ঘড়ির কাঁটা বলছে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা। ডাক্তারবাবু বললেন, ‘তোমার মায়ের পায়ের অবস্থা ভাল নয়। এখুনি ভর্তি করতে হবে।' পায়ে ইনফেকশন, সেখান থেকে প্রায় গ্যাংগ্রিন মতো হয়ে পুঁজ রক্ত বের হচ্ছে। পা ফুলে গেছে, সার নেই একদমই। তৎক্ষণাৎ ভর্তি করাতে হবে। আর চার পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মতোই 2021 সালে লম্বা লাইন দিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের অধিকারী হয়েছে মা। বাড়িতে সেই কার্ড আছে। আর মা’কে যে নার্সিং হোমে দেখানো হয়, তার নামটাও কার্ডে উল্লিখিত আছে। বললাম এখানেই ভর্তি করাতে চাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে। স্পষ্ট উত্তর এল ‘হবে না, অন্য কোথাও নিয়ে যান।' মানে! পেশেন্টের এই অবস্থা, অন্য কোথাও নিয়ে যাব? কার্ডে নাম লেখা থাকলেও ভর্তি নেবে না? না, নিল না ভর্তি। ফেরত পাঠানো হল।
টালিগঞ্জের সেই নার্সিংহোম থেকে বেহালার আর এক বেসরকারি হাসপাতাল এলাম। ঘড়ির কাঁটা বলছে তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মা’কে অতি যত্ন সহকারে নিয়ে এসে রাখলেন। আমি আর দিদি ছুটলাম অ্যাডমিশন বিভাগে কথা বলতে। প্রথম প্রশ্নই এল, ‘কোন ডাক্তার?’, উত্তরটা ওদের এমপ্যানেল্ড বা নথিভুক্ত ডাক্তারদের সঙ্গে না মেলায় আবারও উত্তর পেলাম, ‘বেড নেই। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য যে ক’টা বেড আছে তা ভর্তি।' অতএব এখানেও হল না। আবার গাড়ি ঘুরিয়ে নিউ আলিপুরের একটি এবং টালিগঞ্জের আর একটি হাসপাতালে গেলাম। একই উত্তর, ‘ক্যাশ নইলে মেডিক্লেম। স্বাস্থ্যসাথী চলবে না।' এদিকে মায়ের অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সমানে। রস গড়িয়ে পড়ে জুতো ভিজে গেছে।
অবশেষে হাজরার এক হাসপাতালে ‘সোর্স’ কাজে লাগিয়ে ‘রেফারেন্স’ নিয়ে গেলে এমার্জেন্সিতে তৎক্ষণাৎ দেখে সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়। যখন অবশেষে ডাক্তার মা’কে দেখলেন, তখন বাজে রাত এগারোটার কিছু বেশি। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে এগারোটা, সাড়ে চার ঘণ্টা হয়রানির শিকার হতে হল স্রেফ একটা কার্ড কোথাও নেবে না বলে, অথচ নেওয়ার কথা!
কিন্তু কেন এমনটা হবে? আজ মায়ের পায়ের ইনফেকশন, সেই জায়গায় যদি মুমূর্ষু রোগী থাকত, যার এক মিনিট নষ্ট হলেও বিশাল ক্ষতি হয়ে যেত, তার দায় কে নিত? বা আমাদেরও অকারণ যে হয়রানির শিকার হতে হল, তার দায় কে নেবে?
এখন প্রশ্ন করতে পারেন সরকারি জায়গায় কেন গেলাম না? তাহলে তার আগে আর একটা উত্তর দিন, কার্ডের আওতায় বেসরকারি জায়গার নাম লেখা থাকলেও তারা কেন বাধ্য নয় পেশেন্ট নিতে? কেন বারবার ফেরানো হয়? কলকাতার গুটিকয় হাসপাতাল (তা-ও তাদের ইচ্ছে হলে তবেই) এই কার্ডে ভর্তি নিচ্ছে, বাকিরা? অধিকাংশ জায়গাই ফিরিয়ে দিচ্ছে। আর যারা ভর্তি নিচ্ছে, তারা পেশেন্টের ছুটি হয়ে যাওয়ার পরেও স্রেফ সরকারের থেকে প্রাপ্য আদায় করার জন্য পেশেন্টকে আরও চার পাঁচদিন রেখে দিচ্ছে।
হ্যাঁ, যে মানুষটি সুস্থ, তাকে স্রেফ টাকা পাওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বিল বাড়ছে, অন্যদিকে তেমনই যে রোগীর বেড প্রয়োজন সে বেড পাচ্ছে না। ঘটনাটি ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-এর। এই রকম উদাহরণ ভুড়িভুড়ি আছে।
আরও পড়ুন:আজও অপুষ্ট শীর্ণকায় ভারতবর্ষ ও তার সন্তানেরা
এখানেই একটাই কথা কেন এই প্রকল্প? সোর্স থাকলে তবেই কাজ হবে? আর যাদের নেই? প্রকল্প আছে, ঘটা করে প্রচার আছে। কিন্তু কাজ নেই লাইন দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর হাতে পাওয়া গিয়েছিল যে অমূল্য রতন, সেই ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের।
স্বাস্থ্য নিয়ে ছেলেখেলা কবে বন্ধ হবে? উত্তর কে দেবে? বদলাবে কে এই পরিস্থিতি? শুধু প্রকল্প আনলেই হবে, দেখাশোনা করতে হবে না? নাকি এভাবেই বারবার হয়রান হয়ে যেতে হবে? এ হাসপাতাল, ও হাসপাতাল ঘুরে রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়বে। সরকার টাকা দেবে কিনা, হাসপাতাল কী ভাবে টাকা পাবে, সেটা তাদের মধ্যের ব্যাপার, রোগী কেন এর শিকার হবে? আর যদি এই কার্ডের সুবিধা শুধুই সরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায়, তাহলে তা-ও সরকারের পক্ষে স্পষ্ট করে জানানো হোক।
শাহিনবাগ, সিংঘু বা চেন্নাই, প্রতিরোধের সামনের সারির দখল এখন মহিলাদের হাতেই।
কলোরাডো নদীর জল প্রতি 1 ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে 9.3 শতাংশ কমে যাচ্ছে।
অ্যাক্রোপলিস মলে চলছে কলকাতা স্ট্রিট ফুড ফেস্টিভ্যাল।
আগের ফুলে থেকে কাজ করতে পারছিল না বলে মউদি ফুল বদল করল
ডিপ্রেশন যে একটা রোগ, যাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন সেটাই এই গল্প দেখাল।
চাঁদের কারণে আগামী দশকে পৃথিবী ভাসতে চলেছে।