"এই রোববার কী প্ল্যান তোর?’
"একটা কনসার্ট আছে। দেখব।’
"এখন কনসার্ট? কোথায়?’
"ফেসবুকে।’
"তাই!’
অবাক হলেন নাকি? অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এটাই এখন নিউ নর্মাল। করোনার জন্য ঘোষিত লকডাউনে বাধ্য হয়েই শিল্পকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ তালিকায় ফেলে দেওয়া হয়েছে, বন্ধ হয়েছে কাজ। ভাবা হয়নি তার সঙ্গে যুক্ত থাকা হাজারো মানুষের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে। কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ, কেউ কেউ নিজের সঞ্চিত অর্থের সাহায্যেই দিন কাটাচ্ছেন। লাইভ শো বন্ধ, ফলে টেকনিশিয়ান, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, লাইট ইঞ্জিনিয়ারদের অধিকাংশই বর্তমানে কর্মহীন। রেকর্ডিং স্টুডিও বা অন্যান্য টুকটাক কাজে কিছু সংখ্যক মানুষ যুক্ত হতে পারলেও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগ কর্মীই এখনও আয়হীন অবস্থায় রয়েছেন।
এক বাংলার চ্যানেলের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো-খ্যাত শিল্পী, দীপায়ন ব্যানার্জি জানাচ্ছিলেন, "শিল্পটাকে যেহেতু অপ্রয়োজনীয় তালিকায় ফেলা হয়েছে, অনেকেই তাই কর্মহীন ভাবে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারের তরফে কোনও সাহায্য পাইনি, আমরা নিজেরাই কিছু কিছু ফান্ড তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের মনেও তো ভয় আছে, কারণ আগামী দিনে কী অপেক্ষা করছে কেউই জানি না। কবে যে সব ঠিক হবে জানা নেই। আর মিউজিশিয়ানদের আয়ের বেশিরভাগটাই এই লাইভ শোয়ের মাধ্যমে আসে।’ একই কথা বলেন সঙ্গীত পরিচালক এবং অনুপম রায় ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য নবারুণ বোস। তিনি জানান, ‘লাইভ শো বন্ধ, আর মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির অধিকাংশ শিল্পীদের আয়ের সিংহভাগই আসে এই লাইভ শো’গুলো থেকেই। জমানো পুঁজি দিয়েই অনেকের সংসার চলছে। শুধুই শিল্পী নয়, লাইভ শোয়ের সঙ্গে জড়িত থাকে আরও বহু মানুষ। তারা সবাই কর্মহীন এখন। এই পরিস্থিতির একটা ছাপ পড়ছেই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে। যদিও গান রেকর্ডিং-এর কাজ চলছে, প্রোডাকশনের কাজ হচ্ছে তাতে খানিকটা সুবিধা হচ্ছে।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতোই শিল্প জগতেও করোনা তার ভয়ঙ্কর ছাপ ফেলেছে। কাজ হারিয়ে অনেক মানুষ গৃহবন্দি। যদিও ফকিরা ব্যান্ডের সদস্য অপূর্ব দাস জানান, "শোনা যাচ্ছে সেপ্টেম্বরের শেষ কিংবা অক্টোবর থেকে আবার হয়তো লাইভ শো শুরু হবে কিছু সংখ্যক দর্শক নিয়ে।’ অপূর্ব দাসের বক্তব্যে আশ্বাসের বাণী রয়েছে। কিন্তু এই যে এতদিন, টানা পাঁচ মাস সবাই গৃহবন্দি, তাঁরা কি একটাও কনসার্ট দেখেননি? ‘শিল্প-হীন’ ভাবেই সময় কাটিয়েছেন? না, অনেকেই শো দেখেছেন। ওই যে কথাতেই আছে, একটা দিক বন্ধ হলে অন্যদিক ঠিক খুলে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সঙ্গীত শিল্পীরা নিজেদের কাজ দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন ডিজিটাল মাধ্যমকে। সেখানেই অনেকে তাঁদের নতুন কাজ প্রকাশ করছেন। এছাড়াও, একের পর এক লাইভ শো হয়ে চলেছে ডিজিটাল মাধ্যমে এবং এগুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ক’দিনেই। যদিও এই ডিজিটাল কনসার্ট, লাইভ শো-এর থেকে অনেকটাই আলাদা। নবারুণ বোস জানান, "ডিজিটাল কনসার্টগুলোও ভাল রেসপন্স পাচ্ছে। বহু মানুষ শুনছেন। কিন্তু লাইভ শো'তে যে অনুভূতি হয়, যে এনার্জি এক্সচেঞ্জ হয় তা এখানে হচ্ছে না। তবুও শিল্পীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন এই ফর্ম্যাটটাকেও নানা ভাবে আকর্ষণীয় করে তুলতে, নিজেদের সেরাটা দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে। প্রত্যেকটা ডিজিটাল কনসার্টে নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে, নতুন ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে ডিজিটাল কনসার্ট কখনওই লাইভ শোয়ের বিকল্প হতে পারে না।’ দীপায়ন ব্যানার্জিও এক মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, "ডিজিটাল কনসার্ট ব্যাপারটা আগে থেকেই ছিল, যা এই লকডাউন পরিস্থিতিতে জনপ্রিয় হয়েছে। একদম শো না হওয়ার থেকে এভাবে যে শো হতে পারছে এই মাধ্যমে, সেটা ভাল। কিন্তু লাইভ শো'তে দর্শক আর শিল্পীর যে সংযোগ তৈরি হয়, তা এক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না।’
যদিও রূপম ইসলাম এই ডিজিটাল কনসার্টকে "নব জাগরণ’ হিসেবেই দেখছেন। তিনি সোশাল মিডিয়ায় তাঁর একটি লাইভে জানান, "বাংলা ছাড়া আর কোথাও এই ডিজিটাল কনসার্ট হচ্ছে না। এটা একটা বিরাট রাস্তা দেখাচ্ছে বাংলা গানকে। অনলাইন ডিজিটাল কনসার্ট লাইভ শোয়ের বিকল্প নয়, বরং এটা একটা নতুন মাধ্যম। এবং ক্রমশ সবাই এটাকে ভালোবাসছে, পছন্দ করছে। 90-এর দশকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই আমেজ আবার ফিরে আসছে।’ বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি জানান, "মানুষ আর কত ডিজিটাল মাধ্যমে সিনেমা দেখবে? এই বদ্ধ পরিস্থিতিতে তাও এক সময় একঘেয়ে লাগছে। কিন্তু এমন সময় যদি বাড়ি বসে কনসার্ট দেখি তা অবশ্যই আমাদের ভাল রাখবে। শিল্পের হাত ধরেই তো মানুষ বেঁচে থাকার রসদ পায়। আর এখন ঘটে চলা প্রত্যেক ডিজিটাল কনসার্ট একে অন্যের থাকা আলাদা, প্রত্যেকটায় নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে, নতুন ভাবনা থাকছে।’
করোনার জন্য আমাদের জীবনে যে বিশাল একটা পরিবর্তন এসেছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তার মধ্যে আমরা যে ভাবে মানিয়ে নিচ্ছি, নতুন ভাবে যে কাজগুলো শুরু হচ্ছে তার অবশ্যই ভাল এবং খারাপ দিক রয়েছে। রূপম ইসলামের কথা মতো, বাড়ি বসেও মানুষ ভাল থাকার রসদ পাচ্ছে, নতুন গান শুনছে, ভাল কাজ দেখছে, এটা অবশ্যই শিল্পী এবং শ্রোতাদের জন্য ভাল। তেমনই লাইভ শোয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা বহু মানুষ এখনও কর্মহীন, তারা অপেক্ষারত, কবে ঠিক হবে সব। কিন্তু আপাতত এই পরিস্থিতিতে ডিজিটাল কনসার্টই একমাত্র উপায় দর্শক এবং শিল্পীদের জুড়ে রাখার জন্য, এবং দর্শকরা তাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। বাংলার সঙ্গীত জগৎ আপাতত ডিজিটাল কনসার্টময়।
ডেভিড এবং তাঁর স্ত্রী মানুষ করে চলেছেন ২২০জন সন্তানকে, আগলে রেখেছেন ওদের সস্নেহে।
হাত ধোওয়া বা স্যানিটাইজ করা উচিত, এই অভ্যেস থাকা অবশ্যই ভাল। কিন্তু অমূলক ভয় থাকা নয়।
নিজের গায়ে আঁচ না লাগা অবধি সবাই গা বাঁচিয়ে চলতে চায়।
বাঁধ দিয়ে সুন্দরবনের সদ্যোজাত নিচু দ্বীপগুলি বাঁচানো সম্ভব নয়, জনবসতি সরিয়ে নেওয়াই সমাধান
নতুন ভাবে নতুন ভাবনা দিয়ে মানুষদের সাজাচ্ছেন পুনম।
আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি কেন তুলনামূলক ভাবে কম হয়? হলেও তা ওমান বা গুজরাটের দিকে বাঁক নেয় কেন?