রাইভারকে তাড়া দেবেন না। প্রয়োজনে হাতে সময় নিয়ে বেরোন। তাড়াহুড়ো করলে বিপদ হতে পারে।'

     

     

    রমা সর্দারের কথায় কথায় ধরা পড়ল তিনি শুধুই ছক ভাঙতে জানেন তাই নয়, সতর্কতা মেনে জীবন কাটাতেও জানেন। তাঁর চরিত্রে সাহসের সঙ্গে যে একটা সাবধানী মনোভাব মিশে আছে তা সহজেই বোঝা যায়। আমাদের শহরে নানান ব্যস্ততায় কখনও আলাপ হয়ে যায় রমাদের সঙ্গে, পাওয়া যায় নতুন অনুপ্রেরণা, ভাল থাকার মন্ত্র। 


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    গ্যালাক্সির মাঝখান থেকে রহস্যময় রেডিও সঙ্কেতের পিছনে কি বুদ্ধিমান প্রাণী?

    নিউ নর্মালে সবই কেমন যেন বদলে যাচ্ছে, বদলে গেছে চেনা আড্ডা, চেনা জায়গাগুলো।

    লড়াই করার ভীষণ জেদকে হাতিয়ার করে মাত্র তিন বছরেই সাফল্যের স্বাদ পেল দীপান্বিতা গুপ্তর ডায়মেনশন্স

    এটাই হেডলাইন। সঙ্গে পাওয়া গেছে এই সুইসাইডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আর একটা চিরকূট। 

    সুন্দরবনের একটি অতি সাধারণ মেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেখানকার স্বাদ পৌঁছে দিচ্ছেন একা হাতে।

    প্রতিবাদের স্বর সরকার বা কর্তাদের কানে পৌঁছতে হলে প্রতিবাদীকে হতে হবে ভাইরাল

    ছক ভাঙা রমা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested