চান্দাচোর। মানে চাঁদা চুরি করেছে যে। কীসের চাঁদা? অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের চাঁদা। কীভাবে চুরি? জমি কেনাবেচায় হেরাফেরি করে। কত টাকা? বহু কোটি, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলে অঙ্কটা নির্দিষ্ট জানা যাবে। কে চুরি করেছে? অভিযোগের আঙুল উঠল অযোধ্যার রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের জেনারেল সেক্রেটারি চম্পত রায়ের দিকে। তিনি আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্টও বটে। তাঁর সম্পর্কে আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং ব্যবহার করলেন ‘চান্দাচোর’ অপশব্দটি।
জুন মাসের মাঝামাঝি সেই প্রেস কনফারেন্স নিয়ে তোলপাড় দিল্লি। সঞ্জয় সিং এবং উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পবন পাণ্ডে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কিছু জমির রেজিস্ট্রির কাগজ ও অন্য নথিপত্র দেখিয়ে অভিযোগ করলেন, রামমন্দির নির্মাণের জন্য দেওয়া জনতার চাঁদার পয়সা নিয়ে নয়ছয় করছে। জমি মাফিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে 2 কোটির জমি 18 কোটিতে কেনা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, যে জমিটি 18 মার্চ, 2021 তারিখের সন্ধ্যে 7.10 মিনিটে 2 কোটিতে রেজিস্ট্রি হল, সেই জমিই ঠিক পাঁচ মিনিট পরে 18 কোটিতে বিক্রি হয় কী করে? যে মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে, যার নির্মাণের জন্য লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষ অকাতরে দান করছেন, তার পিছনে এত বড় দুর্নীতি? [1]
ট্রাস্টের প্রাথমিক জবাব:
15 জুন এক প্রেস বিবৃতিতে চম্পত রায় দাবি করলেন, ‘এ সবই রামমন্দির নির্মাণে বাগড়া দেওয়ার ষড়যন্ত্র। আমাদের লেনদেন স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত। জমির মালিককে 17.50 কোটি টাকা আগাম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনলাইন ট্রান্সফার করা হয়েছে। কাজেই কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। আর গত 9/11/2019 তারিখে সুপ্রিম কোর্টের রায় রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে যাওয়ার পর থেকে এখানে জমির দাম খুব বেড়ে গেছে। আমরা বাজার দরের থেকে অনেক সস্তায় কিনেছি। পাঁচ মিনিটের তফাতে আলাদা দামে রেজিস্ট্রি হয়েছে, তাতে কী হল? আসলে এই জমির বিক্রির এগ্রিমেন্ট হরিশ পাঠক ও কুসুম পাঠক 2019 সালে 2 কোটি টাকায় করেছিলেন। তাই 18 মার্চে জমির দালাল সেলিম আনসারি ও রবিমোহন তিওয়ারিকে 2 কোটিতে বিক্রি করতে বাধ্য হন। তখন আমরা পাঁচ মিনিট পরে বাজার দরের থেকে কম টাকায় 18.5 কোটিতে কিনে নিই। আমরা সব কাগজপত্র দেখে জমিটির বর্তমান মালিককে খতিয়ে দেখে নিয়ে তবে রেজিস্ট্রি করেছি।’
সরকারি নথি অনুসারে ওখানে ওই জমির দাম সরকারি রেট অনুযায়ী (রেভিনিউ অফিসের কাগজ অনুযায়ী) 5.80 কোটির বেশি নয়। চম্পত রায়ের পাল্টা বক্তব্য, আশপাশের জমির বাজার দর অনেক বেশি। আর মন্দির থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে জমি কেনার উদ্দেশ্য হিসেবে উনি বলেন যে ট্রাস্ট ওখানে ভক্তদের জন্যে নিবাসস্থান বা ধর্মশালা বানাবে।
এর পর বিভিন্ন চ্যানেলে উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হল, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সব কাগজপত্র পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হয়েছেন। এর মধ্যে কোনও সন্দেহজনক কিছু নেই, আর কী চাই? হুমকি দেওয়া হল, ট্রাস্ট সঞ্জয় সিংয়ের বিরুদ্ধে ট্রাস্ট 1000 কোটি টাকার মানহানির মামলা করবে। [2]
শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল!
16 জুন নাগাদ সঞ্জয় সিং আর একটি নথি এনে দেখালেন, ঠিক ওই পাশের জমিটি ট্রাস্টের তরফে চম্পত রায় সেই দিনই, মানে 18 মার্চ বিকেলে কিনেছেন 8 কোটি টাকায়। তা হলে চম্পত রায় মিথ্যে কথা বলছেন, পাশের জমিটি তিনি সেদিনই এর অর্ধেকেরও কম দামে কিনেছেন। এবং দুটো দস্তাবেজেই সাক্ষীর জায়গায় সই করেছেন অযোধ্যার বিজেপি মেয়র হৃষীকেশ উপাধ্যায় ও ট্রাস্টের মেম্বার ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনিল মিশ্র। তার মানে ট্রাস্ট ভালো করেই ওখানে জমির বাজার দাম সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল। এর তদন্ত হওয়া উচিত। [3]
ট্রাস্টের থেকে আর কোনও পাল্টা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই শেষ নয়। নিউজ লন্ড্রি চ্যানেলের সাংবাদিকরা নথিপত্র পেশ করে দেখিয়ে দেন, মন্দিরের লাগোয়া সরকারের খাস জমির একটি টুকরো অযোধ্যার মেয়র হৃষিকেশ উপাধ্যায়ের ভাগ্নে দীপনারায়ণ উপাধ্যায় গত ফেব্রুয়ারিতে 20 লাখ টাকায় কিনে 11 মে তারিখে আড়াই কোটি টাকায় ট্রাস্টকে বিক্রি করেছেন। এই জমিটি ‘নজুল’, মানে সরকারের খাস জমি, যা কেনা বা বিক্রি করা যায় না।
গোড়া থেকে ট্রাস্ট ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংয়ের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করবে বলে হুমকি দিলেও, পরপর তিনটে জমির সন্দেহজনক কেনাবেচার দলিল আসার পর ট্রাস্ট, বিজেপি বা উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার কেউই আর এ নিয়ে প্রকাশ্য বিবৃতি দেয়নি। চম্পত রায়ের ফোন সুইচড অফ।
26 জুন ফের সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সঞ্জয় সিং বলেন, তিনি নিজে কাগজপত্রের প্রমাণ-সহ প্রধানমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশ সরকার এবং আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতকে চিঠি লিখে সিবিআই ও ইডির তদন্ত দাবি করেছেন। কিন্তু তিনদিন অপেক্ষা করেও উত্তর না পেয়ে আদালতের কাছে গিয়ে জনতার ধর্মীয় আস্থার দান নিয়ে নয়ছয় করার ব্যাপারে তদন্তের দাবি করবেন।[4]
ব্যাপারটি একটু তলিয়ে দেখা যাক।
রামমন্দির নির্মাণের সামগ্রী মজুত করা হচ্ছে।
ট্রাস্টের ওপর ট্রাস্ট রাখা যাচ্ছে না!
অযোধ্যা রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের এবং তার জেনারেল সেক্রেটারি চম্পত রায়ের বিরুদ্ধে। এই ট্রাস্ট সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্দিষ্ট এলাকায় রামজন্মভূমি মন্দির নির্মাণের জন্য 2020-র ফেব্রুয়ারি মাসে গঠন করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ট্রাস্টের 15 জন সদস্যের 12 জনই কেন্দ্রের মনোনীত। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রাক্তন মুখ্যসচিব নৃপেন্দ্র মিশ্র এবং জেনারেল সেক্রেটারি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট চম্পত রায়। কেন্দ্রীয় সরকার এই ট্রাস্টকে রামজন্মভূমি মামলার 2.77 একর সমেত মোট 67 একর জমি দান করেছে। মন্দির নির্মাণের জন্য ট্রাস্ট চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জনতার কাছে দান চেয়ে আহ্বান করে। লক্ষ্য ছিল, 1000 কোটি টাকার, কিন্তু জনগণের দানের ঝুলি 2000 কোটি টাকাও ছাপিয়ে গেছে বলে জানা যায়। ট্রাস্টের দাবি, 2020 সালের অক্টোবর থেকে 2021 সালের মধ্যে মন্দিরের ভিত নির্মাণ হয়ে যাবে।
পাঁচ মিনিটে জমির দাম দুই থেকে বেড়ে সাড়ে 18 কোটি!
মোট তিনটি জমি নিয়ে গণ্ডগোল। অভিযোগ, মন্দির থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রেল স্টেশনের কাছে গ্রাম বাগ বিজৈসীতে একটি ভূখণ্ডের পাঁচটি গায়ে গায়ে লাগা জমির টুকরো কেনা নিয়ে। সেগুলোর খতিয়ান নম্বর হল 242/1, 242/2 এবং 243, 244 এবং 246। এদের মালিক হরিশ ও কুসুম পাঠক নামের এক দম্পতি। আপ সাংসদের অভিযোগ, পাঠক দম্পতি গত 18 মে সন্ধ্যে 7.10 মিনিটে শেষ তিন খণ্ড জমি (243, 244 এবং 236) দুই জমির দালাল সুলতান আনসারি এবং রবিমোহন তিওয়ারিকে বিক্রি করেন 2 কোটি টাকার বিনিময়ে। এর পর ওই দুই দালাল সেই একই জমি, (ক্ষেত্রফল 1.208 হেক্টর) শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের জেনারেল সেক্রেটারি চম্পত রায়কে 7.15 মিনিটে রেজিস্ট্রি করে দেয় 18.5 কোটি টাকার বিনিময়ে। অর্থাৎ, মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে জমির দাম 2 কোটি থেকে বেড়ে 18.5 কোটি হয়ে গেল?
অথচ একই জমির বাকি দুটি খণ্ড (242/1, 242/2, যার ক্ষেত্রফল 1.037 হেক্টর) ওই একই তারিখে ট্রাস্টের তরফে চম্পত রায় কিনেছেন সোজাসুজি জমির মালিক হরিশ পাঠক ও কুসুমের কাছ থেকে 8 কোটি টাকায়। রেভিনিউ সার্কেলের হিসেবে টুকরো জমিটির দাম হতে পারে 4.97 থেকে 5 কোটি টাকা। এখানেও ট্রাস্ট কিনল সরকারি দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকায়।[5]
আরও পড়ুন: মনুর মূর্তি প্রতিষ্ঠা: বিশ একুশে মনুসংহিতা
দু’টি প্রশ্ন:
1. যদি ধরে নিই, বাস্তবিক বাজার দর সরকারি দামের চেয়ে অনেক বেশি, তা হলেও একই জমির গায়ে গায়ে লাগা দুটো অংশ-একটা 242 নম্বর, অন্যটা 243, 244, 246 নম্বর- ট্রাস্ট একই দিনে এত আলাদা আলাদা দামে বিক্রি হয় কী ভাবে? বিশেষ করে জমি দু’টোর আয়তনে যখন খুব সামান্যই তফাৎ!
জমির টুকরো নম্বর জমির আয়তন ট্রাস্টের ক্রয় মূল্য তারিখ |
242 1.037 হেক্টর 8 কোটি টাকা 18/03/21 |
243, 244, 246 1.208 হেক্টর 18.5 কোটি টাকা 18/03/21 |
গায়ে লাগা দু’টো জমি, 0.171 হেক্টর জমি বেশি হওয়ায় দাম দু’গুণের বেশি! একই দিনে।
2. দুটি জমিরই রেজিস্ট্রির সাক্ষী অযোধ্যার বিজেপি মেয়র হৃষিকেশ উপাধ্যায় ও ট্রাস্টের মেম্বার ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনিল মিশ্র। তা হলে ট্রাস্ট গায়ে লাগা দ্বিতীয় জমিটি সোজা কম দামে পাঠক দম্পতির থেকে না নিয়ে কেন মাঝখানে দালাল ঢুকিয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দাম দিয়ে কিনল? আর পাঠক দম্পতিই বা কেন প্রথম টুকরো ট্রাস্টকে 8 কোটিতে বিক্রি করে পরের সামান্য বেশি জমিটি মাত্র 2কোটি টাকায় জমির দালালকে বিক্রি করল? তা হলে গল্পটা কী? সেটা বুঝতে গেলে জানতে হবে জমির মালিক পাঠক দম্পতির বিশেষ পরিচয়।
কে এই হরিশ ও কুসুম পাঠক?
হরিশ ও কুসুম পাঠক বর্তমানে অযোধ্যা আদালত এবং ক্যান্টনমেন্ট পুলিশের স্টেশনের চোখে 2016 সাল থেকেই ফেরার। তাদের বিরুদ্ধে চিটফান্ডের মাধ্যমে তিন জেলার লোককে ঠকানোর দায়ে মামলা করেছে পুলিশ। বারাবাঁকি, ফিরোজাবাদ এবং সন্ত কবীরনগর থানায় তাদের নামে এফআইআর রয়েছে। 2016 সাল থেকে তারা আদালতেও হাজির হয়নি। ফেরার থাকায় আদালতের নির্দেশে তাদের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। পাঠক দম্পতির গাড়িটি আজও অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট থানার আঙিনায় রোদ-জলে পড়ে আছে। অযোধ্যা পুলিশ তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।
অথচ এই বছরের 18 মার্চ আইনের চোখে ফেরার এই ফেরার দম্পতি দিব্যি রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টকে সোজাসুজি এবং দালালের মাধ্যমে স্টেশনের কাছে পেয়ারাবাগান জমি বিক্রি করে নেট 10 কোটি টাকা কামিয়ে আবার গা ঢাকা দিল। এবং প্রধানমন্ত্রীর তৈরি ট্রাস্টের সেক্রেটারি, সদস্য এবং খোদ শহরের মেয়র সাক্ষী হয়ে তাদের সাহায্য করলেন?
জমি আসলে ওয়াকফ বোর্ডের?
সমস্ত নথিপত্র থেকে স্পষ্ট, 242 থেকে 246 এই গোটা জমিটির (ক্ষেত্রফল 2.24 হেক্টর) আসল মালিক ওয়াকফ বোর্ড, এবং এটা নিয়ে কোর্টে কেস চলছে। তাই 2011 থেকে কুসুম ও হরিশ পাঠক জমিটি বেচতে পারেনি। এটি 1924 সালে হাজি ফকির ওয়াকফ বোর্ডকে দান করেন। বর্তমানে ওয়াকফ বোর্ডের তরফ থেকে ওয়াহিদআমেদ দেখাশোনা করছেন। নিউজ লন্ড্রির তোলা ছবিতে দেখা গেছে, জমিটিতে একটি বোর্ড লাগানো আছে, যাতে ওয়াকফ বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে হাজি মোহম্মদ ফারুকের নাম ও ফোন নম্বর 6388670475 দিয়ে জমিটি কাউকে কিনতে বারণ করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। [6]
তাহলে কিসের ভিত্তিতে ট্রাস্ট ভক্তদের শ্রদ্ধার দানের টাকায় এই ফেরার প্রতারক পাঠক দম্পতির থেকে জমি কিনল?
আরও পড়ুন: ভীমা কোরেগাঁও মামলায় কম্পিউটারে ভুয়ো নথি ঢোকানোর প্রমাণ
খাস বা সরকারি জমি এভাবে কেনাবেচা হতেই পারে না!
এবার তিন নম্বর জমির গল্প। গত 20 ফেব্রুয়ারি অযোধ্যার মেয়রের ভাগ্নে দীপনারায়ণ উপাধ্যায় বর্তমান রামমন্দির নির্মাণ ক্ষেত্র থেকে 300 মিটার দূরে একটি জমির টুকরো (ক্ষেত্রফল 890 বর্গমিটার) পূজারি দেবেন্দ্রপ্রসাদ আচার্যের কাছ থেকে 20 লাখ টাকায় কিনে 11 মে ট্রাস্টকে 2.5 কোটিতে বিক্রি করেন। কিন্তু সরকারি রেকর্ডে জমিটি ‘নজুল’ বা সরকারের ‘খাস’ জমি। এই জমি সরকার কাউকে উন্নয়নের জন্য লিজ দিতে পারে। কিন্তু এই জমি কেউ কেনাবেচা করতে পারে না।
মজার ব্যাপার হল, বিক্রির নথিতে জমির স্ট্যাটাস, অর্থাৎ এটি প্রাইভেট ল্যান্ড নাকি নজুল, তার কোনও উল্লেখ নেই। বিক্রেতা দীপনারায়ণ উপাধ্যায়ের প্যান নম্বরেরও উল্লেখ নেই। তা হলে কী করে জমি রেজিস্ট্রি হল? চম্পত রায়, অনিল মিশ্র ও হৃষীকেশ উপাধ্যায়েরা তো সব ভাল করে বাজিয়ে নিয়ে তবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছেন! [7]
এ নিয়ে মেয়র হৃষিকেশ উপাধ্যায় ‘আজ তক’ চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন। জমি রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার এসবি সিং ও অযোধ্যার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অনিল ঝা দৈনিক ভাস্করের প্রতিনিধির সামনে মুখ খোলেননি। বিজেপির মুখপাত্র সিদ্ধার্থনাথ সিংয়েরও মুখে কুলুপ। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র বিনোদ বনসাল প্রথমে বলেন, ‘যার মনে হয় গন্ডগোল আছে, সে কাগজপত্তর নিয়ে আদালতে যাক। সেখানে ফয়সালা হবে।’ তাঁকে যখন বলা হল, আদালতে যাওয়ার কী দরকার? বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা ট্রাস্ট রেভিনিউ অফিসে গিয়ে রেকর্ড দেখলেই তো চক্ষু-কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন হয়, তখন তিনিও চুপ। ইন্ডিয়া টুডে-র রিপোর্টে প্রকাশ, রেভিনিউ ডিপার্টমেন্টের সাইটে এই জমিটির স্ট্যাটাস ‘নজুল’ বা সরকারি খাস জমিই। 26 জুন নিউজ ইউনিক পোর্টালের সৌমিক ভট্টাচার্যের রিপোর্ট বলছে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই জমিটির স্ট্যাটাসের ইতিহাস খুঁজতে আমলাদের কাজে লাগিয়েছেন। সবাই হন্যে হয়ে খুঁজছে জমিটির ইংরেজ জমানা থেকে রেকর্ড। অর্থাৎ কবে থেকে নজুল, কার কাছে লিজ, নজুল স্ট্যাটাস আদৌ রিনিউ হয়েছিল কি না, হলে কবে ইত্যাদি। কিন্তু অন্য জমিটি? যার রেজিস্ট্রি 18 মার্চ ফেরার দম্পতির সঙ্গে হয়েছিল? আর দানের টাকাগুলো কার হাত দিয়ে কার কাছে গেল?
সরকার পোষিত মিডিয়ার হিরণ্ময় নীরবতা!
প্রথমে এই অস্বস্তিকর অবস্থা এড়াতে শাসকদল সমর্থক চ্যানেলের অ্যাঙ্কররা প্রশ্নকর্তাকে ধমকাতে লাগলেন। আপনি কি ট্রাস্টকে চাঁদা দিয়েছেন? নইলে আপনার ওদের টাকা ওরা কী করছে সেটা প্রশ্ন করার অধিকার নেই। আপনি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিরোধীদলের প্রচারের ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
কথাটা কি ঠিক? তাহলে তো বিজয়ী প্রার্থীকে যদি আমি ভোট না দিয়ে থাকি তাহলে আমার তাঁর কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার নেই।
তবে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ায় এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
অযোধ্যার হনুমানগড়ী মন্দিরের মোহন্তরাজু দাস এবং রামলালা মন্দিরের প্রধান পূজারী সত্যেন্দ্র দাস বলছেন তদন্ত হোক। অভিযোগ অসত্য হলে মিথ্যা অভিযোগের দায়ে সঞ্জয় সিংয়ের বিরুদ্ধে 50 কোটি টাকার মানহানি মামলা হবে। সত্যি হলে দোষীরা কড়া শাস্তি পাক। নির্বাণী আখড়ার মোহন্ত ধরম দাস, দিগম্বর আখড়ার সুরেশ দাস, নির্মোহী আখড়ার সীতারাম দাস সিবিআই তদন্তের দাবি করে বলেছেন ট্রাস্ট সরকার বানিয়েছেরামজন্মভূমি মন্দির নির্মাণের জন্যে, লোকে তার জন্য চাঁদা দিয়েছে। জমি কিনে হোটেল বানানোর অধিকার ওদের কে দিয়েছে? [8]
অতএব যা দাঁড়াল:
1. আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং ট্রাস্টের জমির কেনাবেচা সংক্রান্ত যে সব দলিল দস্তাবেজ নিয়ে প্রেসের সামনে হাজির করেছেন, তার সত্যতা নিয়ে কেউ সন্দেহ করেননি, না ট্রাস্টের প্রতিনিধি, না বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বিজেপির প্রতিনিধি।
2. আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে যে ট্রাস্ট যে তিন টুকরো জমি কিনেছে তার মালিকানা সন্দেহজনক। মন্দিরের কাছের জমিটি প্রথমত খাস জমি, যা কেনাবেচা যায় না। আর স্টেশনের কাছে পেয়ারাবাগানের জমিটি ওয়াকফ বোর্ডের, যার জন্য 2011 থেকে যতবার ফেরার ঠগ দম্পতি ওটি আলাদা আলাদা লোকের কাছে বেচতে গেছে, আদালতের আপত্তিতে আটকে গেছে।
3. ধর্মশালা বা হোটেল বানাতে চেয়ে ট্রাস্ট কি প্রদত্ত অধিকারের বাইরে কাজ করছে না?
এই বিষয়গুলির নিষ্পত্তি হওয়া দরকার এই কারণেই যে বিষয়টির সঙ্গে বহু মানুষের ভাবাবেগ জড়িত। প্রকৃত তদন্ত হলে তা সঙ্ঘ পরিবারেরই কারও না কারও বিরুদ্ধে যেতে পারে, কারণ তাঁরা ছাড়া আর কেউ বিষয়টির সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি কেন্দ্রের শাসক দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ বিবেচনাধীন এখন। তদন্ত কীভাবে হবে, কে করবে তার থেকেই বোঝা যাবে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কী চায়।
তথ্যসূত্র:
[1] সঞ্জয় সিং, মনীশসিসোদিয়া এবং পবন পান্ডের 13 ও 14 জুনের সাংবাদিক সম্মেলন
[2] ইন্ডিয়া টুডে, 15 জুন এবং প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও
[3] সঞ্জয় সিং, প্রেস কনফারেন্স
[4] সঞ্জয় সিং, প্রেস কনফারেন্স
[5] ইন্ডিয়া টুডে, 17 জুন, 2021
[6] নিউজ লন্ড্রি এবং নিউজ 24 চ্যানেল
[7] ইন্ডিয়া টুডে, 17 জুন, 2021
[8] দি প্রিন্ট, 19 জুন, 2021
স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সমর্থক ছিলেন। সেই সাভারকরই কালাপানি থেকে ফেরত এলেন কট্টর মুস
আয়ুষ মন্ত্রক তাদের তিনটি ওষুধের প্যাকেজ দিব্য করোনিল, দিব্য শ্বাসারি বটি এবং দিব্য অনুতৈল-কে ‘প্রত
ভালবাসার কাঙাল সেই মানুষটি যিনি জাতপাত-ভাষা-ধর্মের বা দেশকালের বিভেদ মানতেন না
দাঙ্গার সময় গান্ধীজির মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্যে হিন্দু যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বানে খেপেন সাভারকর।
হাসবেন না; এটা সত্যি ভাববার কথা। এই সব গান-টানের পেছনে ঘাপটি মেরে থাকা গভীর চক্রান্তের হদিশ পাওয়া যা
আমরা দেখব যে সাভারকরের হিন্দুত্ব এবং আরএসএস-এর হিন্দুত্বের মধ্যে কী কী মিল এবং কোথায় অমিল।