বিয়ের পর পরই ছেলের মৃত্যু হল কোনও কারণবশত, দায়ী কে? পুত্রবধূ। যার নতুন জীবনের স্বপ্ন তো চুরমার হয়েই গিয়েছে, প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা তাকেও সহ্য করতে হচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যেই আরও কিছু তকমা জোটে নবপরিণীতা থেকে সদ্যবিধবা মেয়েটির। ‘ডাইনি’, ‘রাক্ষসী’, ‘অপয়া’ ইত্যাদি। তার ভাগ্যদোষেই নাকি স্বামী মারা গিয়েছে। কী ভাবছেন, একবিংশ শতাব্দীতেও এ সব হয়? হ্যাঁ দিব্যি হয়।
10 ডিসেম্বর বাঘাযতীনের বাসিন্দা 26 বছরের নীলাদ্রি চক্রবর্তী গাঁটছড়া বাঁধেন তাঁর বহুদিনের বান্ধবী অনিন্দিতা বসুর সঙ্গে। নতুন পরিবারে স্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বিয়ের ছবি দিয়ে পোস্টও করেন ফেসবুকে। কিন্তু বিয়ের পরদিনই ভোররাতে মারা যান নীলাদ্রি। নতুন জীবন শুরুর আগেই থমকে গেল দুটো জীবন। এমন মর্মান্তিক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেয়নি। তার পরই নতুন করে ধরা পড়ল চকচকে খোলসের আড়ালে থাকা বর্তমান সমাজের কদর্য রূপটা। সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য আসতে থাকল, অনিন্দিতার জন্যই নাকি নীলাদ্রি মারা যান। নানা অশ্রাব্য ভাষায় অনিন্দিতাকে আক্রমণ করে বটতলার কূটকচালি চলতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু এ সবের মাঝে মেয়েটির দোষ কোথায়? শুধু কি মেয়ে বলেই এই 2020 সালেও অষ্টাদশ শতাব্দীর মতো গঞ্জনা সইতে হবে তাকে?
পৌরাণিক কাহিনী হোক বা বাস্তব জীবন, পুরুষসঙ্গীর মৃত্যুর জন্য কাঠগড়ায় নারীকেই দাঁড়াতে হয়। বছর 30 আগের একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিই। 1990 সালের 4 মার্চ হিন্দি ছবির জনপ্রিয় মুখ রেখার সঙ্গে বিয়ে হয় ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালের। বিয়ের কয়েক মাস পরে রেখা যখন লন্ডনে, তখন মুকেশ আত্মহত্যা করেন। দায়ী কাকে করা হয়? ‘বিষকন্যা’ রেখাকে। এর পর বহু সময় কেটে গিয়েছে, গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। হঠাৎই সেই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা। তাঁর মৃত্যুর পর কাঠগড়ায় উঠতে হয় তাঁর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে। এ বার পালা অনিন্দিতার। সেলিব্রিটি আর সাধারণ মানুষের মধ্যে মিল কিন্তু অনেক। মৃত্যু হয়েছে স্বামী বা পুরুষ বন্ধুর আর দায়ভার চাপানো হয়েছে স্ত্রী বা বান্ধবীর উপর। এক ঘটনা, এক প্লট, শুধু চরিত্রের নামগুলো পাল্টে যায়।
মুকেশ আগরওয়ালের মৃত্যুর পর জানা যায়, তিনি অত্যন্ত অভব্য আচরণ করতেন রেখার সঙ্গে, একই সঙ্গে তিনি ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন। সুশান্তও ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন। তাঁরা দু’জনেই সেই অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন কিনা তার উত্তর কোনও দিনই জানা যাবে না। নীলাদ্রির মৃত্যুতে দোষ যদি কারও থাকে, তবে তা সদ্যপ্রয়াত যুবকেরই। বৌভাতের আগের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করে তিনি জ্বলন্ত সিগারেট হাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই সিগারেটের আগুন থেকেই বালিশে আগুন ধরে ঘুমের মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান তরতাজা ছেলেটি।
কিন্তু ঘটনাক্রম যাই হোক না কেন, সে সব উপেক্ষা করে দোষ গিয়ে পড়বে সদ্যবিধবা তরুণীটির উপরেই। রেখাকে দাগিয়ে দেওয়া হয় ডাইনি, বিষকন্যা বলে। রিয়ার বেলায় বলা হল তিনি নাকি কালাজাদু করেন। আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ার খাপ পঞ্চায়েত অনিন্দিতাকেও ‘রাক্ষসী’, ‘ডাইনি’ তকমায় ভূষিত করছে। আমাদের সমাজের ধারণাই হল, ‘ছেলে মানে সোনার আংটি, তার দোষ থাকতে পারে না’। ছোটবেলা থেকে আজন্ম সংস্কারে লালিত হতে হতে আমাদের বদ্ধমূল বিশ্বাস, ছেলেরা লক্ষ্মীটি, কিছুই পারে না। তাদের কোনও দোষ ভুল করেও হতে পারে না। সব দোষ মেয়েদের, এমনকী ছেলেরা যদি কোনও ভুল করেও ফেলে তবে তার দায়ও তার সঙ্গিনীর। দোষ না করেও দোষের ভাগীদার হতেই হবে, মাথা পেতে সমস্ত দোষারোপ নিতে হবে, কারণ তাঁর সঙ্গে থাকাকালীনই তাঁর সঙ্গীর মৃত্যু ঘটেছে, সে পারেনি ভয়ংকর ক্ষতি আটকাতে। পুরাকালে হয়তো বেহুলার মতো রিয়া বা অনিন্দিতা স্বর্গে গিয়ে তাঁদের প্রিয় মানুষটির প্রাণ ভিক্ষা করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখন তাও সম্ভব নয়। তাই খাপ পঞ্চায়েতের বাছা বাছা বুলি বরাদ্দ হবেই মেয়েটিকে।
শুধু বাস্তব জীবনেই যে এই ছবি দেখা যায় তা নয়, গল্প, উপন্যাস এমনকী রোজ সন্ধ্যাবেলা যে সিরিয়ালগুলো আমাদের মনোরঞ্জন করে, সেখানেও এর ব্যতিক্রম নেই। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও, অনেক অগ্রগতি, নারী স্বাধীনতা নিয়ে তীব্র আলোচনার পরেও ভারতের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আজও স্বাধীন নারীদের মেনে নিতে পারে না। তবে এত অন্ধকারেও একটি আলোর রেখা রয়েছে। সদ্যপরিণীতা অনিন্দিতাকে নিজের পরিবারে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন নীলাদ্রি। সন্তানের অকালমৃত্যুর পরেও নীলাদ্রির পরিবার কিন্তু অনিন্দিতা সম্পর্কে কোনও কটূক্তি করেনি। বরং তাঁকে বিধবা পুত্রবধূ নয়, কন্যার অধিকারেই সেই বাড়িতে রাখতে চান তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়ার চণ্ডীতলায় কিন্তু সেই কথার উল্লেখমাত্র নেই।
এই গান বর্তমান পরিস্থিতিরই এক রেপ্লিকা
এনজাইমের ঘাটতির ফলে পুরুষ হয়ে যায় মহিলা।
বরাবর যে বর্ণবৈষম্য চলে আসছে তার ছাপ করোনা সংক্রমণের হারেও পড়েছে এবং ফল হিসেবে প্রাণ হারিয়েছেন বহু
বর্ষশেষের আগের রাতে রূপম ইসলাম তাঁর ভক্তদের উপহার দিয়ে গেলেন এক অনন্য সঙ্গীতময় সন্ধ্যা।
বাঁধ দিয়ে সুন্দরবনের সদ্যোজাত নিচু দ্বীপগুলি বাঁচানো সম্ভব নয়, জনবসতি সরিয়ে নেওয়াই সমাধান
মৌমাছিবিহীন মধু তৈরি করছে ইজরায়েলি সংস্থা Bee-io যাতে শুধু মৌমাছিই বাঁচবে না