×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • উত্তরবঙ্গে বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 20-11-2021

    প্রতীকী ছবি

    উত্তরবঙ্গের (North Bengal) বন্যপ্রাণীদের (Wildlife) জীবন বিপন্ন। একের পর এক মৃত্যু ঘটছে হাতি, কচ্ছপদের। হুঁশ নেই সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনের। জলপাইগুড়ির মরাঘাটে আবারও মৃত্যু হল এক হাতির। এর আগেও এই অঞ্চলে হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের দাবি, খাবারের খোঁজে প্রায়শই হাতির দল এই অঞ্চলে আসে। উৎপাত চালায়। সরকার, প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে আবারও মৃত্যু ঘটল এক পূর্ণবয়স্ক হাতির। যদিও এখনও তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি, তবে মনে করা হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মৃত্যু ঘটেছে যেমনটা আগের বারও ঘটেছিল।

     

    পাশাপাশি কোচবিহারের সাগরদিঘিতে (sagardighi coochbihar) একের পর কচ্ছপ মরে গিয়ে ভেসে উঠছে। মাত্র এক দিনে 10-12টি কচ্ছপের মৃত্যু ঘটেছে। প্রায় প্রত্যেকটি কচ্ছপই ইন্ডিয়ান পিকক সফ্টটেল টার্টেল প্রজাতির, যেগুলো বর্তমানে বিপন্ন তালিকার অন্তর্গত। অর্থাৎ যাদের সংখ্যা কম, এবং আগামী দিনে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এই ঘটনার পর তাদের সংখ্যা আরও বেশ কিছুটা কমে গিয়েছে।

     

    2011-’12 সালে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তরফে একটি পরীক্ষা করা হয় এই দিঘিতে। যেখানে আশপাশের অন্যান্য পুকুর বা দিঘির থেকে এই দিঘির ফ্রি কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। যা বোঝায়, এখানে বহু জলজ প্রাণীর বাস। সেখানে এ ভাবে দূষণ করতে দেওয়া এবং তাকে পরিশোধন করার নামে এমন পদক্ষেপ কী করে নেওয়া হল? কী হয়েছিল আসলে?

     

    আরও পড়ুন:জলবায়ু পরিবর্তনের বিষবাষ্পে শুকিয়ে যাচ্ছে কলোরাডো

     

    ঘাটের বাইরে সরকারি ফলককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেখানে অবাধে চলে কাপড় কাচা, স্নান করা, প্লাস্টিক, আবর্জনা ফেলা। ফলে নিয়মিত দূষিত পদার্থ জলে মেশে, যার ফলে নষ্ট হচ্ছে দিঘির বাস্তুতন্ত্র। ডিটার্জেন্টের মতো খারাপ জিনিসও বহু পরিমাণে জলে মিশে যাচ্ছে। পরিবেশবিদরা বারংবার সচেতন করেও অবস্থার বদল আনতে পারেননি। বর্তমানে সেই দূষিত জল পরিশোধিত করতে কোনও রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বেশ কয়েক লরি গোবর এবং চুন ফেলা হয়। হ্যাঁ, ঠিকই এই পদ্ধতিতে জল পরিশোধন করা যায়, কিন্তু তার আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। যেটা হয়নি।  ফলস্বরূপ এখন একের পর এক জলজ প্রাণী, কচ্ছপের মৃত্যু ঘটছে।

     

    পরিবেশবিদরা এই সব ঘটনায় যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। পরিবেশবিদ নব দত্ত বলেন, ‘‘দিঘি, পুকুরে এমনিই দূষণ বেশি হয়, কারণ এই সব জায়গায় জলের মধ্যে প্রবাহ নেই, স্থির। ফলে যা মেশে তা সেখানেই থেকে যায়। অন্য দিকে, নদী বা সমুদ্রে দূষণ হলে তা জোয়ার ভাটা, জলের প্রবাহের ফলে দূষিত জিনিসগুলো ছড়িয়ে যায়। আর সাগরদিঘির মতো জায়গায় কী করে কোনও রকম পরীক্ষা ছাড়া এমন কাজ করা হল বুঝলাম না। আসলে সাধারণ মানুষ তো বটেই যাঁরা এই দিঘির জলের উপর নির্ভরশীল তাঁরাও সচেতন, সজাগ কোনওটাই নয়। ফলে এ সব ঘটনা ঘটে।'

     

    নব দত্ত ঠিকই বলেছেন, পরিবেশের ক্ষতির প্রধান কারণ হচ্ছে সচেতনতার অভাব। সাধারণ মানুষ কখনওই প্রকৃতি নিয়ে ভাবতে শেখেনি। অবাধে, নির্বিচারে ক্ষতি করে যায় তার নিজের সুবিধার জন্য। যতক্ষণ না সেই ক্ষতি ঘুরিয়ে নিজেদের ক্ষতি করছে তত দিন টনক নড়ে না ক রও। এই যেমন জলপাইগুড়িতে হাতির যাতায়াতের করিডরে বসতি গড়ে তোলা, বনভূমি ধীরে ধীরে কেটে সাফ করে দেওয়ার পরিণামস্বরূপই না এখন হাতিরা বসতি অঞ্চলে চলে আসছে খাবারের খোঁজে। উৎপাত করছে। বিপদে পড়ছে স্থানীয়েরা, তখন ‘গেল গেল’ রব উঠছে। একই ভাবে সাগরদিঘিতে এত দিন যথেচ্ছ দূষণ ঘটানো হয়েছে, এখন যখন জল পুরোপুরি দূষিত হয়ে গিয়েছে, তখন তাকে শোধন করতে গিয়ে হিতে বিপরীত করে বসল! অন্তত পরিবেশের বিষয়ে সময় থাকতে সচেতন হতে মানুষ আজও শেখেনি। ফলে একটার পর একটা বিপদ ঘটছে, এবং প্রাণ দিয়ে তার মাশুল দিতে হচ্ছে বন্যপ্রাণকে।


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    বহুদিনের খোঁজের পর অবশেষে মিলল বিকল্প তাপশক্তির উৎস।

    2021 -এ উত্তর পূর্ব ভারতে প্রায় 30-60 শতাংশ ঘাটতি দেখা গিয়েছে প্রাক বর্ষার বৃষ্টিতে।

    আর্বানাইজেশন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারণে দিল্লি তপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হয়েছে

    স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ, সরকারি লালফিতের ফাঁসে আটকে হালপাতালের পাওনাও

    লড়াই করার ভীষণ জেদকে হাতিয়ার করে মাত্র তিন বছরেই সাফল্যের স্বাদ পেল দীপান্বিতা গুপ্তর ডায়মেনশন্স

    নতুন ভাবে নতুন ভাবনা দিয়ে মানুষদের সাজাচ্ছেন পুনম।

    উত্তরবঙ্গে বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested