কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এবার মণ্ডপে দর্শনার্থী ছাড়াই পুজো হবে। প্রত্যেকটি পুজো মণ্ডপই কন্টেইনমেন্ট জোন, অতএব কোনও দর্শককে মণ্ডপে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে সেই রায় কতটা মানা হবে? চতুর্থী অবধি রাস্তায় প্রায় অন্যান্যবারের মতোই ভিড় হয়েছে। করোনা এবং যাবতীয় বিধি-নিষেধকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েই মানুষজন দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েছেন। মাস্ক হয়তো সবাই পরেছেন, কিন্তু সেটা মুখে নয়, হয় কানে ঝুলছে, নইলে থুতনিতে। এর ফলে আশঙ্কার প্রহর গুনছেন চিকিৎসকরা।
কিছু পুজো অন্যান্যবারের মতোই থিম পুজোয় মেতে উঠেছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণ তো নেই'ই সেখানে, উপরন্তু কোথাও দেবী 25 কিলোর স্বর্ণালঙ্কারে সজ্জিতা, তো কোথাও রূপোর মাস্কে। কোথাও আবার কৈলাশ নেমে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের এই কলকাতা নামক শহরে। আর পুণ্যের লোভে রোগ উপেক্ষা করে মানুষ সামিল হয়েছে সেই উৎসবে। কিন্তু এমতাবস্থায়, কলকাতার বেশ কিছু নাম করা পুজো ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তও রেখেছে। কোনও কোনও পুজো কমিটি হাইকোর্টের ঘোষণার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা এবার কোনও দর্শনার্থীকে মণ্ডপে ঢুকতে দেবে না। এই পুজো শুধু স্থানীয়দের নিয়েই পালিত হবে। কেউ কেউ আবার মানব কল্যাণে সামিল হয়েছে।
যখন সাধারণ মানুষ সতর্কতা বিধি, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি ভুলে দুর্গাপুজো নয়, দুর্গোৎসবে মেতে উঠেছে, তখন দক্ষিণ কলকাতার কিছু পুজো কমিটি কী ভূমিকা পালন করছে? সুরুচি সংঘের 2020-র থিম ‘এবার উৎসব নয় হোক মানুষের পুজো’। তারা পুজো উপলক্ষে বহু মানুষকে নতুন জামা, প্রয়োজনীয় জিনিস ইত্যাদি দিয়েছে। এছাড়া মণ্ডপের প্রবেশের মুখে পুজো কমিটি এবং ক্লাবের সমস্ত সদস্যদের স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। সুরুচি সংঘের পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য দেবাশীষ দাস বলেন, “এবার আমাদের মণ্ডপ খোলামেলা করা হয়েছে, যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অসুবিধা না হয়। মাঠে স্যানিটাইজারের মেশিন রাখা আছে। এবার স্টলের সংখ্যাও অনেক কম। আমরা আমাদের তরফে আপ্রাণ চেষ্টা করছি সমস্ত নিয়ম মানার।'' দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় পুজো, বেহালা বুড়শিবতলা, যা ‘মনের মানুষ’ নামেই পরিচিত। তারা এবার কোনও থিম করছে না। মনের মানুষের পুজো কমিটির অন্যতম সদস্যা শ্বেতা মন্ডল দাস বলেন, “এবার আমরা কোনও থিম করছি না। বাইরের কোনও দর্শককেও আমরা ভিতরে প্রবেশাধিকার দেব না। শুধু মাত্র পাড়ার বাসিন্দারাই এবারের পুজোতে সামিল হতে পারবেন'' একই সুর ধরা পড়ল চেতলা অগ্রণী পুজো কমিটির সদস্য আদিত্য দাসের কথায়। তিনি 4th Pillars-কে জানালেন, “আমাদের মণ্ডপ এবার পুরো খোলা। রাস্তা থেকেই মণ্ডপ সজ্জা এবং দেবীকে দেখা যাবে। তবুও আমরা বারবার মণ্ডপ স্যানিটাইজ করছি। অঢেল মাস্কের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুলিশ এবং আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা চেষ্টা করছেন, বাইরেও যাতে ভিড় না হয়। আমাদের এখানে অষ্টমীর অঞ্জলির সময়েও যথেষ্ট ভিড় হয়। সেটা এড়াতে এবার আমরা সময় ভাগ করে দিয়েছি। পনেরো জন করে অঞ্জলি দিতে পারবেন একসঙ্গে''
সুরুচি সংঘ এবং চেতলা অগ্রণীতে এই বছর লাইভ পুজো হবে, তাদের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে চব্বিশ ঘন্টাই লাইভ পুজো চলবে। যেটা অভিনব একেবারেই। এর ফলে বাড়ি বসেই ঠাকুর দেখা সম্ভব হবে। বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোশিয়েশনের সদস্যা কোয়েল মুখার্জি বলেন, “হাইকোর্টের রায় আমরা মেনে চলব। পুজো মণ্ডপে কোনও দর্শনার্থী তো প্রবেশ করতে পারবেনই না, উপরন্তু ক্লাবের মেম্বাররাও একসঙ্গে 15 জনের বেশি মণ্ডপে থাকবেন না এবার। সমস্ত নিয়ম পালন করা হবে''
কিছু পুজো কমিটি যখন তাদের সামাজিক দায় দায়িত্ব ভুলে ‘দুর্গোৎসবে’ মেতে উঠেছে, সেখানে অন্যান্য অনেক পুজোই এবার ‘দুর্গাপুজো’ করছে, উৎসব নয়। মেনে চলছে করোনাকে দূরে রাখার জন্য সমস্ত বিধি। কিন্তু মানুষ কি তবুও সচেতন? উৎসব যাতে দুঃখের কারণ না হয় তার জন্য কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিল, তা শেষ পর্যন্ত মানা হবে কিনা জানা নেই। যে পুজোগুলো থিম পুজোয় মেতে উঠেছিল তারা সচেতন হবে কিনা, মানুষের সমাগম বন্ধ করবে কিনা তা সময়ই বলবে। কিন্তু এই দুঃসময়ে, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব যেন মারণ উৎসব না হয়, তার চেষ্টা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদেরই করতে হবে। ঠিক যেমন কিছু মানুষ, কিছু পুজো কমিটি সচেতন নাগরিকের ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছে, তা অন্যদেরও পালন করতে হবে। তবেই আসন্ন বিপদ এড়ানো যেতে পারে।
বিশ্ব জুড়ে হুহু করে ছড়াচ্ছে মাঙ্কি পক্স। কিন্তু কী এই রোগ, কী ভাবে হয়?
এক গ্রাম্য মধ্যবিত্ত ছেলের অধরা স্বপ্ন, বন্ধুত্ব এবং জীবনের গল্প বলল বাদল দাস।
অনীক দত্তের অপরাজিত এবং সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
পুজো যখন সবার, উপহারও তো সবারই পাওয়ার কথা, নয় কী?
29 জুন ভারতীয় সরকার 59টি চিনা অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল, কিন্তু এতে কার কতটা লাভ আর ক্ষতি
রসিকতা নয়। কলকারখানা বন্ধ, আকাশ ও সড়কপথে যান চলাচল অনেক কম। সব মিলিয়ে সারা পৃথিবীতেই দূষণের মাত্রা