ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের মহীরুহ পতন হল। 83 বছর বয়সে চলে গেলেন কত্থক সম্রাট (Kathak Maestro) পণ্ডিত বিরজু মহারাজ (Birju Maharaj)। 17 জানুয়ারি মধ্যরাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর হাত ধরেই বিশ্বের কাছে ভারতীয় সংস্কৃতি যেন নতুন রূপে পরিচিতি পেয়েছিল।
1938 এর 4 ফেব্রুয়ারি হান্ডলায় মহারাজ পরিবারে ব্রিজমোহন নাথ মিশ্র ওরফে পণ্ডিত বিরজু মহারাজ জন্মগ্রহণ করেন। লখনউ-এর কালকা বিনাদাদিন ঘরানার মানুষ তিনি। তাঁর দুই কাকা শম্ভু মহারাজ এবং লাচ্ছু মহারাজ এবং বাবা অচ্চন মহারাজ, তাঁরাও কথকের নামকরা শিল্পী ছিলেন। সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম হওয়ায় তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই নৃত্য শিক্ষা আরম্ভ করেন। মহারাজজির প্রথম গুরু তাঁর বাবা। বাবা মারা যাওয়ার পর কাকা শম্ভু মহারাজের থেকে নৃত্যু শিক্ষা লাভ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথম নৃত্য পরিবেশন করেন, এবং প্রথম স্টেজ শো করেন 1952 সালে কলকাতায় 14 বছর বয়সে। তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেরও শিক্ষালাভ করেছিলেন। এবং নিয়মিত চর্চা করতেন।
13 বছর বয়স থেকেই তিনি নাচ শেখাতে শুরু করেন। প্রথমে সঙ্গীত ভারতীতে নাচ শেখাতেন। তারপর একে একে ভারতীয় কলাকেন্দ্র, কথক কেন্দ্রে নাচ শেখাতেন এবং সংস্থাগুলোর শীর্ষপদে ছিলেন বহু বছর। 1998 সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের শিক্ষাকেন্দ্র কলাশ্রম। উদ্দেশ্য? শুধুই নৃত্য শিক্ষা নয়, জীবনযাপনের শিক্ষাও দিতেন ছাত্র ছাত্রীদের।
এক অনন্য ব্যক্তি ছিলেন পণ্ডিতজি। যে কোনও কিছুর জন্যই কঠোর নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন। আর সেটি তাঁর ছিল। তিনি নিজেও যেমন কঠোর নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতেন তেমন শিক্ষা তাঁর ছাত্র ছাত্রীদেরও দিতেন। কিন্তু কী তাঁকে বাকি সকলের থেকে আলাদা করে তুলেছিল?
আরও পড়ুন: শম্ভু মিত্রর সাফল্য ছিল আমার ব্যর্থতা
বিরজু মহারাজ তাঁর নাচের মাধ্যমে গল্প বলতেন। তাঁর নাচ দিয়ে নানান সামাজিক দিক তুলে ধরতেন। এই বিষয়টিই তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। তাঁর মুদ্রা, তালজ্ঞান, অভিনয় অনন্য ছিল। পায়ের কাজ ছিল দেখার মতো। তিনি নৃত্যনাট্যকে এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে দারুন কাজ করে গেছেন। শুধু ভারতের বিভিন্ন জায়গা নয়, বিদেশের মাটিতেও পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁর এই অসাধারণ কাজ। চোখের কাজের মাধ্যমে যেন জাদু ছড়াতেন মহারাজজি। দর্শকদের দায় হতো তাঁর থেকে নজর ফেরানো। শুধুই কি শাস্ত্রীয় নৃত্য? তাঁর অসামান্য দখল ছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সহ তবলা, ড্রাম, ভায়োলিন ইত্যাদির মতো বাদ্যযন্ত্রেও। ঠুমরী, দাদরা, গজল গাইতেন অসাধারণ।
বহু সিনেমায় কাজও করেছেন তিনি। সত্যজিৎ রায়ের শতরঞ্জ কী খিলাড়ির দু’টো গান কোরিওগ্রাফি করেন তিনি। দেবদাস সিনেমার জনপ্রিয় নাচ কাহে ছেড় মোহেও তাঁর কোরিওগ্রাফ করা। এছাড়াও তিনি বাজিরাও মস্তানি সহ আরও অনেক সিনেমাতেই কাজ করেছেন। বিশ্বরূপম সিনেমায় কোরিওগ্রাফির জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। পান পদ্মবিভূষণ, কালীদাস সম্মান, জাতীয় নৃত্য শিরোমণি, ফিল্মফেয়ারের মতো পুরস্কার। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়।
ভারতের অন্যতম নাম করা সাংস্কৃতিক পরিবারের সদস্য যিনি গোটা বিশ্বকে তাঁর নাচের ছন্দে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল, অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করেছিল বারবার হঠাৎই সেটার ছন্দপতন ঘটে গেল যেন। থেমে গেল তাঁর কম্পোজ করা গান, সুর। ভারত তার শাস্ত্রীয় নৃত্যের আইকনকে চিরতরে হারাল। সাংস্কৃতিক জগতে যেন হঠাৎই অন্ধকার নেমে এল পণ্ডিতজির এই চলে যাওয়ায়। তবুও যাওয়ার আগে তিনি রেখে গেলেন তাঁর কাজ, ছাত্র ছাত্রীদের যাঁদের মাধ্যমে তিনি অমরত্ব লাভ করে গেলেন।
রিচা শুক্লার শর্ট ফিল্ম রিসেশন মানুষের মনের একটি দিক তুলে ধরেছে।
কার্গিল যুদ্ধের নায়ক বিক্রম বাত্রার জীবনের নানান গল্প তুলে ধরেছে শের শাহ।
মানুষ যাতে নিজেকে বাঁচাতে পারে, তার জন্য বাতাসে কতটা বিষ মিশছে, প্রতিনিয়ত তার হিসেব দেবে জলবায়ু ঘড
ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্য তথা সাংস্কৃতিক জগতে এক বিশাল শূন্যতা রচনা করে চলে গেলেন বিরজু মহারাজ।
শাহিনবাগ, সিংঘু বা চেন্নাই, প্রতিরোধের সামনের সারির দখল এখন মহিলাদের হাতেই।
অ্যাক্রোপলিস মলে চলছে কলকাতা স্ট্রিট ফুড ফেস্টিভ্যাল।