"আমাদের সময় মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পেলে সারা পাড়ার লোক তাকে ভিড় করে দেখতে আসত।’
"তাই নাকি? এখন তো একটু পড়লেই ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া যায়।’
"আমাদের সময় অত সহজ ছিল না।’
এক দাদু আর তার ক্লাস নাইন-টেনে পড়া নাতির আলোচনা। দু’জনের সময়ের পড়াশোনার ধরনের প্রচুর তফাত। পাল্টেছে সিলেবাস, মূল্যায়ণ পদ্ধতিও। বেশি নয়, এই সাত-আট বছর আগেও কোনও পড়ুয়া সাহিত্যে কিংবা ইতিহাস-ভূগোলে ফুল মার্কস পাচ্ছে, এ যেন ভাবনার অতীত ছিল। লেটার মার্কস পাওয়া মানেই বিশাল ব্যাপার। কিন্তু শেষ দু’-এক বছরে দেখা যাচ্ছে ইতিহাস ভূগোল সহ সাহিত্যেও ছাত্র ছাত্রীরা 100 পাচ্ছে, অন্তত 95 বা 96 তো পাচ্ছেই। কী করে?
বিদ্যা ভারতী গার্লস স্কুলের ভূগোল শিক্ষিকা, জয়িতা রাহার মতে, "পরীক্ষা এবং প্রশ্নের প্যাটার্নের জন্য এত নম্বর পাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। মাধ্যমিকে একটু পয়েন্ট-ওয়াইজ পড়লেই ভাল নম্বর তোলা যায়। এই বছর একটু আলাদাও অবশ্য, কিন্তু পড়াশোনার ধরন তো বদলেছেই। সেই সঙ্গে ছাত্র ছাত্রীদের মেধাও আছে।’ একই সুর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সুপ্রীতি করের গলায়। তাঁর মতে, "সিলেবাসও এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমাদের সময় ইতিহাস বা সাহিত্যে ফুল মার্কস ভাবাই যেত না।’ তবে হোমিওপ্যাথির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রাকৃতা ঘোষ মনে করেন, "পরীক্ষার প্যাটার্ন বদলে সেটা বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করলেও যারা ভাল নম্বর পেয়েছে তাদের মেধা এবং পরিশ্রম অবশ্যই আছে। কয়েক বছর আগে যারা পাশ করেছে মেধা তাদেরও ছিল। কিন্তু তখন প্রশ্ন পত্র এত সোজা ছিল না।’
যদি মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের প্রশ্নের ধরন দেখা যায় তাহলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে। ইছাপুর গার্লস স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা তনুশ্রী ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, "20 নম্বরের প্রজেক্ট। সেটা একটু গুছিয়ে করলেই 18-19 অনায়াসে মেলে। রইল বাকি 80। এর মধ্যে 40 নম্বর MCQ, অর্থাৎ ছোট প্রশ্ন। উত্তর ঠিক হলে নম্বর কাটার জায়গাই নেই। অতএব এই ষাট নম্বরের মধ্যে 50-55 পাওয়া যায় সহজেই। আর বাকি 40 নম্বর নিজের পড়াশোনার উপর নির্ভর করে। একটু মন দিয়ে পড়লে সেই নম্বরও অর্জন করা কঠিন নয়। প্রশ্নের ধরন যেমন পাল্টেছে, তেমনই পাল্টেছে খাতা মূল্যায়ণের ধরনও।’ তাই ভাল নম্বর দেখলেই ছাত্র ছাত্রীদের কটূক্তি করার কোনও মানে নেই।
15 জুলাই, 2020 মাধ্যমিকের ফলাফল বের হওয়ার পরই ইন্টারনেট জুড়ে শুরু হয়ে যায় ট্রোল। কেউ বলছে "পানিপথের যুদ্ধের সময় ওখানে দাঁড়িয়ে রানিং কমেন্ট্রি দিচ্ছিল নাকি রে? ইতিহাসে নাকি 100! ছোঃ!’, কারও মতে, "ক’দিন বাদে দেখব শরৎ বাবুর সঙ্গে এক টেবিলে বসে সাহিত্য আলোচনা করছে।’
কিন্তু ভাল নম্বরের জন্য কি শুধুই ছাত্রের মেধা দায়ী? বর্তমান সিস্টেমের বদল কি কেউ দেখছেই না? উল্টে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় ভাল ফল করেই মানুষের ঠাট্টার শিকার হতে হচ্ছে।
কিন্তু এই যে বদল ঘটল, এত নম্বর পাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা, এর ভবিষৎ কী? এতে কি তাদের আদৌ সুবিধা হবে? সোয়েল মীর, বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস স্টাডিজ কলেজের এমবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রের কথায়, "মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের এত নম্বর পাওয়ার ফলে ওদের ধারণাই তৈরি হচ্ছে না কলেজে এত নম্বর পাওয়া সম্ভব নয়। এরপর কলেজে উঠে কম নম্বর পেলে হতাশা বাড়বে। এত নম্বর দিলে আখেরে ক্ষতিই হবে ছাত্রদের।’ দক্ষিণ কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক শিক্ষিকা জানান, "যে সিস্টেমে বর্তমান সময়ে লেখাপড়া চলছে তা ঠিক নয়। এই সিস্টেমে 100 পেল না 70 পেল তা দিয়ে মেধার বিচার করা যায় না। পড়াশোনার আমূল পরিবর্তন দরকার। MCQ দিয়ে নম্বর তোলা সহজ কিন্তু কোনও বিষয়ে খুঁটিয়ে জানা যায় না। ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হয়।’
অর্থাৎ ইতিহাস বা ভূগোলে 100-এ 100 পাওয়া বা বাংলা-ইংরেজিতে প্রায় ফুল মার্কস পাওয়ার পেছনে পড়ুয়াদের মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে রয়েছে বদলে যাওয়া পরীক্ষা এবং পড়াশোনার ধরন। এই ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বর নিয়ে ভিন্ন মত তো আছেই। তবে যাদের জীবনের এটা প্রথম বড় পরীক্ষা, তাদের কাছে এই ভাল নম্বর আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে এই পরীক্ষার ধরন পড়ুয়াদের ক্ষতি করছে কিনা, করলেও কতটা, তা বোঝা কেবল সময়ের অপেক্ষা।
বড় বড় কথা আর অজস্র কন্যাশ্রী সত্ত্বেও মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু, বারবার প্রমাণিত হচ্ছে এই বাংলায়
শ্রীলঙ্কার অশান্তি খারাপ শাসনের একটি পাঠ এবং একটি বিপজ্জনক নজির
আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি কেন তুলনামূলক ভাবে কম হয়? হলেও তা ওমান বা গুজরাটের দিকে বাঁক নেয় কেন?
অক্ষমতা নিয়েও যে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, দেশের মুখ উজ্জ্বল করা যায়, প্যারাঅলিম্পিক্স যেন তা স্মরণ করিয
চাঁদের কারণে আগামী দশকে পৃথিবী ভাসতে চলেছে।
এই গান বর্তমান পরিস্থিতিরই এক রেপ্লিকা