×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সেনেগালের সমাধান

    বিতান ঘোষ | 12-05-2020

    প্রতীকী ছবি

    বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর মোকাবিলায় কোন প্রতিষেধক কার্যকরি হবে, তাই নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ব্যাপারে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সব গবেষণাপত্র বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিতও হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি মার্কিন জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি ভুল মূল্যায়ন করে ফেলে। পরে অবশ্য সেটা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হওয়ায়, তারা সেই ত্রুটি সংশোধন করে।

    এই ত্রুটি ও বিতর্ক মূলত করোনা প্রতিরোধী দুটি ওষুধকে কেন্দ্র করে। তার একটি হল, বহু চর্চিত হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইন’, অন্যটি ‘রেমডেসিভির’। এই দুটির মধ্যে করোনা মোকাবিলার অব্যর্থ দাওয়াই কোনটি, তাই নিয়ে চিকিৎসক মহলেও পরস্পর বিরোধী মত রয়েছে। বিশ্বের তাবড় সংবাদমাধ্যমগুলি এই কিছুদিন আগে অবধিও রেমডেসিভির-এর পক্ষে কথা বলছিল। এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিনা জানা নেই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাদের গবেষণাপত্রে রেমডেসিভির-কে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিল। করোনা মোকাবিলায় হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইন উপেক্ষিতই ছিল। সম্প্রতি জনৈক ফরাসি বিজ্ঞানী করোনার প্রতিষেধক হিসাবে, হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে বিশ্বকে ভাবতে বাধ্য করেন।

    আমেরিকার ওয়াশিংটনে শহরের প্রখ্যাত চিকিৎসক, বর্তমানে পৃথিবী বিখ্যাত স্বাস্থ্যবিদ্যার শিক্ষক— প্রায় 30 বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন— এরিক বার্গ দেখাচ্ছেন, রেমডেসিভির ওষুধটির প্রয়োগে রোগীর কত রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। চিনের উহান প্রদেশে প্রায় 250 জন করোনা আক্রান্তের উপরে এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, রোগীদের অনেকেই এতে সুস্থ হচ্ছেন। সাধারণ ফ্লু ভ্যাকসিনের চেয়ে এটি অনেক বেশি কার্যকরও বটে। তবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে তাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা (thrombosis) এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে 'Heart toxicity' বলা হচ্ছে।

    পাশাপাশি, প্রায় 1000 জন রোগীর শরীরে হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করে দেখা যাচ্ছে, তাদের শরীরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। প্রায় 91.5% রোগী 10 দিনের মধ্যে কোভিডের প্রকোপ থেকে মুক্ত হতে পারছেন। রেমডেসিভির-এর ক্ষেত্রে রোগীর এই সুস্থ হওয়ার পর্বটাই প্রায় 11 থেকে 15 দিনে প্রলম্বিত হচ্ছে। তাছাড়া হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইনে মৃত্যুহার মাত্র 0.5%. তবে কি রেমডেসিভির-এর তুলনায় প্রায় 6 গুন কম দামের হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইনের ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভরসা রাখতে পারেনি? তাই কি তাকে করোনার সম্ভাব্য প্রতিষেধক হিসাবে প্রথমে উপেক্ষা করা হয়েছিল?

    প্রখ্যাত সংবাদ সংস্থা 'আল জাজিরা' আফ্রিকা মহাদেশের একটি পিছিয়ে থাকা দেশ, সেনেগালকে নিয়ে একটা সুন্দর খবর প্রকাশ করেছে। সাহারা উপকন্ঠে থাকা এই দেশটি মাত্র 1ডলারের বিনিময়ে একটা অদ্ভুত যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলেছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে সেই দেশের প্রত্যেক নাগরিকের করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে, রোগ আক্রান্ত এবং সম্ভাব্য আক্রান্তদের পৃথক করে রাখা হচ্ছে। এই যন্ত্রে কোনও ব্যক্তি থুতু ফেললেই, সেটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে জানিয়ে দিচ্ছে ব্যক্তিটি করোনায় আক্রান্ত কিনা। 6কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা মাত্র 50টি। অন্য দেশ থেকে ভেন্টিলেটর আনাতে হলে সেনেগালকে প্রায় 16000 ডলার খরচ করতে হত। কিন্তু নিজস্ব প্রযুক্তিতে তারা এমন ভেন্টিলেটর তৈরি করে ফেলেছে, যাতে মাত্র 60 ডলার খরচ করতে হচ্ছে। অতীতে ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহৃত ক্লোরোকুইনকেই করোনা চিকিৎসায় সীমিত ভাবে ব্যবহার করে সাফল্য পাচ্ছে সেনেগাল। উন্নত পরীক্ষাগার ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা সত্ত্বেও সেনেগালের এই কার্যকরী পদক্ষেপ আমাদের বিস্মিত করছে। বিশ্বের উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দেশগুলিও যখন করোনা মোকাবিলায় কার্যত দিশাহীন, সেই সময় সেনেগাল বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই ভাবেও করোনার বিরুদ্ধে লড়া যায়। স্বল্প খরচে দেশের সকল মানুষের করোনা পরীক্ষা এক্ষেত্রে জরুরি। ব্যয়বহুল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অধিক মূল্যের প্রতিষেধক বিশ্বের খুব কম মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তাই, করোনা মোকাবিলায় স্বল্প খরচের বিকল্প ব্যবস্থাগুলি নিয়ে এখনই নাড়াচাড়া করা উচিত। সেনেগালকে সারা বিশ্ব চিনত বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র, ক্ষুধাপীড়িত দেশ বলে, যেখানকার জলদস্যুদের কল্যাণেই সম্প্রতি বারবার সে দেশ সংবাদ শিরোনামে এসেছে। এবার কি তাদের অন্য পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার পালা?


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    আজকের দিল্লিকে দেখলে গালিব কী লিখতেন জানা নেই। কিন্তু সমকালীন ঘটনার অভিঘাত যদি কবিমানসকে বিষণ্ণ করে

    বামপন্থার পুনরুত্থান, নাকি জনপ্রিয়তাবাদের হাত ধরে নব্য নাৎসি দমন; রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত কী?

    জন্মিলে মরিতে হইবে, ক্যাপিটালিজম সঙ্গ দেবে!

    রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় লাগাম পরানোর দুরূহ কাজও করতে হবে বিজেপিকে

    সিন্ধু পাকিস্তানে, জাতীয় সঙ্গীতে শব্দ বদলের আর্জি নেতার

    হঠকারিতায় বিচ্ছিনতাবাদের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে ফেললে তাকে বন্ধ করা মুশকিল।

    সেনেগালের সমাধান-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested