×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বিধ্বস্ত, তবু নাকি সামান্য ক্ষতি!

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 22-06-2020

    এখনও চারদিকে এই ধ্বংসস্তূপের ছবি।

    ছাতরা সর্দার- কী কষ্ট যে হচ্ছে দিদিভাই, কী আর বলব। বরটা পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে, বাড়ির একটা দিক ভেঙে গেছে। জমিটাও গেল, খাব কী? কী করে এখন সারাই বলো দিকিনি?


    ফাতেমা সর্দার- সাবধানে এসো দিদিভাই, জলের মধ্যে দিয়ে চলো পড়বেনি। তবে, আমি ধরেছি এসো। ভয় নাই। নখ দিয়ে মাটি খামচে ধরো। তোমরাই দেখে যাও কীভাবে রয়েছি আমরা। এভাবেই চলি। এই দেখো এই বাড়িটার ছাদ উড়ে গেছে, এখানে মাটির বাড়ি ছিল।


     
     

    আশপাশের জলমগ্ন জায়গা দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয়, "এগুলো পুকুর নাকি ক্ষেত?'

    ছাতরা সর্দার অসহায় অথচ বিনীত গলায় বলে উঠলেন, "সবই ক্ষেত দিদিভাই। বাঁধ ভেঙে সব ভেসে গেছে।' একটা উঁচু জায়গা দেখিয়ে বললেন, "এই দেখো এতদূর জল উঠেছিল। সব নোনা জলে এখনও ডুবে, দু'বছর চাষ হবেনি গো। আর ওরা বলতিসে কোনও ক্ষতিই নাকি হয় নাই।'

     

    সদ্য বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর আরও কাদা ভরা রাস্তায় যেতে যেতে এমনটাই গল্প শোনাচ্ছিলেন আনন্দবাঁধের দুই স্থানীয় মহিলা।

    আমপানের পর কেটে গিয়েছে এক মাস, কিন্তু অবস্থার বদল কতটা হয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন ব্লকের? সুন্দরবনের আনন্দবাঁধ গ্রাম এখনও অনেকটাই জলমগ্ন। ক্ষেত বলে আলাদা করে কিছুই চিহ্নিত করা যায় না। নোনা জলে সব ডুবে গিয়েছে। মাটির বাড়ি একটিও আস্ত নেই, কাঁচা রাস্তারও ভয়ংকর অবস্থা। গোটা গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কয়েকটা ত্রিপলের নীচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন। গত এক মাস যাবৎ কমিউনিটি কিচেনে রান্না হচ্ছে।


     

    গ্রামের ঠিক পিছনেই রয়েছে মাতলা নদী। আমপানের দাপটে নদীর বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকিয়ে দিয়েছে গ্রামে। স্থানীয়দের কথায়, "আয়লার সময় দু'বছর চাষ করতে পারিনি। এবারও তাই হবে। অন্য কাজও নেই খাব কী? কোনও সাহায্য পাচ্ছিনা সরকারের তরফে।'

     
    ফাতেমা সর্দার জানাচ্ছিলেন, "পঞ্চায়েতের তরফে ত্রিপল আর মুড়ি চিড়ে দেওয়া হয়েছে।' তবে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি জানান, "পঞ্চায়েত বলেছে এখানে নাকি কোনও ক্ষতিই হয়নি।'  অথচ দগদগে ক্ষতের মতো ক্ষতির চিহ্ন সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। কোথাও উড়ে গিয়েছে বাড়ির চাল, কোথাও বা গোটা বাড়িটাই ভেঙে পড়েছে। পুকুর আর ক্ষেতকে আলাদা করা যায় না। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন। আমপান এখানে ঠিক কতটা তাণ্ডব চালিয়েছে, এ দৃশ্য দেখে তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তারপরও যে কথা স্থানীয় মানুষের মুখে উঠে আসছে, তা সত্যিই ভাবাচ্ছে। এটাকে যদি ক্ষতি না বলা হয়, তবে ক্ষতি কোনটা?

     

     

    গ্রামের অনেকেই কলকাতায় আসেন দিনমজুরের কাজ করতে। লকডাউনের ফলে তাদের কাজ নেই। যেটুকু চাষের জমি আছে তাও জলের তলায়, সাহায্যও নেই তেমন। পেট কেমন করে চলবে সেই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন এঁরা। দুশ্চিন্তার কালিতে সকলের মুখে কালো ছায়া। আমপান আনন্দবাঁধের শেষ আনন্দটুকুও হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। পড়ে রয়েছে শুধুই হাহাকার।


     

     

    কী ভাবে যাবেন আনন্দবাঁধে?

    বাসন্তী থানার অন্তর্গত ভরতপুর-১ ব্লকের মধ্যে পড়ে আনন্দবাঁধ।

    সড়কপথে কলকাতা থেকে ৯১ কিলোমিটার দূরে।

    রেলপথে ক্যানিং সবচেয়ে কাছের স্টেশন।

     

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    নিউ নর্মালে সবই কেমন যেন বদলে যাচ্ছে, বদলে গেছে চেনা আড্ডা, চেনা জায়গাগুলো।

    আগের ফুলে থেকে কাজ করতে পারছিল না বলে মউদি ফুল বদল করল

    এবারের দীপাবলি ধোঁয়াহীন রাখার বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে খুশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

    গ্যালাক্সির মাঝখান থেকে রহস্যময় রেডিও সঙ্কেতের পিছনে কি বুদ্ধিমান প্রাণী?

    বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব যেন মারণ উৎসব না হয়, তার চেষ্টা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদেরই করতে হবে।

    নাছোড় বৃষ্টিতে নাজেহাল ভারতবাসী।

    বিধ্বস্ত, তবু নাকি সামান্য ক্ষতি!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested