১৮৫৭-র সিপাহি বিদ্রোহে নিজের প্রিয় শহর দিল্লিকে পুড়তে দেখে মনোবেদনায় গালিব লিখে ফেলেছিলেন, "আল্লা আল্লা দিল্লি না রহি, ছাওনি হ্যায়, না কিলা, না শহের, না বাজার, না নাহার; ক্যায়সা মুখতাসর - শহর সাহরা হো গ্যয়া।" আজকের দিল্লিকে দেখলে গালিব কী লিখতেন জানা নেই। কিন্তু সমকালীন ঘটনার অভিঘাত যদি কবিমানসকে বিষণ্ণ করে তোলার জন্য যথেষ্ট হয়, তবে গালিবের কলম থেমে যাওয়াও অস্বাভাবিক ছিল না। সিপাহি বিদ্রোহে দিল্লির পুরোনো কেল্লা, রাজপথ ভাঙা পড়েছিল। আজকের দিল্লিতে ইমারত মহল্লার পাশাপাশি ভাঙছে দেশের বহুত্ববাদী ঐতিহ্য, বেআব্রু হয়ে পড়ছে প্রতিস্পর্ধী শাসকের অদ্ভুত নীরবতার বিষয়টি।
সিপাহি বিদ্রোহ ভারতবাসীর প্রথম 'ভারতীয়' হিসাবে যূথবদ্ধ লড়াইয়ের প্রথম দৃষ্টান্ত, অনেক ঐতিহাসিকের মতেই ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম। ইউরোপে তখন জাতিরাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সিপাহি বিদ্রোহ ভারতীয় উপমহাদেশেও সেই একতার ধারণাকে উস্কে দিচ্ছে। দিল্লি সেই বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল। আজকের অশান্ত পরিস্থিতির কেন্দ্রস্থলেও সেই দিল্লি। তবে আজকের দিল্লি সেদিনের মতো কোনও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল নয়, দেশের বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ও মানবতার বধ্যভূমি।
জাতিদাঙ্গায় রক্তাক্ত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাজধানী। এই বীভৎসতা দিল্লি আগে কি দেখেনি? ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির অব্যবহিত পরেই তো দিল্লিজোড়া শরণার্থী শিবির। পশ্চিম পঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা থেকে আগত শরণার্থীদের তাঁবুতে ছেয়ে গেছে দিল্লি। দেশের সীমান্তে সাম্প্রদায়িক হিংসা তার দাঁত-নখ বার করলেও, নেহরুর প্রশাসন রাজধানীর নিরাপত্তা রক্ষায় অতন্দ্র। মহাত্মা গান্ধী উদ্বিগ্ন হয়ে প্যাটেল নেহরুকে ধারাবাহিক ভাবে নোটস পাঠাচ্ছেন। ১৯৮৪-র শিখ দাঙ্গাতেও দিল্লিজুড়ে শিখ-নিধন যজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রাজীব গান্ধীর নির্বিকার বচন, "মহীরুহর পতন হলে মাটি তো কাঁপবেই।" সেই কম্পনের ফলেই পশ্চিম দিল্লির কিছু জায়গা পরবর্তীকালে শিখ মহিলাদের বিধবা মহল্লা হিসেবে স্থায়ীভাবে চিহ্নিত হয়ে যায়।
১৯৮৪-এর শিখ নিধনের ঘটনায় জনতার চোখে মূল অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতাদের বিচারে শাস্তি হয়নি। বহু পরে কংগ্রেসের শিখ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে অন্তত পাপস্খালনের চেষ্টা করেছিলেন। ২০০২-এর গুজরাতের মুসলিম নিধনের জন্য অবশ্য আজ পর্যন্ত সেটুকুও কেউ করেননি।
কিন্তু ১৯৮৪-এর এবং অজকের দিল্লি, এবং ২০০২-এর গুজরাত তিনটি ক্ষেত্রেই সাধারণ ধর্মোন্মত্ত কিছু মানুষ যখন হিংসায় লিপ্ত, তখন রাষ্ট্রশক্তি নীরব ও নিষ্ক্রিয় থেকে পরোক্ষে প্রণোদনা জুগিয়েছে। নোয়াখালির দাঙ্গায় খালি পায়ে হেঁটে শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন অসুস্থ গান্ধী। বিদেশী জুতোয় পা ঢাকা দেশনেতারা কি এখনও পথে নামতে কুন্ঠা বোধ করবেন? শান্তিরক্ষার বার্তা দিতে দ্বিধান্বিত হবেন?
সন্তানের বাবার নাম জানতে সমাজের যতই নোলা ছকছক করুক, মা তা জানাতে বাধ্য নন।
সহিষ্ণু আর সময়ানুবর্তী হওয়ার পাঠ যাদের দেওয়ার কথা, সেই শিক্ষকদের একাংশই এই দুইয়ের পাঠ ভুলেছেন।
নিছক খাওয়া-পরা নয়, দুর্গতদের পড়াশোনা আর স্বাস্থ্যেও সমান নজর দিতে চাইছে ‘জোনাকি’।
দেশের ইতিহাসে এক প্রহেলিকাময় চরিত্র হয়েই রয়ে যাবেন পিভি।
শত্রুকেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে গ্রহণ করে সাদা ও কালোর পুনর্মিলন ঘটালেন ডেসমন্ড টুটু।
বোম্বে বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে স্প্যানিশ ফ্লু যা পরে বোম্বে ফ্লু নামে পরিচিত হয়।