×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সুপ্রিম কোর্ট ঠিক কী দিল যৌনকর্মীদের?

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 30-05-2022

    প্রতীকী ছবি।

    সিধা পয়েন্ট পে আতি হুঁ। ইহাঁ বৈঠে সবকা কুছ না কুছ তো ধান্দা হোতা হোগা, বিজনেস। কই ডক্টর হোগা, কই ইঞ্জিনিয়ার, কই টিচার, কই চানা বেচতা হ্যায়... দিমাগওয়ালা দিমাগ বেচতা হ্যায়, হামারা ধান্দা শরীর বেচনা হ্যায় হাম শরীর বেচতে হ্যায়। ক্যায়া গলত করতে হ্যায়?’

     

    গাঙ্গুবাই কঠিয়াওয়ারি সিনেমায় এই ডায়লগটিই শোনা যায় গাঙ্গুবাই ওরফে আলিয়া ভট্টের মুখে। প্রশ্নটা ছিল সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যে যাঁরা যৌনকর্মীদের সমাজের অংশ বলে মনে করে না। খারাপ নজরে দেখে। সেই পুরাকাল থেকে, সাহিত্য, রচনা, পার হয়ে বর্তমান সমাজ। বাঁকা নজরেই দেখা হয় তাঁদের। সমাজের নানান সুযোগ সুবিধা থেকে তাঁরা ব্রাত্য থেকেছেন। সহ্য করেছেন পুলিশের অকথ্য অত্যাচার। একটা সময়ের পর কলকাতাতেই তৈরি হয় দুর্বার মহিলা সমিতি সমন্বয়। ভারতের প্রথম যৌনকর্মীদের সংগঠন। লড়াই শুরু হয় কলকাতার সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নিয়ে। 

     

    বহুবছর আগে ডক্টর স্মরজিৎ জানা যে লড়াই শুরু করেছিলেন, অবশেষে সেই লড়াই যেন খানিক সফল হল। সুপ্রিম কোর্ট যৌনকর্মী এবং যৌনপেশার স্বীকৃতির প্রসঙ্গে সদর্থক অবস্থান নিল। 

     

    শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছে, যৌনকর্মীদের সাধারণ মানুষ হিসেবেই গণ্য করতে হবে। তাঁদের সম্মান দিতে হবে। আইনের রক্ষাকবচ তাঁদের জন্যও। অন্যান্য পেশার মতো এটাও একটি পেশা। ফলে পুলিশ এই পেশার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের অকারণ গ্রেপ্তার বা হেনস্থা করতে পারবে না। সম্মতিতে যাঁরা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন তাঁদের বিষয়ে নাক গলাতে বা ফৌজদারি মামলা করতে পারবে না আর পুলিশ। শুধু তাই নয়, এতদিন মা যৌনকর্মী হলে তাঁদের সন্তানকে অনেক সময় তাঁদের থেকে আলাদা রাখা হত, এখন যৌনকর্মীরা তাঁদের সন্তানকে নিজেদের কাছেই রাখতে পারবেন

     

    সংবিধানের 21 নম্বর ধারা অনুযায়ী সব ভারতীয় নাগরিকের সম্মাননীয় জীবন পাওয়ার অধিকার আছে, যৌনকর্মীরাও তার ব্যতিক্রম নয় সুপ্রিম কোর্টের এই বক্তব্য যেন সেটাতেই সিলমোহর দিল। 

     

    যৌন পেশাকে পৃথিবীর আদিমতম পেশা বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই পেশার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের এতদিন এক ঘরে করে রাখা হতো। মূল সমাজের অংশীদার মনে করা হত না। এখন যেন সেই ভাবনায় খানিক বদল আসতে চলেছে। মানবাধিকার কর্মী রত্নাবলী রায় এই বিষয়ে জানান, ""এটি একটি মাইলফলক রায় সুপ্রিম কোর্টের। ওরা চিরকাল প্রান্তিক হিসেবেই থেকেছে সমাজে, যে জায়গাটা ওদের দরকার ছিল পায়নি এতদিন। কাজ করলেও কাজের স্বীকৃতি ছিল না তাদের। এবার সেটা হবে।'' একই বক্তব্য সিটিজেনস ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য শুভজিৎ মৌলিক। তিনি বলেন, ""এটা একটা বড় রায়। এতদিন যৌনপেশাকে অপরাধ মনে করা হতো, এখন আর সেটা হবে না। এই পেশার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যখন তখন অ্যারেস্ট করে হেনস্থা করা যাবে না। আগে পুলিশ তল্লাশির নামে এদের ঘরদোর ভেঙে দিত, অত্যাচার করত সেটা বন্ধ হবে।''

     

    যাঁরা এতদিন দাঁতে দাঁত চেপে এই বিষয়টা নিয়ে লড়াই করে গেলেন সেই দুর্বারের কী বক্তব্য শীর্ষ আদালতের এই রায় নিয়ে? দুর্বারের সভাপতি বিশাখা লস্কর জানান, ""দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে আমরা যে লড়াই চালাচ্ছিলাম যৌনকর্মীদের জন্য যে তাদের পেশার স্বীকৃতি দিতে হবে, তাদেরও শ্রমিক বলে মনে করতে হবে সেটা যেন এখন আংশিক ভাবে সফলতা পেল। সুপ্রিম কোর্ট কদিন আগে যে রায় দিল তাতে আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে যৌনকর্মীদের নিয়ে কথা হচ্ছে, এ তো সুখবরকিন্তু আরও খুশি সেদিন হব যখন এই পেশা আইনগত স্বীকৃতি পাবে। আশা রাখি আগামী রায়ে সেটা পাব। তবে একটা বিষয় ধোঁয়াশা থেকেই গেল, ওরা কী সুযোগ সুবিধা পাবে, কী কী করা যাবে এবং যাবে না সেটা বলল কোর্ট, পতিতালয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। ফলে এখানে একটা প্রশ্ন থাকছেই। তবে আংশিক ভাবে যে আমাদের লড়াই সফল তা বলাই যায়।''

     

    ইজ্জত সে জিনে কা, কিসি সে ডর নে কা নেহি, না পুলিশ সে, না এমএলএ সে, না মন্ত্রী সে।' গাঙ্গুবাই একথা বললেও, এতদিন কেউ মানেনি এবার কোর্টের রায়ের পর অবস্থার উন্নতির আশায় ভারতের 10 লাখেরও বেশি যৌনকর্মী। যাঁরা কাজ তো করতেন কিন্তু স্বীকৃতি বা সম্মান কোনওটাই পাননি এতদিন। যৌনকর্মী বলে তাঁদেরও যে ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে সেটাও কেউ বোঝেনিএবার সুপ্রিম কোর্ট সে বিষয়ে কথা বলল। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, 18 বছরের নিচে কাউকে এই পেশায় জোর করে আনলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু যাঁরা স্ব-ইচ্ছায় আছে তাঁদের বিরুদ্ধে নয়। আর কোনও যৌনকর্মী যদি যৌন হেনস্থার অভিযোগে করে তার বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে পিঙ্ক সিনেমার সেই ডায়লগটি যেন মনে পড়ে যায়, যেখানে অমিতাভ বচ্চন বলছেন, চাহেউ সে বোলনেওয়ালি কই পরিচিত হো, গার্লফ্রেন্ড হো কই সেক্স ওয়ার্কার হো ইয়া আপকি আপনি বিবি হি কিঁউ না হো; নো মিনস নো। হোয়েন সামওয়ান সেজ নো, ইউ স্টপ।'

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    দূষণ যে এত ভয়াবহ হতে পারে তা কে জানত!

    ভোট উৎসবে বাঙালির নতুন সঙ্গী রাজনৈতিক মিষ্টি।

    সচেতনতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা দিয়ে সিকদামাখাই গ্রামের মানুষ রুখে দিল করোনাকে।

    এনগেজড হওয়ার পরেও মনে নানান সমস্যা, চিন্তা উঁকি দেয়, তাদের কী সামলানো যায়?

    রাজ্যে একদিকে চলছে ভোট প্রচার, আর একদিকে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকদিনেই 400 ছাড়িয়ে গেছে।

    বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্রীড়াঙ্গনে যেটুকু ভারতের সাফল্য, তার পুরোটাই এ যাবৎ মেয়েদের।

    সুপ্রিম কোর্ট ঠিক কী দিল যৌনকর্মীদের?-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested