সরকার ও কৃষক: ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে
ভারত সরকারের তিনটে কৃষি সংস্কার আইনের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আন্দোলনরত কয়েকশো কৃষক ইউনিয়নের 40 প্রতিনিধির আলোচনা পাঁচবার বৈঠকের পরও ব্যর্থ। কোনও সমাধান-সূত্র বেরোল না। কৃষকদের দাবি, তাড়াহুড়ো করে পাশ করানো তিনটে কৃষি সংস্কার আইন বাতিল করতে হবে, কারণ ওগুলো কৃষকের স্বার্থবিরোধী এবং কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থে তৈরি। সরকার বলছে, আইন বাতিল করা যাবে না। কিছু কিছু ধারা বদলানো যেতে পারে। শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে 10 জন কৃষক প্রতিনিধির ‘ইনফর্মাল’ আলোচনার পর ভারত সরকার কৃষি সচিবের তরফ থেকে দশ দফা সংশোধনের লিখিত প্রস্তাব কৃষক প্রতিনিধির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু কৃষকদের এক কথা। ওই তিনটে খামতি ভরা গন্ডগোলের আইনে কোনও আধাখ্যাঁচড়া পুলটিস লাগানো চলবে না। আগে তিনটি আইন বাতিল করতে হবে। তারপর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে নতুন ত্রুটিহীন আইন পাশ করতে হবে। কৃষকদের ইউনিয়নের সংযুক্ত কমিটি লিখিতভাবে সরকারের সংশোধনী প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়ে দিয়েছে। এবার কী হবে?
কৃষকেরা বলছেন করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে! না জিতে ফিরব না। আরও ছ’মাস ধর্নায় বসতেও তৈরি তাঁরা। কৃষকদের হুঁশিয়ারি, আন্দোলনের পরিধি বাড়বে। প্রথম দফায় 12 ডিসেম্বর দিল্লি-জয়পুর ন্যাশনাল হাইওয়ে বন্ধ করা হয়েছিল। ওই দিন কোনও টোল ট্যাক্স আদায় হয়নি। এর পর জেলায় জেলায় বিজেপির অফিস ঘেরাও করা হবে, ঘেরাও করা হবে ওই দলের সংসদ ও বিধায়কদের, বাদ যাবেন না মন্ত্রীরাও। 14 ডিসেম্বর অনশনও করেছেন তাঁরা। ভবিষ্যতে হয়তো আরও একবার ভারত বন্ধ হবে।
এতদিন আন্দোলন শান্তিপূর্ণ পথে চলেছে। যদিও সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কেরা এবং মিডিয়ার একাংশ ক্রমাগত আন্দোলনকারীদের পিছনে খালিস্তানি ও মাওবাদীদের উস্কানি ও মদতের কথা বলেছেন। কিন্তু তার কোনও প্রমাণ দেখানো যায়নি। দিল্লি-গুরগাঁও-নয়ডার রাজপথে লাখো কৃষক 7 ডিগ্রি সেলসিয়াসের প্রচণ্ড শীতেও রাস্তা অবরোধ করে তাঁবু খাটিয়ে বসে আছেন।
কিন্তু এরপর? এ ভাবে অনন্তকাল তো চলতে পারে না।
মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের প্রতিনিধিরা দাবি করেন যে কৃষকদের সমস্ত আপত্তি মেনে নিয়ে ওই প্রস্তাবিত সংশোধনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কৃষকরা কেন অবুঝ? কারা ওদের মাথা খাচ্ছে? যারাই করুক, তারা সত্যিকারের কৃষকহিতৈষী নয়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন—বাজে কথা। আমরা কোনও দলের কথায় নাচি না। সরকার আমাদের মূল দাবিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। সরকার নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ, ফলে আন্দোলন চলবে।
দু’পক্ষ নিজের নিজের অবস্থানে অনড়। ধনুকের ছিলা টানটান।
সরকারের দাবি, গোটা দেশে ব্লক স্তরে বৈঠক এবং প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের কৃষক এবং আমজনতাকে বোঝানো হবে ওই তিনটি কৃষি সংস্কার আইন কৃষকদের ভালর জন্যই আনা হয়েছে এবং আন্দোলনকারীদের আশঙ্কাগুলি কেন ভিত্তিহীন।
আমরা বরং বোঝার চেষ্টা করি দু’পক্ষের বক্তব্য। দেখা যাক, আন্দোলনের গোড়ার দিকে কৃষকদের আইনগুলো নিয়ে কী সমস্যা ছিল, ওদের যুক্তির পক্ষে কী বলা হত। পরের পর্বে সমঝোতা প্রস্তাব ও আন্দোলনকারীদের আপত্তি।
সরকারের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো:
আইন তিনটের মধ্যে এসেনশিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট বা খাস্যশস্য মজুত করার অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে কোনও প্রস্তাব নেই। কিন্তু বাকি দু’টো নিয়ে আছে।
এপিএমসি অ্যাক্ট বা মান্ডি তুলে দেওয়া এবং এমএসপি বাতিল করা নিয়ে সংশোধনী প্রস্তাব:
কারণ, ক) এমএসপি কোনও দিন আইন ছিল না, সরকারি আদেশে শুরু হয়েছিল, সরকারের আদেশে বলবৎ থাকবে।
খ) ন্যূনতম দাম বেঁধে দিলে আর ‘খোলা বাজার’ কথাটার কী মানে? বাজারদর ক্রেতা-বিক্রেতার দরাদরির মাধ্যমে ঠিক হবে। সরকার নাক গলাবে না।
কৃষকের আশঙ্কা
কৃষক সন্তুষ্ট নয়। ভারত কিষাণ ইউনিয়নের নেতা বলছেন এই আইনের 16 নম্বর ধারাতে তো বলা হয়েছে- যদি রায় চাষির বিরুদ্ধে যায় তাহলে সরকার ল্যান্ড রেভেনিউ অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। তার মানে তো, সেই দাঁড়াল যে ওর জমি নিলাম করে বকেয়া টাকা আদায় হবে।
2) ওই এমএসপি স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে C2 উৎপাদন মূল্যের দেড়গুণ বা 150% হোক।
সরকার এটা মানতে রাজি নয়।
মামলা এখন দেশের শীর্ষ আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছে উদার হয়ে খোলা মনে কৃষক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে।
কেন এই অচলাবস্থা? প্রতিবেদকের মতে এ হল পারস্পরিক অবিশ্বাস ও দু’টো আলাদা ইকোসিস্টেমের লড়াই।
আগামী কিস্তিতে আমরা আলোচনা করব বাকি দু’টো পয়েন্ট নিয়ে। এমএসপি কেন এল, খাদ্য সুরক্ষা আইন, রেশন ব্যবস্থা এবং উন্নত দেশের কৃষি ও খোলা বাজার নিয়ে। প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসবে এই আন্দোলন শুধু দু’টি রাজ্যের কৃষকের সমস্যা কিনা? এমএসপি কি শুধু কৃষকের স্বার্থে নাকি দেশের স্বার্থেও? সবশেষে আমাদের দেশে কৃষির সংস্কার চাই কিনা ও চাইলে কেমন সংস্কার চাই।
(ক্রমশ)
আয়ুষ মন্ত্রক তাদের তিনটি ওষুধের প্যাকেজ দিব্য করোনিল, দিব্য শ্বাসারি বটি এবং দিব্য অনুতৈল-কে ‘প্রত
হারামজাদাদের কি কোনও উদ্ধার নেই?
দুটি শ্লোকে নারী দেবী, বাকি দুই শতে লাঠির বাড়ি
সরকার আগে মন্দার কথা অস্বীকার করলেও লকডাউন তাকে চলতি বছরে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে!
নীরব মোদী, মেহুল চোকসির মতো গুজরাতের স্বর্ণ ব্যব্যসায়ীদের কেচ্ছা তো সর্বজনবিদিত।
ভালবাসার কাঙাল সেই মানুষটি যিনি জাতপাত-ভাষা-ধর্মের বা দেশকালের বিভেদ মানতেন না