×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মরণ রে তুঁহু মম পুঁজিবাদ সমান!  

    বিতান ঘোষ | 22-12-2021

    প্রতীকী ছবি।

    ছাইয়ের গাদায় পরশপাথর সমাজতন্ত্র খুঁজি,

    তুমি কেনো চারাপোনা, রাষ্ট্র চালায় পুঁজি!

     

     

    পুঁজি এবং সেই সংবলিত বাদ, থুড়ি পুঁজিবাদের কী বিপুল শক্তি তা আপনি মধ্যবিত্তের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করতে পারার অতৃপ্তি দিয়ে কিছুতেই বুঝতে পারবেন না। মিছে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করবেন, ডিএ-টিএ বাড়ানোর জন্য কিংবা বেসরকারিকরণ (privatization) রোখার জন্য আন্দোলন করবেন, কিন্তু পুঁজির অপ্রতিরোধ্য গতিকে কিছুতেই প্রতিহত করতে পারবেন না। আরে মশাই, আপনি যখন আপনার বইয়ের তাকে দাস ক্যাপিটাল (Das Capital) সাজিয়ে রেখেছেন, আপনি যখন পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ‘বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই, বঞ্চিত করে বাঁচালে মোরে’ গাইছেন, সেই সময় এই পুঁজিবাদ আপনাকে সুলভে মরতে দেওয়ার সুবন্দোবস্ত করে ফেলেছে। এ সব খবর রাখেন?

     

     

    পাড়ার কমরেড ওজস্বী স্বরে বক্তিমে দিয়ে বুঝিয়েছিল, পুঁজিবাদ একটা বৃহত্তর ফাঁদ। পুঁজিবাদ নিজেই সমস্যা তৈরি করে জনগণকে বিপাকে ফেলে, তারপর চড়া মূল্যে তার সমাধানসূত্র বিক্রি করে। তারপর অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ বামপন্থী বাঙালি পুঁজি দিয়ে দু’গেলাস জল খেয়েছে, পাশের বাড়ির ছেলেপুলে মাল্টিন্যাশনালে চাকরি পেলে তারিফ করেছে আর হালে বিলাসবহুল আবাসনে বসে ওয়েবিনারে গ্রামসি, দেরিদা আওড়েছে। এই গড়পড়তা মানুষদের জীবন-মৃত্যুও যে এ ভাবে পুঁজির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়বে কে জানত!

     

     

    সেই কবে মেঘে ঢাকা তারা-র নীরারা বাঁচতে চেয়েছিল। কাতর কন্ঠে বলেছিল, ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই।’ কিন্তু এই ভোগসর্বস্ব দুনিয়ায় বাঁচার স্পৃহা কি নীরাদের আর রইল! ক্লান্তিকর নগরজীবন, সীমাহীন ইঁদুর দৌড়ে প্রাণপাখিটি তখন কেবল মুক্তি চায়। কিন্তু মুক্তি তো অত সহজে আসে না। আজকালকার যন্ত্রনির্ভর দুনিয়ায় সব কিছুই যখন চোখের পলকে, প্রায় বিনা আয়াসে করা সম্ভব, তখন মরণটাই বা কষ্টসাধ্য হবে কেন? মানবজাতির মরণস্পৃহাকে বাজারজাত করার কোনও উদ্যোগ নিও-লিবেরাল ইকোনমি নেবে না, তা কখনও হয়? তাই মৃত্যুকেও যন্ত্রণাহীন করতে সুইজারল্যান্ডে আবিষ্কৃত হল আত্মহত্যা-যন্ত্র, যাতে খুব অল্প সময়ে বিনা কষ্টে চিরঘুমে শায়িত হওয়ার সকল বন্দোবস্ত রয়েছে।

     

     আরও পড়ুন: রাজাধিরাজ কি তবে সত্যিই ফকির হলেন?

     

    যাই বলুন মশাই, এই মরার মধ্যে একটা স্টেটাস সিম্বল আছে কিন্তু। ফ্যান থেকে ঝোলা, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেওয়া অত্যন্ত তামাদি হয়ে যাওয়া উপায়। হাতে সামান্য পয়সাকড়ি থাকলেই ঘরভর্তি ইলেকট্রনিকস আসবাবের সঙ্গে স্বর্গধামে যাওয়ার যন্ত্রটিও সাজিয়ে রাখা যাবে। ফ্রাস্ট্রেশনে ভোগা প্রতিবেশী জুলজুল চোখে দেখবে সেই যন্ত্রকে, আর ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করবে, কত টাকা ইএমআই পড়ল? মরলে একটুও লাগবে না বলছেন?

     

     

    পুঁজিবাদ কিন্তু বলছে, মরে যেও না। তুমি পুঁজিবাদের কনজিউমার, পুঁজিবাদের সব কিছু কনজিউম কর, কিন্তু মরো না প্লিজ। মৃত্যুর বিলাসিতায় বাঁচো, মরব মরব করো, কিন্তু মরো না। পুঁজিবাদ তোমায় দিয়ে মৃত্যু-যন্ত্র কিনিয়ে প্রমাণ করেছিল, তুমি মরো নাই।

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    সন্তানের বাবার নাম জানতে সমাজের যতই নোলা ছকছক করুক, মা তা জানাতে বাধ্য নন।

    আব্বাসের সমর্থকরা কি আব্বাসকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রূপে দেখতে চাইবেন?

    বাংলায় বেহাল বিজেপির মোহ কাটতেই তৃণমূলে ফিরছেন নব্যরা, বিমুখ আদিরাও, মহাসংকটে রাজ্য বিজেপি

    পরিকাঠামো নেই, নেই মেধার যাচাইও, চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দেবে কে?

    ‘আসিতেছে বিপদের দিন, চাষিরা করিতেছে হম্বিতম্বি, চোখ রাঙাইছে চিন!’

    বহু সঙ্কটেও মানুষকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দিয়ে গেল 2020।

    মরণ রে তুঁহু মম পুঁজিবাদ সমান!  -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested