গত 20 নভেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘ইন্টার্নাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’ প্রস্তাব পেশ করেছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাউসগুলোকে তাদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক খুলতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে অনুমতি দেওয়া হোক।
এতে অবাক হওয়ার কী আছে? ওরা, মানে আদানি-আম্বানি-টাটা-বিড়লা-সিংঘানিয়ারা ব্যাঙ্ক খুলবে না তো কি আপনি আমি খুলব? ব্যাঙ্ক খুলতে পুঁজি লাগে মশাই, আছে? এর আগে কি ভারতে দেশি বা বিদেশি বেসরকারি ব্যাঙ্ক লাইসেন্স পায়নি? এইচডিএফসি, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই? বা হংকং সাংহাই ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন, আমেরিকান সিটি ব্যাঙ্ক? বা ঘরের কাছে চন্দ্রশেখর ঘোষ মশাইয়ের ‘বন্ধন ব্যাঙ্ক’?
একটু ভুল হল। এরা সবাই ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, মানে পুঁজি বা টাকাপয়সার লেনদেনের কারবার করে, কিন্তু এদের মালিকানা বা পরিচালনার দায়িত্ব শিল্পপতিদের নয়।
শিল্প সংস্থার ব্যাঙ্ক খোলার খবরটা দেখে যাঁরা খড়্গহস্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই পুঁজিবাদী অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত। কেউ কিন্তু সমাজবাদী বা বাম ঘরানার নন। যেমন, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং ধার্য করার নামী সংস্থা S & P Global Ratings, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য, প্রাক্তন অর্থসচিব বিজয় কেলকর, এবং নরেন্দ্র মোদী সরকারের দুই প্রাক্তন মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মনিয়ান ও শংকর আচার্য। এঁরা সকলেই একসুরে বলছেন, ‘এটা খুব বড় ভুল হবে। এর ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিকাশ ধাক্কা খাবে।'
রঘুরাম রাজন এবং বিরল আচার্য বলছেন আপত্তির মূল কারণ দু’টি। ‘কানেক্টেড লেন্ডিং’ ও ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’। একই কথা বলছেন অরবিন্দ সুব্রহ্মনিয়ান, শংকর আচার্য ও বিজয় কেলকর। তাঁরা বলছেন, ওই রিপোর্টেই স্পষ্ট যে, রিপোর্ট পেশ করার আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই ইন্টার্নাল ওয়ার্কিং কমিটি কিছু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত অগ্রাহ্য করা হয়েছে। কারণ একজন বাদে বিশেষজ্ঞরা সবাই সমস্বরে বলেছেন – বাঘাবাঘা কর্পোরেট বা শিল্পপতিদের ব্যাঙ্ক খুলতে অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এর ফলে ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টর মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার মানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কমিটি বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতাদের সাবধানবাণী অগ্রাহ্য করেই এই দাওয়াইটি বাতলেছে! এতেই টনক নড়েছে রঘুরাম রাজনদের এবং ওঁরা মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুন: শিল্পপতিদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক 2: প্রস্তাবের আগেই কেচ্ছার শেষ নেই
‘কানেক্টেড লেন্ডিং’ এবং ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ কী?
‘কানেক্টেড লেন্ডিং’ হল যখন শিল্পপতিরা নিজেদের নানা কোম্পানি খুলে বা এজেন্টদের নামে কোম্পানি খুলে নিজেদের ব্যাঙ্ক থেকে লোন দেয় এবং বকলমে নিজের আখের গুছিয়ে নেয়। এটা সাদা চোখে ধরা খুব কঠিন। কে যে কাকে কোন কাজের জন্যে লোন দিচ্ছে আর টাকাটা কার কার হাত ঘুরে বাস্তবে কোথায় কীভাবে খরচ হচ্ছে এবং কার পকেটে যাচ্ছে তা শুধুমাত্র লোনের কাগজ আর ব্যাঙ্কের লেজার দেখে বোঝা কঠিন। আসলে এ ভাবে তারা আমজনতার থেকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে নামমাত্র সুদে জোগাড় করে নেওয়া ডিপোজিট, পুঁজি হিসেবে নিজেদের কাজে লাগায়। না হলে ওদের বাজার থেকে চড়া সুদে ধার করতে হবে বা বাজারে শেয়ার ছেড়ে পুঁজি জোগাড় করতে হবে। এবং লাভ হলে শেয়ারের মালিকদের তার থেকে লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড দিতে হবে।
কোনও ব্যাঙ্ক যখন এই কাজটি করে তখন তারা আগে নিজের স্বার্থ দেখে। ঝুঁকি বেশি হলে হয় প্রস্তাবটি খারিজ করে দেয় অথবা আংশিক লোন দেয় এবং চড়া হারে সুদ নেয়। অনেক বেশি কোল্যাটারাল বা সম্পত্তি বন্ধক রাখে ও সম্পন্ন ব্যক্তিদের জামিন নিতে বলে। কিন্তু শিল্পপতির নিজের ব্যাঙ্ক হলে তো ‘আপন হাত, জগন্নাথ’।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ টি. টি. রামমোহন তাঁর ব্লগে এবং হিন্দু পত্রিকায় লিখেছেন, ‘শিল্পপতিরা যখন নিজেদের উদ্বৃত্ত নগদ ব্যাঙ্কে কিছু সময়ের জন্যে জমা রাখেন, তখন তাদের দরাদরি করে নির্ধারিত সুদে সেটা রাখতে হয়। কিন্তু ব্যাঙ্ক যদি নিজের হয়, তাহলে তারা সেটা বাজার দরের থেকে উঁচু হারে রাখতে পারেন। সেটা হলে ব্যাঙ্কের ক্ষতি করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাউসটি নিজেদের লাভ বাড়িয়ে নেবে।‘ মোদ্দা কথা, শিল্পপতি সহজেই তাঁর নিজস্ব ব্যাঙ্ককে নিজের বিত্ত জোগাড়ের ভাণ্ডারে বদলে দিতে পারেন। তাতে সাধারণ লোকের টাকা ফাটকায় লাগবে।
শেয়ার তারাই কেনে যাদের উদ্বৃত্ত পয়সা আছে। তারা বাজারের ওঠাপড়া জেনেই ঝুঁকি নেয়। কিন্তু ব্যাঙ্কে কম সুদে টাকা জমা রাখে ছাপোষা লোকজন। এখন সরকারি ব্যাঙ্কেও সরকার বিমা করে সুরক্ষা দিচ্ছে মাত্র 5 লক্ষ টাকার। অর্থাৎ আপনি একটি ব্যাঙ্কে একটা বা দশটা অ্যাকাউন্ট রাখুন, ব্যাঙ্ক ডুবলে পাবেন ওই পাঁচ লাখ। তবু এর পেছনে সরকার আছে, পরে বাকি টাকা ফেরত দিতে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রয়েছে সরকারের বিশ্বস্ততা, ভাবমূর্তি ও সম্মানের প্রশ্ন।
কিন্তু শিল্পপতিদের অমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তাই ওদের ব্যাঙ্ক ডুবলে ওই 5 লাখ পেলেই সন্তুষ্ট হতে হবে। কিছুদিন আগে পিএমকে ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্কের ঘটনা এখনও স্মৃতিতে টাটকা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে বেশ কিছুদিন সাধারণ গ্রাহকের দশ হাজারের বেশি টাকা তোলা বারণ ছিল। পরে মাসে 25,000 এবং 50,000 হয়। নিজের টাকা তুলতে না পেরে বহু মানুষের সর্বনাশ হয়েছে। আত্মহত্যা করেছেন অনেকে।
ফেলো কড়ি মাখো তেল
অক্সফোর্ড ডিকশনারির মতে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ হল an economic system characterised by close mutually advantageous relationships between business leaders and government officials. অর্থাৎ, এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কর্পোরেট গোষ্ঠী ও সরকারি আমলাদের মধ্যে ‘তুমি আমায় দেখো, আমি তোমায় দেখি’ গোছের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিশ্বব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য উপদেষ্টা কৌশিক বসু বলছেন, ‘সমস্ত সফল অর্থনীতিতে একটা স্পষ্ট লক্ষ্মণরেখা টানা থাকে। তার একদিকে শিল্পপতি এবং কর্পোরেট গোষ্ঠী, অন্যদিকে ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য টাকা ধার দেওয়ার সংস্থাগুলি। দু’টোকে মিশিয়ে দেওয়া বা ওই লক্ষ্মণরেখাটি মুছে দেওয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। এতে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম পোক্ত হবে।‘ কৌশিক বসুর মতে ওই ব্যবস্থায় পুঁজিবাদের সুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে আর্থিক বৃদ্ধির বদলে হাতে গোনা কিছু পুঁজিপতি সমস্ত ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষমতা বাড়িয়ে ছোটদের বের করে দেবে।
গোদা বাংলায় বললে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’-এর জমানায় দেশের অর্থনীতির বিকাশ হোক বা না হোক, আম নাগরিকের রোজগার, জীবনযাত্রার মান না বাড়ুক, কিছু শিল্পপতি ও কর্পোরেট হাউসের মুনাফা ও সম্পত্তির মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। এরা ক্রমশ সরকারি আমলাতন্ত্রের সঙ্গে যোগসাজশে এমন সব আইন বা নির্দেশ জারি করায় যে, বাজার থেকে অন্য শিল্প সংস্থা হটতে বাধ্য হয় এবং এরা একের পর এক শিল্প ও ব্যবসায় নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে।
কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওয়ার্কিং গ্রুপও এই ঝুঁকির কথা জানে। ওই রিপোর্টে তারা নিজেরাই বলছেন যে, এতে ‘কানেক্টেড লেন্ডিং’ ও আর্থিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের ভয় আছে। তারপরই ভয়কে উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, লাইসেন্স দেওয়ার আগে এগুলো আটকানোর জন্য ঠিকমতো আইন পাশ করলেই হবে। এখানেই আপত্তি তুলেছেন রাজন, সুব্রহ্মনিয়ান এবং কৌশিক বসুরা। তাঁরা উদাহরণ দিয়ে বলছেন, এগুলো আইন করে আটকানো যায় না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও কন্ট্রোলার আর্থিক দুর্নীতি টের পায় অনেক পরে। ততদিনে ‘চিড়িয়া চুগ গই ক্ষেত’! মানে পাখি খুঁটে খেয়ে খেত সাফ করে উড়ে চলে গেছে। নীরব মোদীদের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ঘটনা, বিজয় মালিয়ার পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি বা পদ্মভূষণ চন্দা কোচারের আইসিআইসিআই অথবা ইয়েস ব্যাঙ্কের কেলেঙ্কারি তার জলজ্যান্ত নমুনা।
শিল্পপতি ও ব্যাঙ্ক: ভারতের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা
রঘুরাম রাজন সেই 2008 সালেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর থাকাকালীন শিল্পপতিদের ব্যাঙ্কের লাইসেন্স দেওয়ার বিরোধিতা করে বলেছিলেন, ভারতের ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামো এখনও শিল্পপতিদের ব্যাঙ্কের লাইসেন্স দেওয়ার উপযুক্ত নয়। এ ধরণের নিয়ন্ত্রণ আমেরিকাতেও রয়েছে। 2014 সালেও রঘুরাম তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেননি।
প্রথমেই একটা কথা স্পষ্ট করে বলা দরকার। প্রাইভেট ব্যাঙ্ক, মানে পুঁজিপতির ব্যাঙ্ক, আর শিল্পপতিদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক – দু’টো এক জিনিস নয়। প্রাইভেট ব্যাঙ্ক— যেমন, চন্দ্রশেখরবাবুর ‘বন্ধন’ বা হসমুখভাই পারেখের এইচডিএফসি- শুধু ব্যাঙ্কিং করে। মানে এঁদের কারবার ফিনান্স ক্যাপিটাল নিয়ে, এরা কোনও শিল্পের মালিক নয়। এদের কাছে টাটা-বিড়লা বা আপনি-আমি চাইলেই লোন পাব না। ওরা আগে পরীক্ষা করে দেখবে লোনের প্রস্তাবটিতে ‘রিস্ক’ কতখানি? কারণ, ওরা কম সুদে আপনার আমার জমা পয়সা নিয়ে সেই পয়সার এক অংশ বেশি সুদে শিল্প-ব্যবসা-নাগরিককে ঋণ দেয়। তাতে আমাদের পয়সা চাইলেই ফেরত পাওয়া যায় এবং লাভ জুড়ে ব্যাঙ্কের পুঁজি বাড়ে। মানে এরা বড় শিল্পপতিকেও অনেক সময় ফিরিয়ে দেয়।
কিন্তু ব্যাঙ্কটি যদি শিল্পপতিদের নিজের হয়? তা হলে যখন দরকার, ওরা নিজেদের যে কাজটির জন্য কোনও খানদানি ব্যাঙ্ক লোন দেবে না, তাতে গ্রাহকের পুঁজি লগ্নি করে দেবে।
হাতে গরম উদাহরণ
2014 সালে আদানি গ্রুপ অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে কয়লাখনির জন্যে স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে 100 কোটি ডলার লোন স্বীকৃতির মউ সই করে। কিন্তু বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তোলে যে এই আদানি গ্রুপকে ওই একই প্রস্তাবে পাঁচটা নামকরা বিদেশি ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে অস্বীকার করেছে। তারা হল সিটি ব্যাঙ্ক, ডয়েশ ব্যাঙ্ক, রয়্যাল ব্যাঙ্ক অফ স্কটল্যান্ড, হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন এবং বার্কলে। তাহলে ওই ঝুঁকির প্রস্তাবে স্টেট ব্যাঙ্ক কেন পয়সা ঢালবে? তার জেরে প্রস্তাব নিয়ে ব্যাঙ্ক আর এগোয়নি। 6 বছর পর মোদী সরকার বিপুল ভোটে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসীন। স্টেট ব্যাঙ্ক ওই একই প্রকল্পে এখন 5000 কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে শোনা যাচ্ছে।
কিন্তু, সিডনিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচের ছ’ ওভার খেলা হওয়ার পর দু’জন বিক্ষোভকারী প্ল্যাকার্ড নিয়ে মাঠে ঢোকে, যাতে লেখা ছিল ‘NO $ 1B ADANI LOAN’। বাইরেও কিছু বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী স্টেট ব্যাঙ্কের নাম এবং ওই লোনের বিরোধিতাসূচক প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিকিউরিটিজ ঘোষণা করেছে যে, ওরা আদানির কুইন্সল্যান্ডে কারমাইকেল কয়লাখনি প্রোজেক্টে পয়সা ঢালবে না।
ফ্রান্সের ডাকসাইটে আমুন্ডি ফান্ড, যারা পরিবেশ রক্ষার প্রোজেক্টে বন্ডলকেনে, স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে ‘গ্রিনবন্ড’ কিনেছিল। ওরা এবার স্টেট ব্যাঙ্ককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ব্যাঙ্ক আদানিকে এই প্রজেক্টে ঋণ দেওয়া বন্ধ না করলে ওরা স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে কেনা বন্ড আবার ব্যাঙ্ককে ফেরত দিয়ে পয়সা ফেরত নেবে। কারণ ওদের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই কারমাইকেল খনিতে লিজ অনুযায়ী 60 বছর ধরে কয়লা খনন করলে বাতাসে 200 মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড ছড়াবে। পরিবেশ বিরোধী এই প্রোজেক্টে লোন দেওয়া এবং পরিবেশ রক্ষার গ্রিনবন্ড বিক্রি করা অনৈতিক, তাই দু’টো একসঙ্গে চলতে পারে না। এবং এর পর আরও কিছু ব্যাঙ্ক ও বিমা কোম্পানিও হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী লয়েড কোম্পানির ইন্স্যুরার অ্যাপোলো তার অন্যতম।
এবার ভাবুন, যদি আদানি হাউসের একটা নিজস্ব ব্যাঙ্ক থাকত? তাহলে কবে ব্যাঙ্কের লোন ইত্যাদি হয়ে অস্ট্রেলিয়ার কয়লা খনিতে কাজ শুরু হয়ে যেত। আম জনতা টেরটি পেত না।
ভাবছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। তাহলে দ্বিতীয় গল্পটি শুনুন।
চন্দা কোচার 1984 সালে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে যোগ দেন এবং কর্মদক্ষতার জোরে 2009 সালে ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা সিইও-র দায়িত্ব পান। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কমিটি এবং ব্যাঙ্কিং সম্মেলনে চন্দার খ্যাতি বাড়ে। 2011 সালে সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ দিয়ে সম্মানিত করে।
কিন্তু ব্যাঙ্কের একজন হুইসল ব্লোয়ারের কাছ থেকে পাওয়া কিছু গোপন নথিপত্রের ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস 2018 সালের 29 মার্চ খবর ছাপে যে, চন্দা কোচার ভিডিওকনের কর্ণধার বেণুগোপাল ধুতকে 2012 সালে যে 3250 কোটি টাকার লোন দিয়েছেন, তা আসলে ঘুরিয়ে তাঁর স্বামী দীপক কোচারের নু-পাওয়ার রিনিউয়েবলস প্রাইভেট লিমিটেডকে দেওয়ার জন্যে। এবং ওই লোন কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ খাতায় (এনপিএ) ক্ল্যাসিফাই হয়েছে। ব্যাঙ্কের ম্যানেজমেন্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকারের প্রতিনিধি রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ পেয়ে বোর্ডের নিযুক্ত কমিটি তদন্ত করে বলল— সব ঠিক আছে। চন্দা অন্যায় কিছু করেননি।
কিন্তু হুইসল ব্লোয়ারের এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে আরও দস্তাবেজ বেরোল, ইডি এবং সিবিআই তদন্তে নামতে বাধ্য হল। চন্দা কোচার পদত্যাগ করলেন। এফআইআর-এ সিবিআই কোচার দম্পতি, ধুত এবং দু’টো কোম্পানির নাম দিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে দীপক কোচার গ্রেফতার হলেন।
এমন উদাহরণ আরও অনেক আছে। সে কথায় আসছি পরের পর্বে।
(ক্রমশ)
সাভারকর কি “কুইট ইন্ডিয়া” আন্দোলনের বিরোধিতা করে ব্রিটিশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন?
সরকারের ভাঁড়ে মা-ভবানী। পিপিপি বা পাবলিক-পেরাইভেট করলে এঁদের ট্রাস্ট থেকে নিশ্চয়ই পয়সা আসবে।
আয়ুষ মন্ত্রক তাদের তিনটি ওষুধের প্যাকেজ দিব্য করোনিল, দিব্য শ্বাসারি বটি এবং দিব্য অনুতৈল-কে ‘প্রত
ঘরে একুশদিনের স্বেচ্ছাবন্দী হয়ে রোজ রোজ ওই এক বা দু’টি চেহারা দেখে খিটখিটে হয়ে পড়েছেন?
করোনা মোকাবিলায় টাকা আসবে কোথা থেকে?
সেলুলার জেলের নাম পালটে তাঁর নামে রাখা হল। এ বার দাবি তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হোক।