বলা হয় যে সাভারকর তাঁর লেখা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের আখ্যানে অওধের নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ এবং রোহিলখন্ডের বিদ্রোহী নেতা খান বাহাদুর খানের প্রশংসা করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সমর্থক ছিলেন তিনি। সেই সাভারকরই কালাপানি থেকে ফেরত এলেন কট্টর মুসলমান বিরোধী হয়ে। জীবনী লেখকের মতে আন্দামানে রাজবন্দিদের সঙ্গে জেলার ব্যারি’র অধীনস্থ মুসলিম মেটদের অত্যাচার এবং দুর্ব্যবহার দেখে ওঁর মুসলমানদের সম্পর্কে ধারণা বদলে যায়। ওঁর মতে বালুচ, পাঠান, সিন্ধি এবং পাঞ্জাবি মুসলমানেরা ছিল অত্যাচারী। তামিল, মারাঠি ও বাঙালি মুসলমানেরা অমন নয়। মুসলমানের দাড়ি এবং শিখের পাগড়ি নিয়ে কথা বলা চলবে না। কিন্তু হিন্দুদের পৈতে রাখার অনুমতি নেই। রামরক্ষা বলে একজন উত্তরভারতের ব্রাহ্মণ রাজবন্দী এর প্রতিবাদে তিনমাস অনশন করে মারা গেলেন। কিন্তু নিয়ম বদলায়নি।1
তখন থেকেই সাভারকর হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করার সংকল্প নিলেন। জেল থেকে মুক্ত হয়ে ‘হিন্দু মহাসভা’ দল গঠন এবং ‘হিন্দুত্ব’ আদর্শের প্রচার তাঁর সারা জীবনের ব্রত হয়ে গেল, ইংরেজ তাড়িয়ে দেশ স্বাধীন করা নয়।
একটা কথা উল্লেখ করা দরকার, এই অত্যাচার এবং ভেদাভেদের শিকার হয়েছেন সে সময়ে সেলুলার জেলে থাকা সমস্ত রাজবন্দ। সাভারকর কোন ব্যতিক্রম নন। উল্লাসকর দত্ত, বারীন ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ত্রৈলোক্য মহারাজের স্মৃতিকথায় তার সাক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু কেউই সেখান থেকে এত কট্টর হিন্দু এবং উগ্র মুসলমান বিদ্বেষী হয়ে দেশে ফেরেননি। অবশ্য একই স্কুলে পড়েও ছাত্রদের রেজাল্ট আলাদা আলাদা হতেই পারে।
আন্দামান থেকে ফিরে মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলে থাকার সময়ে নিজের সেলে বসে লিখে ফেললেন একটি বই “হিন্দুত্ব” যা হিন্দু জাতীয়তাবাদের আকরগ্রন্থ। ভারতের রাজনীতিতে জন্ম নিল ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ এবং ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’, যার চারা আজ এক শতাব্দী পরে বিশাল বটগাছের রূপ ধরেছে। ইংরেজিতে লেখা বইটি ১৯২৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এছাড়াও অনেক বই, প্যাম্ফলেট এবং প্রবন্ধ লিখে উনি ওঁর হিন্দুত্বের ধারণাকে স্পষ্ট করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘হিন্দু রাষ্ট্র দর্শন’ এবং শেষ জীবনে লেখা ‘সিক্স গ্লোরিয়াস ইপোক্স অফ হিস্ট্রি’(১৯৭১)।
স্বামী দয়ানন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ এবং লোকমান্য তিলকের হিন্দু পুনরুত্থান আর সাভারকরের হিন্দুত্ব এক নয়। ওঁদের ছিল ‘ধার্মিক পুনরুত্থান’ আর সাভারকরের ছিল ‘রাজনৈতিক হিন্দুত্ব’।
আরও পড়ুন |
বীর সাভারকর ১: স্বাধীনতা সংগ্রামী, নাকি আপসকামী? |
বীর সাভারকর ২: কাপুরুষ? নাকি ইংরেজ যাকে ভয় পেত? |
আরও স্পষ্ট করে বললে, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক হিন্দুত্ব। ওঁর মতে হিন্দু একটি সাংস্কৃতিক জাতি, যাদের শিরায় শিরায় বইছে একই শুদ্ধ রক্তধারা, যারা জন্মসূত্রে এই ঐতিহ্যের জন্যে গর্বিত।
ওঁর হিন্দুত্ব আইন করে এফিডেভিট করে নাগরিকত্ব পাওয়া নয়। তার জন্যে ভারতে জন্মাতে হবে। কেন?
কারণ যদি ‘পিতৃভূমি' এবং ‘পূণ্যভুমি' এক না হয় তা হলে মানুষের মনে টানাপোড়েন থাকবে এবং তার আনুগত্য বিভক্ত হবে। 2
সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ ধারণাটি দাঁড়িয়ে আছে তিনটি স্তম্ভের উপর—‘পিতৃভূ’(নিজের জন্মভূমি), ‘পূণ্যভূ’(ধর্মের জন্মভূমি) এবং একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা শুদ্ধ রক্তধারার মাধ্যমে হিন্দুদের যুক্ত করছে। এই তিনের ঐক্য ‘হিন্দুজাতি’র আইডেনটিটি বা পরিচয়।
উনি মনে করতেন ‘হিন্দু' একটি প্রাকৃত শব্দ, সংস্কৃত নয়, তাই বেদে উল্লেখ নেই। কিন্তু এটি প্রাচীন শব্দ। মধ্যপ্রাচ্যের জিভে ‘স' কে ‘হ' উচ্চারণ করা হত। তাই ‘সপ্তসিন্ধু' জেন্দাবেস্তায় ‘হপ্তসিন্ধু' বলে উল্লিখিত। তাই সিন্ধুর এপারে সবাই হিন্দু। তাই ভারতে জন্মানো হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন সবাই রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক হিন্দু। কারণ তাদের জন্মভূমি (পিতৃভূমি) এবং ‘পুণ্যভূমি' হিন্দুস্তান। একই কারণে কোন ক্রিশ্চান বা মুসলমান হিন্দুস্থানের নাগরিক বা সাংস্কৃতিক -রাজনৈতিক হিন্দু হতে পারে না। কারণ তার জন্মভূমি যদি ভারত হয়ও এবং সে যদি দেশপ্রেমিক হয়ও তার পূণ্যভূমি আলাদা (আরব ও প্যালেস্তাইন)। ফলে সেইসব দেশের সঙ্গে যুদ্ধ হলে বা স্বার্থের সংঘাত হলে ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট' কাজ করবে।3
অতএব সাভারকরের ভারতবর্ষে মুসলিম/ক্রিশ্চানদের স্থান নেই। আরএস এস এর গুরুজি গোলওয়ালকরের ‘এ বাঞ্চ অফ থট’ বইয়েও ‘ইন্টার্নাল থ্রেটস’ বলে একটি অধ্যায় আছে, যাতে শত্রু তিনজন — মুসলিম, ক্রিশ্চান এবং কম্যুনিস্ট। এদের পিতৃভূমি এবং পুণ্যভূমি আলাদা যে! 4
সাভারকরের জীবনী লেখক পুরন্দরে বলছেন যে যাঁরা ভারতের বহুত্ববাদী আপাতবিরোধী ধর্মাচরণ এবং জীবনযাপনের সমন্বয়ের কথা বলতেন তাঁদের বিপরীতে সাভারকর দাঁড়ালেন এমন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারণা নিয়ে যা মুসলিম-ক্রীশ্চানদের বাদ দিয়ে শুধু হিন্দু ভারতের কথা বলে। 5
সিস্টার নিবেদিতা এবং অ্যানি বেসান্তকে উনি নিয়মের ব্যতিক্রম বলেই মনে করতেন। 6
অথচ ‘গোমাতা’ এবং গো-পূজা ওঁর মতে ‘বুদ্ধি-হত্যা’ ছাড়া আর কিছু নয়। গরু শুধু বাছুরের মাতা। গোমূত্র, গোবর খাওয়া নিয়ে ওঁর প্রবল বিতৃষ্ণা। সাভারকরের মতে বৌদ্ধধর্মের অহিংসা নীতি ভারতকে দুর্বল করে মুসলিম আগ্রাসনকে সহজ করে দিয়েছে। সিন্ধু আক্রমণের প্রসঙ্গে উনি বৌদ্ধদের বিশ্বাসঘাতক বলতে দ্বিধা করেন নি। 7
উনি খুশি, বৌদ্ধধর্মের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ভারতে প্রায় বিলুপ্ত এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব হিন্দু দশাবতারের একজন হয়ে শোভা পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন |
বীর সাভারকর ৪: হিন্দু-বিরোধী সাভারকর! |
বীর সাভারকর ৫: দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রশ্নে জিন্নার হাতে খেলেছিলেন সাভারকর |
২.৬ উনি কট্টর মুসলিম বিরোধী কিনা?
আগেই বলেছি ওঁর ‘হিন্দু ভারত’ শুধু তাদের স্বীকার করে যারা ভারতে জন্মেছে (পিতৃভু) এবং যাদের ধার্মিক ও সাংস্কৃতিক শেকড় ভারতে; তাই হিন্দু-শিখ-বৌদ্ধ-জৈন স্বীকার্য, অন্যেরা নয় । মুসলমানেরা বহিরাগত, তায় ওদের পুণ্যভূমি মক্কায়। যারা এদেশে জন্মেছে তারা প্রথম শর্ত ‘পিতৃভু’ পাশ করলেও দ্বিতীয় শর্ত ‘পুণ্যভূ’ পাশ করবে কি করে!
‘সিক্স গ্লোরিয়াস ইপোক্স অফ ইন্ডিয়ান হিস্টরি' (১৯৭১) নামে শেষবয়সে লেখা ওঁর বইটি পড়লে দেখা যাবে -- এক অতীতমুখী মন যার চেতনা শুধু অতীতের হিন্দু-মুসলিম বাইনারিতে আবদ্ধ হয়ে হিন্দুর কথিত বিক্রমগাথায় সান্ত্বনা খোঁজে। শুধু তাই নয়, এই মানস একটি প্যারানইয়া (যেমন শিগগিরই মুসলিমরা ভারতে মেজরিটি জনগোষ্ঠী হয়ে উঠবে) থেকে আত্মসমর্পণকারী বন্দী মুসলিমদের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হত্যা তথা ‘টু পে ইন দেয়ার ওন কয়েন' নীতিতে মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণকে উচিৎ বা কর্তব্য বলে ওকালত করে।
ওঁর মতে হিন্দুদেরও দাঁতের বদলে দাঁত চোখের বদলে চোখ মেনে চলা উচিত ছিল। ‘ক্ষমা বীরস্য ভূষণম' জাতীয় ফালতু স্তোকবাক্যে না ভুলে পরাজিত আত্মসমর্পণকারী মুসলিনদের হত্যা করা উচিত ছিল। এবং 'ওরা' যেমন পরাজিত হিন্দুদের বৌ-মেয়েদের লুটে নেয়, ধর্ষণ করে, বিয়ে করে বা রক্ষিতা বানায় আমাদেরও তাই করা উচিত ছিল । তাহলে আজ এত মুসলমান হত না।' 8
‘শিবাজী যখন বিজাপুরের সুলতানের পরিবারের মেয়েদের সসম্মানে ফেরত দিলেন তখন কি সেই সিন্ধু বিজয়ের দিন থেকে অগণিত লুন্ঠিত ধর্ষিত হিন্দুমেয়েদের কান্না তাঁর কানে প্রবেশ করে নি? হিন্দুসমাজ ‘অহিংসা', শত্রুকে সম্মান, সহিষ্ণুতা -- এসব কে গুণ মনে করে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছে। সাপ দেখলে মেরে ফেলা উচিত, স্ত্রী-পুরুষ বিচার করা উচিত নয়। 9
রামায়ণে রামচন্দ্র তাড়কা রাক্ষসীকে বধ করেছিলেন। লক্ষ্মণ শূর্পনখার নাক কেটে ভাগিয়ে দিয়েছিলেন। তাহলে?’
--- ভারতরত্নের যোগ্য নায়ক বটে!
বৃদ্ধ অসুস্থ সাভারকরের ইংরেজি অনুবাদে সহকারী এস টি গোড়বোলের চোখে এগুলো রীতিমত ‘শকিং’ মনে হয়েছিল।10 তাঁর অন্য এক মারাঠি ভাষায় জীবনী রচয়িতা ডি এন গোখলের মতে সাভারকরের এই ‘বদলা’ নেবার থিওরি হিন্দুধর্মের কিছু বেসিক ভ্যালুজকে –যেমন, ক্ষমা, নারীর প্রতি সম্মান, উদার হৃদয় হওয়া,—খারিজ করে। তাই এর তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। 11
সাভারকর ভাষার ক্ষেত্রেও শুদ্ধিকরণে আক্রামক হলেন। সরকারি কাজকম্মে উর্দূর ব্যবহার মুছে ফেলতে হিন্দি এবং আঞ্চলিক ভাষার পক্ষধর হয়ে ডাক দিলেন “উর্দূ কলম ভেঙে ফেল”। 12
কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার রায়ে চারজনের ফাঁসির আদেশ হয়। সাভারকর মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশপ্রেমিকদের বলিদানকে সম্মান জানিয়ে একটি লেখায় শুধু তিনজনের উল্লেখ করেন—রামপ্রসাদ বিসমিল, রোশন সিং এবং রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী। কিন্তু এড়িয়ে যান আরেকটি নাম—আসফাকউল্লা খান। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। 13
২.৭ ব্যক্তিগত আচার আচরণে উনি কতটা হিন্দু ছিলেন?
ব্যক্তিগত জীবনে বিনায়ক সাভারকর ছিলেন নাস্তিক এবং সংস্কারমুক্ত। 14 হিন্দু ধর্মের সংস্কার, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতপাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। বর্ণাশ্রম ও ধর্মীয় সংস্কার যে হিন্দুধর্মকে বিভক্ত করে দিয়েছে এবং অনেক ক্ষতি করেছে তা বারবার বলেছেন। রত্নগিরিতে থাকবার সময় তিনি দলিতদের জন্যে পতিতপাবন মন্দিরের দ্বার খুলে দেন এবং ছোঁয়াছুঁয়ি ও নানারকম সংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। তাঁর উপস্থিতিতে বেশ কিছু অসবর্ণ বিবাহও হয়। 15
১৯২০ সনের শেষের দিকে সাভারকর রত্নাগিরিতে দলিত সমাজের বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্যে বন্ধুদের সহায়তায় একটি স্কুল শুরু করলেন এবং অনুসূচিত জাতিদের এক সম্মেলনে মহার এবং মুচিদের পৈতে পরিয়ে বললেন বেদপাঠে তোমাদেরও সমান অধিকার। 16
বেদ, পুরাণ এবং উপনিষদ নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল যে হিন্দুদের এইসব বইগুলো মাথায় ঠেকিয়ে কুলুঙ্গিতে তুলে রেখে বিজ্ঞানের বই পড়া উচিত। ওদিকে আবার উনি হিন্দুধর্ম গ্রন্থ দলিতদের মধ্যে বিতরণ করতেন যাতে ওরা নিজেদের হিন্দুসমাজের অঙ্গ হিসেবে গণ্য করে। 17
সাভারকর মাসাহারী ছিলেন। মাছ খেতে খুব ভালবাসতেন। খাবার নিয়ে বাড়াবাড়ি ওঁর পছন্দ নয়। এসব হিন্দুদের দুর্বল করেছে বলে ওঁর ধারণা।
আরও পড়ুন |
বীর সাভারকর ৬: গান্ধীহত্যার সঙ্গে সাভারকরের আদৌ কোনও সম্পর্ক আছে? |
১৯৫০ এর দুর্ভিক্ষের সময় ওঁর পরামর্শ ছিল যে ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ, জৈন, এবং অন্য শাকাহারীরা যদি মাছ, ডিম এসব খাওয়া শুরু করে এবং মানুষের খাদ্যাভাসের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করা হয় তাহলে খাদ্যের অভাবের একটা সাময়িক সমাধান হতে পারে। উনি নিজের ছেলে বিশ্বাস সাভারকরের পৈতে দেননি। 18
উনি জাতিব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করেও বলেন যে মুসলিম আমলে নিজেদের রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার খাতিরে এই ব্যবস্থা বেশি আঁটোসাটো হয়েছে, আজ দরকার নেই। 19
উনি গরুকে মাতা বলতে নারাজ। বলেন একটি চারপেয়ে পশু আমার মাতা নয়, বরং বাছুরের মাতা। তবে গরু খুব উপকারী জন্তু, তাই তার পালন জরুরি। সে সময়ে গোঁড়া হিন্দুরা ওঁকে নিয়ে বিব্রত ছিল কারণ উনি বামপন্থী এম এন রায়ের (মানবেন্দ্রনাথ; র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট) সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালবাসতেন। অথচ ‘দৈবী ক্ষমতা সম্পন্ন’ ধর্মগুরুদের সহ্য করতে পারতেন না; পুজো-আচ্চার জন্যে চাঁদা তোলা বন্ধ করে লক্ষ লক্ষ গরীব ভারতবাসীদের সাহায্যের উপদেশ দিতেন। 20
‘যৌনতা’ নিয়ে ওঁর চিন্তা সময়ের চাইতে এগিয়ে ছিল । উনি ব্রহ্মচর্য্য বা সন্ন্যাস নিয়ে নাক সিঁটকাতেন। ‘রতি’ নামে একটি কবিতা লিখে বলেছিলেন যৌন চাহিদার পূর্তি মানুষের জীবনে সুখ ও আনন্দ নিয়ে আসে। এটাই ‘প্রকৃত ধর্ম’। 21 সমসাময়িক সমাজ এ সব ভাল চোখে দেখেনি।
সাভারকরের প্রার্থনায় বিশ্বাস ছিল না । বলতেন যে ঈশ্বর যদি থাকেন তো তাঁর প্রার্থনায় সাড়া দেবার অভ্যাস নেই। 22
অসুস্থ সাভারকর ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে ৮৩ বছর বয়সে মারা যান। পীড়ায় অস্থির হয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু কামনা করেছিলেন, কিন্তু আইনে বাধে। তাই ধীরে ধীরে খাওয়াদাওয়া এমনকি জল পর্য্যন্ত ছেড়ে দিলেন। 23
তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাঁর মরদেহ কোন চিতায় তোলা হয় নি, মন্ত্রোচ্চারণ করা হয় নি, বিনা আড়ম্বরে ইনসিনারেটরে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। বাড়ির কাছে কাকেদেরও কিছু আহার বা পিন্ড দেওয়া হোল না। ভদ্রলোকের কাছে হিন্দু ধর্ম ব্যক্তিগত আচরণ না হয়ে রাজনৈতিক স্তরেই সীমাবদ্ধ রইল। 24
তথ্যসূত্র:
============================
1. সাভারকর, “মাঝি জন্মাথেপ”, পৃঃ ৭০-৭২;(মারাঠি ভাষায়)।
2. বৈভব পুরন্দরে, “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব” পৃঃ ১৭৮-১৭৯। এর বিস্তৃত চর্চা সাভারকরেরন লেখা “হিন্দুত্ব” বইয়ে রয়েছে।
3. ঐ; পৃঃ ১১৯।
4. গোলওয়ালকর; “বাঞ্চ অফ থটস”, পৃঃ ১৭৭-৯৫।
5. বৈভব পুরন্দরে, “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব” পৃঃ ১৭৭।
6. ঐ ; পৃঃ ১৮৫।
7. ঐ; পৃঃ ২০০-০১।
8. ঐ. পৃঃ ৩৩৪। এবং সাভারকরের “সিক্স গ্লোরিয়াস ইপোক্স অফ হিস্ট্রি” পৃঃ১৭৫-৮০।
9. ঐ পৃঃ ৩৩৩-৪; এবং সাভারকরের “সিক্স গ্লোরিয়াস ইপোক্স অফ হিস্ট্রি”, পৃঃ ১৮৫।
10. “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ৩৩৩।
11. গোখলে, “স্বতন্ত্রবীর সাভারকর”, পৃঃ ১১৫-১৮।
12. টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ৩০ জুলাই, ১৯২৫।
13. “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ ২২৩।
14. ঐ ; পৃঃ ২১২ এবং ফাড়কে, “ শোধ সাভারকরঞ্চা”, পৃঃ ১৪১।
15. “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ ২০৮-২১৩।
16. ঐ, পৃঃ ২০৭।
17. ঐ, পৃঃ ২০৯।
18. “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ ৩৩০।
19. ধনঞ্জয় কীর, “ বীর সাভারকর”, পৃঃ ৫৩৩-৩৪।
20. “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ ৩৩০।
21. গোখলে,“স্বতন্ত্রবীর সাভারকর”, পৃঃ৪৭-৪৮; এবং ধনঞ্জয় কীর, “ বীর সাভারকর”, পৃঃ ৪১৮--৫৩৩।
22. “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ ২০০।
23. গোড়বোলে; ‘মালা উমজলেলে স্বতন্ত্রবীর সাভারকর’ (মারাঠি), পৃঃ ১৬২-৬৭।
24. “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”, পৃঃ ১৩৭।
আমরা দেখব যে সাভারকরের হিন্দুত্ব এবং আরএসএস-এর হিন্দুত্বের মধ্যে কী কী মিল এবং কোথায় অমিল।
কৃষ্ণ করলে লীলা, আমি করলে বিলা!
ভালবাসার কাঙাল সেই মানুষটি যিনি জাতপাত-ভাষা-ধর্মের বা দেশকালের বিভেদ মানতেন না
শিক্ষা স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক ক্ষেত্রেও নিছক লাভের জন্য কর্পোরেট ব্যবসা
হারামজাদাদের কি কোনও উদ্ধার নেই?
নিজেকে চিনতে পেরেছি, আমি কাল্লু। কিসসা শোনা যার নেশা