×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মধুর ভবিষ্যৎ কতটা মধুর?

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 22-03-2022

    নিজস্ব ছবি

    রোজ সকালে তো বাজারে এত লিটার লিটার দুধ আসে তার উৎস কী? কখনও মনে প্রশ্ন এসেছে? জানতে চেয়েছেন? কোন গরু, কোথাকার গরুর দুধ? না বোধহয়! ঠিক একই কথা মধুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু তাও যেমন এখনও কিছু জায়গায় খাঁটি গরুর দুধ পাওয়া যায়, তেমনই খাঁটি মধুও পাওয়া যায়। কিন্তু কদিন পর দুধের বাজার মূলত যেমন সিনথেটিক দুধ গ্রাস করেছে তেমনই অদূর ভবিষ্যতে মধু এবং মাংসের বাজার সিনথেটিক মধু এবং মাংস গ্রাস করবে। সিনথেটিক দুধ- মধু- মাংস কী ভাবছেন? সিনথেটিক মানে প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া দুধ, মধু, মাংসে যা যা নিউট্রিয়েন্ট থাকে হুবহু সেগুলো দিয়ে সেগুলো ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম উপায়ে বানানো। শুধু খাদ্যের গুণ নয়, স্বাদ গন্ধ চেহারাতেও অবিকল একই রকম খাদ্য ল্যবরেটরিতে বানানোই এখন বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য। মধুর ক্ষেত্রে সেটা খানিক সফলও হয়েছে।

     

    কিন্তু মধু নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ এবং উৎসাহ সবচেয়ে বেশি কেন? তার কারণ, মৌমাছিদের অতিরিক্ত ব্যবহার করে মধু বানানোর ফলে তাদের ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চললে একদিন মৌমাছিরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

     

    পৃথিবীতে প্রায় 20 হাজার প্রজাতির মৌমাছি আছে। যাদের মধ্যে মাত্র সাত ধরনের মৌমাছি মধু জমাতে পারে। এবার এদের এত ব্যবহার করা হয় মধু বানানোর জন্য যে তারা ক্রমশ জিনগতভাবে প্রাকৃতিক কারণেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের ভাইরাস এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে। এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদেরসবাই জানে মৌমাছির থেকে মধু পাওয়া ছাড়াও প্রকৃতিতে তাদের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। ফুল ফোটার পর এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে গিয়ে পরাগমিলনে তারা সাহায্যে করে। মৌমাছি না থাকা মানে ফুল থেকে ফল না হওয়া এবং তার ফলে খাদ্যের অভাবে সভ্যতার ধ্বংসের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। পৃথিবীর 70 শতাংশ চাষাবাদে মৌমাছি সাহায্য করে পরাগমিলন ঘটিয়েএদের শরীর, পা, ডানায় পরাগ লেগে যায় সহজেই। ফলে পুংকেশরের রেণু গর্ভকেশরে গিয়ে পড়ে ফুল থেকে ফলের সৃষ্টি হয়।

     

    আরও পড়ুন:দুই বন্ধুর ভাবনায় বাঁচছে গঙ্গা

     

    সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে মৌমাছির সংখ্যা নজরে পড়ার মতো কমে যাচ্ছে যার খারাপ প্রভাব কৃষি উৎপাদন তো বটেই জীববৈচিত্র্যের উপরেও পড়বেকিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? এর কারণ হল, মৌমাছিদের স্বাভাবিক আবাসস্থল কমে যাচ্ছে, অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য এদের অতিরিক্ত ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এখানেই সমস্যা। মনে করা হয় মৌমাছিবিহীন পৃথিবীতে সভ্যতা মাত্র চার বছর টিকে থাকতে পারবে। মৌমাছি ছাড়া চাষ সম্ভব নয়। ফলে মৌমাছি না থাকা মানে খাদ্য না থাকা।

     

    এই সমস্যা কাটাতেই ইজরায়েলের চার বন্ধু, অরি, অফির, ইয়ারণ, এবং এফরাত মিলে একটি সংস্থা তৈরি করে Bee-ioসেখানে তারা ল্যাবরেটরিতে মধু তৈরি করে। কী ভাবে? মৌমাছির প্রোটিন এবং ফুলের মধু নিয়ে ল্যাবে মেশিনের সাহায্যে মধু তৈরি করে তাঁরা যা প্রাকৃতিক মধুর মতোই দেখতে, এবং খেতে। যেখানে একটা মৌমাছি তার গোটা জীবনে এক চা চামচের বারো ভাগের এক ভাগ মধু তৈরি করে সেখানে এই সংস্থা এক সপ্তাহে তিন টন মধু তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। যদিও সে পদ্ধতি একটু জটিল। কিন্তু বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতির ক্ষতি না করে তাঁরা মৌমাছিবিহীন মধু তৈরি করে মৌমাছিদের রক্ষা করতে চাইছে, বাঁচাতে চাইছে। 

     

    যা ল্যাবে তৈরি তা কখনও কোনদিন প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি মধুর সমকক্ষ হতে পারে?এই বিষয়ে অনেকের মতোই সন্দিহান মধু বিশেষজ্ঞ স্বর্ণেন্দু সরকারতাঁর বক্তব্য, "আমার এটা বিশ্বাস হয় না। আসলে এসব বলে আগামীদিনে মধুর বাজারটাও অনেকে দুধের বাজারের মতো করে দিতে চাইছে, যেখানে অফুরান সাপ্লাই তো থাকবে কিন্তু উৎস কেউ জানবে না।" সন্দেহবাদীদের মতে, যদি মধু সংগ্রহ করা, চাক ভাঙা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মৌমাছি ক্রমশ তার পরাগমিলনের ক্ষমতা হারাবে।

    মৌমাছিদের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মৌমাছিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, হারিয়ে যেতে পারে পৃথিবীর বুক থেকে, এই আশঙ্কার জবাবে তাঁরা বলছেন, ফলে মৌমাছিদের নিয়ে ভয় পেয়ে মৌচাক ভাঙা বন্ধ করলে মানুষেরই বিপদ। উল্টো দিকে বিরোধীদের বক্তব্য, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রকৃতির উপর অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এমন অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করেছে যে জীবজগতের সহজাত অভিযোজন ক্ষমতা তা বহন করতে পারছে না। মৌমাছিদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারও সেই পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে।

     

    আরও পড়ুন:চিরন্তন প্রশ্ন, মৃত্যুর উত্তর

     

    ফলে ভবিষ্যতে মধুর জন্য কী অপেক্ষারত তা কেউ জানে না। মধু কি মৌচাকে মিলবে, না কারখানায়? উত্তরটা আমাদের এখনও অজানা।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অবদান কমছে ভারতে

    ব্যবসা বাদ দিয়ে সিনেমা হয় না বলেই উত্তম সূচিত্রার স্মৃতিবিজড়িত সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলগুলো

    অক্ষমতা নিয়েও যে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, দেশের মুখ উজ্জ্বল করা যায়, প্যারাঅলিম্পিক্স যেন তা স্মরণ করিয

    সরকারি স্কুলের বাচ্চারা তো স্কুলে ফিরল, বেসরকারি স্কুলের বাচ্চাদের কী হবে?

    যতটা সম্ভব কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। তবেই আগামী দিনে যে বিপদ অপেক্ষারত তাকে এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। 

    সারদা থেকে নারদা হয়ে ভ্যাকসিন, ‘কেলো’ যেন আর তৃণমূলের পিছু ছাড়ছে না!

    মধুর ভবিষ্যৎ কতটা মধুর?-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested