শেষ এক মাসে দিল্লির গণচিতার আগুন একবারের জন্য থামেনি। শ্মশানের বাইরে মৃত্যুর পরও অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। হ্যাঁ এতটাই শোচনীয় অবস্থা সেখানে। শুধু দিল্লি নয়, গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ছবিটা প্রায় এক। কবরের জায়গাও আর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে করোনা আক্রান্তদের দেহ সোজাসুজি গঙ্গায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। একই ছবি দেখা গিয়েছে বিহারে। এর ফলে উঁকি দিচ্ছে আরও বিপদের আশঙ্কা।
করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর পর তাদের দেহ থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে কি পারে না, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্নের শেষ নেই। শেষ নেই বিভ্রান্তির এবং অবৈজ্ঞানিক মতামতেরও। কিন্তু করোনা না ছড়ালেও পচা গলা দেহাবশেষ গঙ্গায় মিশলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ছড়াতে পারে, সে কথা বোধহয় সকলেরই জানা।
আরও পড়ুন: ময়দানবের প্রাসাদ তৈরি হচ্ছে, শবদাহের ব্যবস্থা নেই
কিন্তু করোনা কি এভাবে সত্যিই ছড়াতে পারে মানুষ বা পশুদেহে? ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশে বাঘ, সিংহ এবং আমেরিকায় গেরিলার দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। কিন্তু মৃতদেহ থেকে কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে? এভাবে জলে করোনা আক্রান্তদের দেহ ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ায় বৈজ্ঞানিকরা আশঙ্কা করছেন যে জলজ জীবের উপরেও এই রোগ প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও এখনও অবধি এই বিষয়ে কোনও পরীক্ষা করা হয়নি, তবে যেহেতু করোনা সাধারণত ফুসফুস আছে এমন প্রাণীদের উপর বেশি প্রভাব ফেলছে এবং ড্রপলেটসের মধ্যে দিয়ে এই রোগ ছড়ায়, তাই গাঙ্গেয় ডলফিন সহ কচ্ছপ, ঘড়িয়াল ইত্যাদি জলজ প্রাণী সংক্রামিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনাতে আক্রান্ত না হলেও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছেই এই পচা গলা দেহ থেকে।
কিন্তু জলজ জীব ছাড়া, মানুষও কি এইভাবে সংক্রমিত হতে পারে? কী বলছেন চিকিৎসকরা? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চিকিৎসক, ডক্টর অদ্বিতীয়া দাস জানান, ‘করোনা মৃতদেহে 72 ঘণ্টার পর আর থাকতে পারে না। ফলে মৃতদেহ থেকে করোনা ছড়াতে পারে না। ইন ভিভো অর্থাৎ জীবিত মানুষের শরীরেই করোনা থাকে, এক্স ভিভো হলেই ভাইরাসের পক্ষে সেখানে আর থাকা সম্ভব নয়, সংক্রমণ ঘটানোও আর সম্ভব নয়। কারণ চামড়া থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে না। করোনা যেহেতু জলবাহিত রোগ নয়, ফলে জল থেকে এর সংক্রমণ সম্ভব নয়। তবে মৃতদেহের প্লাস্টিক যদি জলে ভাসে এবং কেউ সেটা ধরে সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বৈকি, যদিও তার সম্ভাবনা খুবই কম। আর এই ভাইরাস গঙ্গার মতো বড় নদীতে মেশার পর তার ভাইরাল লোড অনেকটাই কমে যায়।' তার মানে কি সত্যি এভাবে দেহগুলো গঙ্গায় ছুঁড়ে দিলে কোনও সংক্রমণের ভয় নেই? ডক্টর অদ্বিতীয়া জানান, ‘কে বলেছে নেই? পচা গলা দেহ থেকে ঠিক কত রকমের রোগ ছড়াতে পারে তার কোনও ধারণাই নেই। মৃতদেহতে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, যেগুলো জলে মিশে শুধু জলের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করবে তাই নয়, পানীয় জলের মান খারাপ করে দেবে। নানান জলবাহিত রোগ হতে পারে এর থেকে। একটা রোগ ঠেকাতে আরও অনেক রোগ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এভাবে।'
আরও পড়ুন: ভাল করতে গিয়ে আরও একটু ক্ষতি করে দিচ্ছি না তো?
ঠিক তাই। একটা মারণ রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে যেন আরও অনেক রোগকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। শুধু যে এভাবে মৃতদেহগুলো জলে ফেলে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশেরও। আশুতোষ কলেজের পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং পরিবেশবিদ অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘মৃতদেহগুলো এভাবে জলে ফেলে দেওয়ায় করোনা না ছড়ালেও জলদূষণ ঘটছে মারাত্মক ভাবে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার এতটা অঞ্চল জুড়ে মৃতদেহগুলো ভাসছে, দিন দিন তার সংখ্যা বাড়ছে, এতে দূষণের মাত্রাও বাড়ছে। এই জল ব্যবহার করলে নানান জলবাহিত রোগে স্থানীয় মানুষ সংক্রামিত হবেই। এছাড়া আশপাশের ভূমি দূষণও ঘটছে। যদিও মাছ বা অন্যান্য প্রাণীদের উপর কতটা প্রভাব পড়বে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। তবে আশঙ্কা একটা তো আছেই।'
ফলে এভাবে দিনের পর দিন গঙ্গায় করোনা আক্রান্তদের মৃতদেহ ফেলায় রোগ ছড়ানোর একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। তাই ডক্টর অদ্বিতীয় দাস যেমন জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে নিয়ম মেনে মৃত্যুর পরই প্লাস্টিকে মুড়ে মর্গে রাখা হচ্ছে এবং তারপর সেখান থেকে সোজা হয় কবর দেওয়া হচ্ছে বা পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটাই কঠোর ভাবে সব জায়গায় পালন করতে হবে। নইলে একটা রোগের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে আরও দশটা রোগ ছড়িয়ে যাবে।'
রিচা শুক্লার শর্ট ফিল্ম রিসেশন মানুষের মনের একটি দিক তুলে ধরেছে।
পুজো যখন সবার, উপহারও তো সবারই পাওয়ার কথা, নয় কী?
কুচপুরা গ্রামে হঠাৎ করেই চাষের জমি ফুলে ফেঁপে ওঠে, নেপথ্যে কী?
পার্টির দাদা দিদির সঙ্গে পরিচয় থাকলেই দ্রুত মিলছে করোনার টিকা, বাকিদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর
নিজেদের প্রাণ দিয়ে মানুষের ভুলের খেসারত দিচ্ছে উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণীরা।
গ্যালাক্সির মাঝখান থেকে রহস্যময় রেডিও সঙ্কেতের পিছনে কি বুদ্ধিমান প্রাণী?