সুন্দরবনের(sundarban) প্রত্যন্ত গ্রামের একটি মেয়ে সমস্ত ভয়, ছক ভেঙে নিজের সাহস আর জেদকে অবলম্বন করে ভ্রমণপিপাসু মানুষকে সুন্দরবনের ইতিউতি দেখাচ্ছেন, চেনাচ্ছেন। রুবি শেখ নামে সেই মেয়ের ট্যুরিজমের(tourism) ব্যবসাটির নাম, ‘রুবিস ট্যুরিজম-সুন্দরবন’।
এখনও যেখানে ঠিকমতো আলো পৌঁছয়নি, মাঝে মধ্যেই লোডশেডিং হয়, ফোনের নেটওয়ার্ক কাজ করে না, মানুষের মনে নানান কুসংস্কার, ভয় বাসা বেঁধে রয়েছে, সেখানকার একটি মেয়ে সংসার, ঘরকন্না না করে, মানুষের বাঁকা কথা উপেক্ষা করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে চলেছে।
রুবি শেখের অতিথিরা
মাস্টার্স করার পর যখন চাকরি হল না রুবির, তখন তিনি স্থির করে নিজের কিছু একটা করবে। কিন্তু কী? সুন্দরবনের মানুষ হওয়ার দরুণ বরাবরই সেখানকার প্রকৃতি, খালবিল, খাঁড়িগুলোর প্রতি একটা দুর্দমনীয় টান ছিল। অজানাকে জানার ইচ্ছে ছিল। রহস্যময়ী সুন্দরবনকে আরও চেনার, দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বাধাও ছিল অনেক। সামর্থ্যও ছিল না তেমন। সঙ্গে ছিল পাড়া-প্রতিবেশীদের ভ্রুকুটি। সবটা উপেক্ষা করে, অতিক্রম করে রুবি ঠিক করেন তাঁর নেশাকেই তিনি পেশা বানাবেন। নিজেও ঘুরবেন, অন্যদেরও ঘোরাবেন। দেখাবেন, চেনাবেন তাঁর নিজের ভূমি, নিজের সুন্দরবনকে। সেখান থেকেই পথ চলা।
বর্তমানে রুবি একা হাতে ট্যুরিস্টদের নিজের নৌকোয় রাখার ব্যবস্থা করেন, তাঁদের দেখাশোনা, খাবারদাবার, রান্নার ব্যবস্থা দেখেন, নির্দিষ্ট একটি স্থান থেকে ট্যুরিস্টদের আনা এবং পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। এরই পাশাপাশি আবার গাইডেরও কাজ করেন। দশভুজা হয়ে সবটা একাই সামলান তিনি। গত তিন বছরে 50টিরও বেশি দলকে সুন্দরবন ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন তাঁর হাউজবোটে। বর্তমানে অবশ্য করোনার জন্য ট্যুরিস্ট কম আসছে।
আরও পড়ুন:লড়াকু লক্ষ্মী: 2, নিজের কিছু করার জেদ থেকেই দীপান্বিতা আজ অনন্যা
রুবি বলছেন, ‘‘এই পথ চলায় অনেক বাধা পেয়েছি, নানা কথার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবুও থামিনি। আমি জানতাম আমার লক্ষ্য কী। আর আমার পরিবার সবসময় আমার পাশে ছিল।’’ রুবি নিজের ট্যুরিজমের ব্যবসার পাশাপাশি সুন্দরবনের মধু, খেজুরের গুড়, পাটালি, ঘরে বানানো আচারও বিক্রি করেন গোটা দেশ জুড়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর কাছে অর্ডার আসে। অনলাইন বিক্রেতাদের হাত ধরে রুবি পৌঁছে দেন তাঁর হাতে বানানো সব জিনিস।
সুন্দরবনের মধু তৈরি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য
রুবি শুধুই তাঁর নিজের স্বপ্নপূরণ করছেন না, তাঁর নিজের জায়গার যে মানুষেরা বিপদে পড়েছেন তাঁদের পাশেও দাঁড়ান যথাসাধ্য। বিশেষত কোনও ঘূর্ণিঝড়ের পর বিধ্বস্ত এলাকায় তিনি পৌঁছে যান ত্রাণ নিয়ে। বাঘে কামড়েছে বা প্রাণ কেড়েছে যাঁদের, তাঁদের পাশে গিয়েও রুবি দাঁড়ান। সোশ্যাল মিডিয়াকে মাধ্যম করে ফান্ড তুলে এই সব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি। রুবির কথায়, ‘‘ভাল লাগে। এক অদ্ভুত তৃপ্তি পাই। বাঁধাধরা জীবন তো সবাই কাটায়, আমি গতেবাঁধা জীবনের বাইরে বেরিয়ে কিছু করতে চেয়েছিলাম।’’
রুবির ইচ্ছেডানা উদ্যোগ
রুবি গল্পকারও বটে। বর্তমানে ব্যবসার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রকাশনার হয়ে তিনি প্রুফ রিডারের কাজও করেন। দেশের একটি প্রত্যন্ত জায়গার মেয়ে, যেখানে সন্ধ্যা নামলেই বাঘের ভয় থাকে, থাকে আরও নানা বাধা সেখানে দাঁড়িয়ে একা হাতে রুবি নিজের প্রতিটি স্বপ্ন, ভাল লাগাকে পূরণ করে চলেছেন পরিবারের সমর্থন নিয়ে।
জল-জঙ্গলের কাব্য কি কখনও রুবিদের ছাড়া সম্পূর্ণ হয়!
লেখকদের কলমে উঠে আসা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কাহিনী আজকেও নির্মম বাস্তব
বাংলা সিনেমার দর্শক সংখ্যা কী কমছে? নেপথ্যে কী কারণ?
ছবিতেই গল্প বুনে অনন্যা মধুরিমা
এই 2020 সালেও সমাজের চোখে নব বিবাহিত বরের মৃত্যু মানেই কনে অপয়া রাক্ষসী
বরাবর যে বর্ণবৈষম্য চলে আসছে তার ছাপ করোনা সংক্রমণের হারেও পড়েছে এবং ফল হিসেবে প্রাণ হারিয়েছেন বহু
মা কি সবার ক্ষেত্রে এক হয়? নাকি তফাৎ থাকে কোথাও?