×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • নন্দন আছে সেই নন্দনেই, আবার থেকেও পুরোটা নেই

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 18-11-2020

    অচেনা নন্দন চত্বর

    লকডাউন থেকে সবই কি আনলক হয়েছে? নিউ-নর্মাল বলে যাকে বলা হচ্ছে সেটা কতটা নিউ, আর কতটাই বা আগেকার চেনা নর্মাল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সেদিন দুপুরে নন্দন চত্বরে যাওয়া। শীত না পড়লেও হেমন্ত এসে গেছে। কলকাতার সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র নন্দন চত্বর কতটা ফিরেছে তার পুরনো ছন্দে?

     

    নন্দন যাত্রার সিদ্ধান্ত নিলেও বাসে ওঠার সাহস কিছুতেই জোগাড় করতে পারলাম না। কারণ, বাস ভাড়া বাড়লেও ভিড় এতটুকু কমেনি। শারীরিক দূরত্ব মানা সেখানে নিছকই প্রহসনের মতো। অতএব ক্যাবই ভরসা। আশা ছিল নন্দনের নান্দনিক প্রাপ্তিতে বাড়তি খরচ পুষিয়ে যাবে।

     

    কিন্তু নন্দন পৌঁছে রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। কোথায় সেই আগের চেনা আড্ডা, হইহই? একতারা মঞ্চের সামনের মাঠে ছোট ছোট জটলা পাকিয়ে যে আড্ডা চলত, তা কোথায়? নন্দনের সামনে ভিড় কই? রবীন্দ্র সদনের সিঁড়ি, পুকুর পাড়ের বসার জায়গা সমস্তটাই খাঁ খাঁ করছে এক অদ্ভুত শব্দহীনতাসব গেট বন্ধ, একমাত্র নন্দনের প্রবেশদ্বার ছাড়া। এই কি আমাদের চেনা নন্দন প্রাঙ্গণ, যা একটা সময় সারাক্ষণ কোলাহল মুখর হয়ে থাকত? দিনের এই সময়ে শত শত মানুষের আনাগোনা লেগে থাকত যে এখানে, তা এখন আর বোঝার বিন্দুমাত্র উপায় নেই। কোনও অদৃশ্য জাদুকরের মন্ত্রবলে আলো হাসির উজ্জ্বল জায়গাটা যেন নিঝুম পুরীতে পরিণত হয়েছে। টিকিট ছাড়া ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। আনলক প্রক্রিয়া চালু হলেও, জীবনকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর জন্য সমস্ত বিনোদনের উপাদান খুলে দিলেও সেখানে যে তাল কেটেছে, তা বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হচ্ছিল না। 

     

    নন্দনের পিছনে একাডেমি আর মুক্তমঞ্চের সামনের ছবি অবশ্য সেই দমবন্ধ করা ছবির থেকে খানিকটা হলেও যেন বাঁচাল। সেখানে আগের মতো ভিড় না হলেও জটলা চোখে পড়ল। গিটারের টুং টাং শব্দ নন্দনের অদ্ভুত সেই নিঃস্তব্ধতাকে একটু হলেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল। হরিদার চায়ের দোকানে সেদিনও আগের মতোই ভিড় ছিল অল্পবিস্তর। ছোট ছোট জটলাগুলো থেকে একত্রে ভেসে আসা গুনগুন শব্দে মনটা ভরে উঠছিল যেন। সেই চেনা নান্দনিক পরিবেশের কিছুটা যেন এখানেই ফিরে পেলাম। নতুন করে আলাপ হল আমাদের আড্ডার সঙ্গে, এক সঙ্গে গোল হয়ে বসে রাজনীতি টু টলিউডের তর্ক-আলোচনার সঙ্গে। কিন্তু সেই পুরনো আমেজ কই? সবার মুখেই মাস্ক আঁটা, ঘনঘন স্যানিটাইজার ব্যবহার করার ধুম সকলের মধ্যেই। পুলিশি নজরদারিও রয়েছে, একটু ভিড় দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়ে দিচ্ছে।

     

    নিউ নর্মালে সবই কেমন যেন বদলে যাচ্ছে, বদলে গেছে চেনা আড্ডা, চেনা জায়গাগুলো। স্বাভাবিক নিয়মে, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আমরা সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করছি করোনাকে সঙ্গে নিয়েই, কিন্তু তবুও কোথাও যেন একটা ছন্দপতন ঘটে গিয়েছে। কিছুতেই আর সেই চেনা জীবনের সুর মিলছে না। নিউ নর্মালে জীবন হাতছানি দিয়ে ডাকছে বটে, কিন্তু চেনা জায়গাগুলো হঠাৎ এভাবে বদলে যাওয়ায় থমকে যেতে হচ্ছে, চেনা শহর, চেনা কলকাতার এই সচেতন রূপ কোথাও খানিক স্বস্তি দিলেও বিষাদেরও সুর বয়ে আনছে একইসঙ্গে।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    জীবনের প্রতিপদে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েও সব বাধা জয় করে এগিয়ে চলেছেন অমৃতা ‘ন হন্যতে’ মুখার্জি।

    পুজো যখন সবার, উপহারও তো সবারই পাওয়ার কথা, নয় কী?

    প্রায় 100 বছর পর বিধ্বংসী সৌরঝড়ে স্তব্ধ হতে পারে আধুনিক পৃথিবীর লাইফলাইন ইন্টারনেট।

    শাহিনবাগ, সিংঘু বা চেন্নাই, প্রতিরোধের সামনের সারির দখল এখন মহিলাদের হাতেই।

    মহাকাশ গবেষণায় যেন এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল নাসার এই নতুন আবিষ্কার।

    দূরত্ব বিধি মানা উঠে গেলেও কলকাতার অটোরিকশায় ভাড়া আর কমল না।

    নন্দন আছে সেই নন্দনেই, আবার থেকেও পুরোটা নেই-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested