গান্ধী হত্যা মামলা
স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে এই সময়ের ইতিহাসটাকে যেভাবে দেখায়, ব্যাপারটা আদৌ অমন সরলরৈখিক ছিল না। বিজয়ীর লেখা ইতিহাস এমনই হয়। স্তালিনের আমলে লেখা সোভিয়েত বিপ্লবের ইতিহাস পড়লে মনে হবে, বলশেভিকরা গোড়া থেকেই বিপ্লবের সমস্ত সম্ভাব্য দিক বদলের বাঁক দেখতে পেয়ে, সচেতন শক্তি হিসেবে দ্বিধাহীন পদক্ষেপ নিয়ে জারতন্ত্রের অবসান এবং পরবর্তী বিপ্লব ঘটিয়েছে। চিনের মাও-জমানায় লেখা আফিম যুদ্ধ থেকে সাংস্কৃতিক বিপ্লব পর্যন্ত ইতিহাসের একমাত্রিক বিবরণ মনে করুন।
ভারতের ক্ষেত্রে তিরিশ এবং চল্লিশের দশক ছিল অনেকগুলো ক্রস কারেন্টের সমাহার। সেটা আদৌ মহাভারতের যুদ্ধের মতো একদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, অন্যদিকে গান্ধীজির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভারত, এমন ছিল না।
তখন অনেকগুলো প্রশ্ন উত্তরের অপেক্ষায় হাঁ করে দাঁড়িয়ে।
আরও পড়ুন: বীর সাভারকর ১: স্বাধীনতা সংগ্রামী, নাকি আপসকামী?
যেমন, ব্রিটিশ-উত্তর ভারতের চেহারা কেমন হবে? ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ধার্মিক সমূহের মধ্যে ব্যবস্থার বাঁটোয়ারা কেমন হবে? ব্রিটিশের তৈরি বিভিন্ন ধার্মিক সমুদয়ের জন্য আলাদা আলাদা ইলেক্টোরেটস এবং রিজার্ভ সিটের ভবিষ্যৎ কী হবে? ভোট দেওয়ার অধিকার কারা পাবে? ব্রিটিশ জমানায় শুধু করদাতা এবং জমির মালিকদের ভোটাধিকার ছিল। আর হিন্দু-মুসলিম আলাদা ইলেক্টোরেট হওয়ার ফলে মাইনরিটি মুসলমানের একটি ভোটের ওজন মেজরিটি হিন্দু ভোটের চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছিল।
সাভারকর, আম্বেদকর, দেশি লিবেরাল, জিন্না, গান্ধী, নেহরু সবাই এসব প্রশ্নে নিজের নিজের অবস্থান নিয়ে এনগেজ করছিলেন।
সাভারকর ব্যস্ত ইংরেজ তাড়াতে নয়, ভারতে লড়াকু হিন্দুসমাজ সংগঠিত করতে। গান্ধী এবং কংগ্রেসের সঙ্গে চাপানউতোর চলতে লাগল। নেতাজী সুভাষ জুন, 1940-এ সাভারকরের মুম্বাইয়ের বাড়িতে এসেছিলেন। সাভারকর এবং পরে তাঁর সহায়ক, বাল সাভারকর দাবি করেছেন যে, সুভাষচন্দ্রকে বাড়ি থেকে পালিয়ে জাপানে রাসবিহারী বোসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্রিটিশের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পরামর্শ নাকি উনিই দিয়েছিলেন।1
কিন্তু জার্মানি থেকে সুভাষচন্দ্র একটি বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন যে, মি: সাভারকর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে আদৌ ভাবেন না। ওঁর একটাই ভাবনা, কী করে হিন্দু ছেলেরা ব্রিটিশ আর্মিতে ঢুকে মিলিটারি ট্রেনিং নেবে!2
1947 সালের 15 অগাস্ট দেশ স্বাধীন হল বটে, কিন্তু ভারত পূর্ণ স্বরাজ পেল 1950 সালের 26 জানুয়ারি, যখন ভারত ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস ছেড়ে রিপাবলিক বা সাধারণতন্ত্র হল। নেহেরুর অনুরোধে মাউন্টব্যাটেন ওই অন্তর্বর্তী সময়ে ডোমিনিয়নের গভর্নর জেনারেল হয়ে রইলেন। দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক হিংসার উন্মাদনা দেখে মাউন্টব্যাটেন মেয়ে প্যাট্রিসিয়াকে সেপ্টেম্বর মাসে বললেন যে, বিশ্বযুদ্ধ বা ভাইসরয়গিরি এই দাঙ্গার তুলনায় ভাঁড়ামো ছাড়া কিছু নয়।3
আরও পড়ুন: বীর সাভারকর ২: কাপুরুষ? নাকি ইংরেজ যাকে ভয় পেত?
প্রায় দেড়কোটি মানুষ গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভিটেছাড়া হল। নিহত হল প্রায় দশ লক্ষ মানুষ।
দাঙ্গার সময় গান্ধীজির মুসলিম শরণার্থী এবং দাঙ্গাপীড়িতদের সাহায্যে হিন্দু যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বানে সাভারকর খেপে গেলেন। তাঁর হিন্দু মহাসভা এবং তাঁর দেওয়া ফান্ডিং নিয়ে নাথুরাম গডসের পত্রিকা, যার মাস্টহেডে সাভারকরের ছবি থাকত- গান্ধী এবং মুসলিম সমাজের প্রতি আগুন উগরে চলল।4
15 অগাস্টের ঠিক আগে সাভারকর গেরুয়া পতাকাকে স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রীয় ধ্বজ করার প্রস্তাব রাখলেন। সংবিধান সভার ফ্ল্যাগ কমিটি সেই প্রস্তাব খারিজ করল। তখন উনি পতাকার কেন্দ্রে গান্ধীজির চরকার বদলে সারনাথের অশোক চক্র করার প্রস্তাব রাখলেন। সেটা গৃহীত হল।5
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে 14 অগাস্ট, 1947-এ ক্যাশ রিজার্ভ ছিল 220 কোটি টাকা। ঠিক হল, দেশ স্বাধীন হলে ব্রিটিশের হাত থেকে আনুপাতিক হিসাবে পাকিস্তান পাবে 25%, মানে 55 কোটি টাকা। কিন্তু অক্টোবরে পাঠান আদিবাসীরা মহারাজা হরি সিংয়ের করদ রাজ্য কাশ্মীর আক্রমণ করল। নেহেরু-প্যাটেল টাকা দেওয়া স্থগিত রাখলেন। জানুয়ারি 1948, অর্থাৎ যতদিন মহারাজা ভারতে যোগদানের সন্ধিপত্রে দস্তখত না করলেন, টাকা আটকে রইল। শেষে নেহেরু-প্যাটেলের বিরুদ্ধে গান্ধীর অনশনে ক্যাবিনেট হার মানল; টাকা দিল পাকিস্তানকে। এটা নিয়ে দেশের জনমানসে টেনশন বাড়ল।6
এই প্রেক্ষিতে গান্ধীহত্যা মামলা দেখা যাক।
আরও পড়ুন: বীর সাভারকর ৩: সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ তত্ত্ব
গান্ধীর উপর হামলা হল দু'বার। প্রথমবার ব্যর্থ, দ্বিতীয়বার সফল। প্রথমবার 1948 সালের 20 জানুয়ারিতে বিড়লা হাউসে। দ্বিতীয়বার 30 জানুয়ারিতে।7
প্রথমবারের হামলাকারী মদনলাল পাহওয়া, এক পাঞ্জাবী উদ্বাস্তু কিশোর। ওর ছোঁড়া সুতলি বোম গান্ধীজির থেকে 75 ফুট দূরে ফাটল।
দ্বিতীয়বার হামলা হল 30 জানুয়ারি, 1948-এ। হামলাকারীরা হলেন তিন মারাঠি চিতপাবন ব্রাহ্মণ (সাভারকরও তাই)। এঁরা হলেন নাথুরাম গডসে, নারায়ণ আপ্তে এবং বিষ্ণু কারকারে। তিনজনেই হিন্দু মহাসভার অগ্রণী সদস্য। গুলি চালালেন নাথুরাম পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে।8
নাথুরাম 1930 সালে আরএসএস-এর সক্রিয় সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু 1937 সালে সাভারকর সবরকম প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হয়ে রাজনীতিতে নামতেই, নাথুরাম হিন্দু মহাসভায় যোগ দিলেন। 1938-এ হায়দরাবাদের নিজামের বিরুদ্ধে সাভারকরের সবিনয় প্রতিরোধ আন্দোলনে উনি প্রথম ব্যাচের সত্যাগ্রহী হয়ে এক বছর জেল খাটলেন। কারকারে 1943 সালে হিন্দু মহাসভার টিকিটে সিভিক কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।9
সাভারকরের থেকে 15,000 টাকা ধার নিয়ে নাথুরাম 1944 সালে শুরু করলেন 'অগ্রণী' পত্রিকার সম্পাদনা, বন্ধু আপ্তে হলেন ম্যানেজার। পত্রিকার মাস্টহেডে সাভারকরের ছবি। শুরুতেই পত্রিকায় গর্বের সঙ্গে লেখা হল, কীভাবে উনি পুণের কাছে হিল স্টেশন পঞ্চগণিতে জাতীয়তাবাদী ছেলেদের একটি দল নিয়ে গিয়ে গান্ধীজিকে হেনস্থা করেছিলেন। 1946 সালে প্রেস অ্যাক্ট ভঙ্গের দায়ে সরকার জরিমানা করায়, পত্রিকার নাম বদলে দিয়ে করা হল 'দৈনিক হিন্দু রাষ্ট্র'। সাভারকর পাবলিক অ্যাপিল করে বললেন, হিন্দুত্বে বিশ্বাসী সব পরিবার এক টাকা করে দান দিয়ে পত্রিকাটির পাশে দাঁড়াক।10
আরও পড়ুন: বীর সাভারকর ৪: হিন্দু-বিরোধী সাভারকর!
পুলিশ সাভারকরের বাড়ি সার্চ করে 143টি ফাইল এবং 10,000 চিঠি বাজেয়াপ্ত করে, যার মধ্যে কুড়িটি গডসের এবং এক ডজন আপ্তের লেখা। এই গুলোতে গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রের কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। কিন্তু প্রমাণ আছে যে, এঁরা খুব ঘনিষ্ঠ। গডসে এবং আপ্তে পরিচালিত ‘দৈনিক হিন্দু রাষ্ট্র’ পত্রিকাটি সাভারকরের পয়সায় চলে, তার মাস্টহেডে সাভারকরের ছবি। কারণ, এই পত্রিকাটি সাভারকরের আদর্শে চলে এবং সাভারকরের মতোই গান্ধীর প্রতি প্রগাঢ় ঘৃণা এদের লেখার ছত্রে ছত্রে ফুটে বেরোয়।
মামলায় সাভারকরকে করা হল গান্ধীহত্যা চক্রান্তের মুখ্য মস্তিষ্ক। তবে গডসে, আপ্তে এবং কারকারে এতে সাভারকরের হাত অস্বীকার করলেন।
কিন্তু জনৈক অস্ত্র ব্যবসায়ী বাড়গে রাজসাক্ষী হয়ে বললেন, ঘটনার ক'দিন আগে 14 এবং 17 জানুয়ারি উনি গডসে এবং আপ্তের সঙ্গে সাভারকরের শিবাজী পার্কের বাড়িতে গিয়েছিলেন। উনি নীচে ছিলেন, ওরা উপরে গিয়ে সাভারকরের সঙ্গে বৈঠক করে একটু পরে একটা থলি নিয়ে নেমে আসে। 11
একজন নামকরা অভিনেত্রী বিম্বা (যিনি নিজের গাড়ি করে ওদের স্টেশন থেকে সাভারকরের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়েছিলেন) এবং সাভারকরের বডিগার্ড ও সেক্রেটারি এর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। কিন্তু আলোচনার সময় কী কথা হয়েছিল, তার কোন প্রত্যক্ষদর্শী নেই।12
সাভারকরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরোটাই সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স বেসড। যেমন তিন আসামীর সঙ্গে সাভারকরের ঘনিষ্ঠতা, কাজকর্ম এবং তিনজনেরই গান্ধীজির বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং বিশ্বাস যে, গান্ধীজির জিন্না তুষ্টিকরণ নীতির ফলে দেশভাগ হয়েছে। কিন্তু 4 মার্চ, 1948-এ মুম্বাই পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে সাভারকরের সেক্রেটারি দামলে এবং বডিগার্ড আপ্পা কাসর জানায় যে, গডসে এবং আপ্তে জানুয়ারির মাঝামাঝি, সম্ভবত 15 বা 17 জানুয়ারি, রাতে সাভারকরের বাড়ি এসে, রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ সাভারকরের সঙ্গে কথা বলেছিল। ফের 23 অথবা 24 তারিখ এসে সকালবেলায় সাভারকরের সঙ্গে আধঘণ্টা কথা বলেছিল।
আরও পড়ুন: বীর সাভারকর ৫: দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রশ্নে জিন্নার হাতে খেলেছিলেন সাভারকর
ষাটের দশকের শেষের দিকে কাপূর কমিশন নতুন করে গান্ধীহত্যার তদন্ত করতে গিয়ে খেয়াল করে, যারাই পরে গান্ধীহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই কোনও না কোনও সময়ে সাভারকর সদনে মিলিত হয়েছে এবং সাভারকরের সাথে দীর্ঘ আলোচনায় শরিক হয়েছে। মুখ্য অভিযুক্তরা হামলার অল্প আগে সাভারকরের সঙ্গে দেখা করেছে। নিঃসন্দেহে গান্ধীজিকে নিয়ে সাভারকরের তিক্ত সমালোচনা আততায়ীদের হৃদয়ে মহাত্মার প্রতি তীব্র ঘৃণা জাগিয়েছিল।13
লক্ষণীয় যে, প্রথম হামলাকারী মদনলাল পাহওয়া ওই তিনজনের চ্যালা ছিল। প্রথম হামলার দিন (20 জানুয়ারি) গডসে, আপ্তে, বাড়গে এবং পাহওয়া একসঙ্গে দিল্লিতে ছিল এবং একসঙ্গে ট্রেনে মুম্বাই হয়ে পুণে ফিরে এসেছিল।14
সাভারকরের মৃত্যুর পর মনোহর মালগাঁওকর, যিনি 'মেন হু কিল্ড গান্ধী' বইটি লিখেছেন, কারকারে, পাহওয়া এবং গোপাল গডসেকে প্রশ্ন করেন। ওরা সবাই গান্ধী হত্যার পেছনে সাভারকরের ভূমিকার কথা অস্বীকার করে।
নাথুরামকে গান্ধীহত্যার জন্য 9 এমএম ব্যারেটা পিস্তল দিয়েছিল গোয়ালিয়রের হিন্দু মহাসভার সেক্রেটারি সদাশিব পরচুরে।15
বিচারের রায় বেরোল। জাস্টিস আত্মারাম আটজন অভিযুক্তের মধ্যে শুধু সাভারকরকে প্রমাণাভাবে মুক্তি দিলেন। কারণ, রাজসাক্ষীর বয়ানের কোনও স্বতন্ত্র সাক্ষী বা দলিল পাওয়া যায়নি। নাথুরাম এবং নারায়ণ আপ্তের ফাঁসি, বাকি পাঁচজনের যাবজ্জীবন (তখন এর মানে 14 বছর)। সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করল না। হাইকোর্টের রায়ে পরচুরে এবং বাড়গের ড্রাইভার কিস্টায়া ছাড়া পেল, কিন্তু বাকিদের শাস্তি বহাল রইল।
তখন শ্যামাপ্রসাদ ছিলেন হিন্দু মহাসভার সেক্রেটারি। নেহেরু বললেন, গান্ধীহত্যার পর তাঁর মন্ত্রিসভায় হিন্দু মহাসভার নেতা মন্ত্রী হবেন, এটা উচিত নয়। শ্যামাপ্রসাদ মহাসভার সদস্যপদ ছাড়লেন।16
কিন্তু উনি প্যাটেলকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন যে, সাভারকরের বিচার যেন নিরপেক্ষভাবে হয়। প্যাটেল আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে উনি শ্যামাপ্রসাদকে লিখেছিলেন যে, আইনের নিক্তিতে সাভারকর ছাড়া পেলেও এই হত্যাকান্ডের নৈতিক দায় থেকে উনি মুক্ত হতে পারেন না।17
নেহেরু হোম মিনিস্টার বল্লভভাই প্যাটেলকে চিঠি লিখে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন যে, গান্ধীহত্যার পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রটি’ খুঁজে বের করার চেষ্টায় নিষ্ঠার অভাব দেখা যাচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যে আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করেছে। প্যাটেল নেহেরুকে উত্তরে জানিয়েছিলেন যে, অপরাধীরা দোষ স্বীকার করে বিস্তৃত বয়ান দিয়েছে। এর পিছনে আছে সাভারকরের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হিন্দু মহাসভা বলে এক উগ্র সংস্থা। প্যাটেল নেহেরুর আরএসএস নিয়ে আশঙ্কার উত্তরে জানিয়েছিলেন যে, আরএসএস-কে অন্য অনেক দোষে দায়ী করা যায়, কিন্তু গান্ধী হত্যার জন্য নয়।18
সাভারকর এক বছর জেল খেটে ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে বেরিয়ে এলেন। কিন্তু বিতর্ক পিছু ছাড়ল না। ষাটের দশকে তিলকের নাতি, জিভি কেতকর পুণের এক সভায় বললেন যে, উনি গান্ধী হত্যার ব্যাপারে ঘটনার অনেক আগেই জানতেন। 1966 সালে সরকার এই নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত জজ জীবনলাল কাপুরকে দিয়ে জুডিশিয়াল কমিশন বসাল। কাপুর কমিশনের রিপোর্ট (1969) বলল যে, সমস্ত তথ্যপ্রমাণ একসঙ্গে মিলিয়ে দেখলে, সাভারকর এবং তার গ্রুপ মিলে গান্ধীকে ‘প্রো-মুসলিম এবং অ্যান্টি মুসলিম’ ধরে নিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র রচেছিলেন বলেই কমিশন নিঃসন্দেহ।19
2014 সালে মোদীজি ক্ষমতায় এলে মিডিয়ায় কাপূর কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে প্রচুর লেখালেখি শুরু হল।
এক সাভারকর-ভক্ত কাপূর কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গেল। সর্বোচ্চ আদালত মে, 2018-এ তার রায়ে বলল যে, কমিশনের রিপোর্ট 'জেনারেল অবসার্ভেশন' মাত্র; তা কোনওভাবেই ক্রিমিনাল কোর্টের রায়, অর্থাৎ সাভারকরের ভূমিকা অপ্রমাণিত, এটা উল্টে দিতে পারে না।20
সব মিলিয়ে প্যাটেলের কথাটাই মাথায় আসে; গান্ধীহত্যার নৈতিক দায় থেকে সাভারকরকে রেহাই দেওয়া কঠিন।21
তথ্যসূত্র:
------------------------------------------
1 কেসি দাসকে লেখা বাল সাভারকরের চিঠি যা ওহসাওয়া সম্পাদিত “টু গ্রেট ইন্ডিয়ান্স ইন জাপান”, খন্ড-১, পৃ: 94-95 য়ে উদ্ধৃত
2 বোস; “দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল”, পৃ: 34
3 বৈভব পুরন্দরে, “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃ: 299
4 মনোহর মালগাঁওকর , “মেন হু কিল্ড গান্ধী”, পৃঃ ৭৮-৭৯।
5 সাভারকর; “ঐতিহাসিক নিবেদনয়ে”,পৃ: 164-165
6 জুডিথ ব্রাউন, “ নেহেরু, এ পলিটিক্যাল লাইফ”, পৃ: 177-180
7 রবার্ট পেইন, “লাইফ এন্ড ডেথ অফ মহাত্মা গান্ধী”, পৃ: 570-571
8 “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃ: 302
9 ঐ; পৃঃ ৩০২-৩০৩।
10 “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃ: 304
11 “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃ: 307
12 মনোহর মালগাঁওকর , “মেন হু কিল্ড গান্ধী”, পৃ: 125-26।
13 “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃ: 312
14 রবার্ট পেইন, “লাইফ এন্ড ডেথ অফ মহাত্মা গান্ধী”, পৃ: 628-630
15 “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃ: 320
16 নেহেরু; “সিলেক্টেড ওয়ার্কস”, নিউ সিরিজ, খন্ড-৫, পৃ: 46-47
17 প্যাটেল, “করেসপন্ডেন্স”, পৃ: 65
18 প্যাটেল, “করেসপন্ডেন্স”, পৃ: 55-56। এতে নেহেরুর চিঠি এবং প্যাটেলের জবাব দুটোই আছে
19 কাপুর কমিশন রিপোর্ট, ভল্যুম 2, পার্ট ডি, পৃ: 301, 331-334
20 প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া; “Plea made to PM to protect under law Savarkar’s name from being misused’, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, 28 মে, 2018
21 প্যাটেল, “করেসপন্ডেন্স”, পৃ: 65
শিল্পপতিদের ব্যাঙ্ক খুলতে অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এর ফলে ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টর মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত
কৃষি বিল নিয়ে সরকারি আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না কৃষকরা।
অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জমি কেনা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত কি আদৌ হবে?
নিজেকে চিনতে পেরেছি, আমি কাল্লু। কিসসা শোনা যার নেশা
দাঙ্গার সময় গান্ধীজির মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্যে হিন্দু যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বানে খেপেন সাভারকর।
মনু যাদের পূজ্য তাদের পক্ষে জন্মভিত্তিক জাতিভেদের উপরে ওঠা অসম্ভব।