এবারের কালীপুজো, দীপাবলি ধোঁয়াহীন রাখার বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে খুশি চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা ছিল এই করোনা পরিস্থিতিতে বাজি পোড়ালে তা করোনা সংক্রমণের হারকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে। রাজ্য সরকার যেখানে মানুষের শুভবুদ্ধির কাছে আবেদন জানিয়ে কর্তব্য সমাধা করেছিল, সেখানে বাস্তবে বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে হাইকোর্টের এই নির্দেশের প্রয়োজন ছিল বলেই তাঁরা মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, দূষিত বাতাস এমনই আমাদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। আর এ বছর দেরিতে কালীপুজো পড়ায় ইতোমধ্যেই ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে। শীতকালে মানুষের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তার মধ্যে যদি এই দূষিত বায়ুতে শ্বাস নিতে হয়, তা আরও বেশি ক্ষতি করবে। কালীপুজোর পর বাতাসে PM2.5 (যে আকারের ভাসমান ধূলিকণা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক মানুষের পক্ষে) প্রায় 10-15 গুণ বেড়ে যায় এবং শ্বাসনালী দিয়ে ঢুকে ফুসফুসের ক্ষতি করে। একইসঙ্গে এই সময়ে প্রায় 50 শতাংশ বায়ুদূষণ বাড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়ে শব্দদূষণও।
কিন্তু Covid-19 এবং বাজি পোড়ানোর যোগ কোথায়? এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের Covid ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ, ডক্টর অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘Covid-19 আর বাজির সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। কোভিড হলে ফুসফুসের একটা চিরস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। যাদের হালকা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, বা যারা উপসর্গহীন, তাদের 30 শতাংশ এবং যারা ভেন্টিলেটরে থাকছেন বা অক্সিজেনের সাহায্য নিতে হচ্ছে, তাদের প্রায় 60 শতাংশের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে ফুসফুসের।' কী ক্ষতি হচ্ছে? "ফুসফুসের মধ্যে যে নরম টিস্যুগুলো আছে, যার মধ্যে দিয়ে বাতাস বিনিময় হয়, সেগুলো জমে গিয়ে শক্ত তন্তুযুক্ত জিনিসে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে এই টিস্যুগুলোর মধ্যে দিয়ে আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অক্সিজেনের আদান প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। তাতে ফুসফুসের যতটা কার্যক্ষমতা ছিল তা হ্রাস পাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে কোনও কোনও কাজ, যেমন- দৌড়নো, ভারী জিনিস বহন করার সময় অক্সিজেনের ঘাটতিতে শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে। ডাক্তার দলুইয়ের কথায়, ‘এই অবস্থায় যদি আমরা বাজি পোড়াই, এবং দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিই, তবে যারা করোনামুক্ত হয়ে ফিরছেন তাদের আবারও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে।‘ কিন্তু শুধুই কি যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরই ক্ষতি? না, এছাড়া যাঁদের এখনও করোনা হয়নি তাদের ফুসফুসে যদি এই বিষাক্ত ধোঁয়া, ধূলিকণা প্রবেশ করে তাহলে শ্বাসনালীতে জ্বালা-যন্ত্রণা হতে পারে, কফ উঠতে পারে। এই অবস্থায় যদি সেই মানুষটি করোনায় আক্রান্ত হন, তবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে, উপসর্গগুলো অনেক বেড়ে যেতে পারে। এমনই বাজি পোড়ালে যে নাইট্রেট ইত্যাদি যৌগ বেরোয়, তা ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকারক। এই সময়ে হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এ ছাড়া শব্দবাজির ফলে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পরে, প্রেসার বেড়ে যেতে পারে, এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন অনেকে।'
এমনিতেই যা ক্ষতিকারক তা করোনার সঙ্গে মিললে আরও সমস্যা তৈরি করবে। কিন্তু বাজি তো পরিবেশেরও ক্ষতি করে। আশুতোষ কলেজের পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক অরিজিৎ চ্যাটার্জি বলেন, ‘এ বছর কালীপুজো এমনই দেরি করে পড়েছে, ফলে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে। ঠাণ্ডায় বাতাস ঘনীভূত হয়। যত দূষিত ধূলিকণা বাতাসে রয়েছে সব মাটির কাছে এসে জড়ো হয়। বাজি পোড়ালে তার থেকে নির্গত ধূলিকণা এবং ধোঁয়াও বাতাসে মিশবে, যা ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে। বাজি পোড়ালে সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রেট, কার্বন মনোঅক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস বেরোয়, যা ভীষণ ক্ষতিকারক। এই গ্যাসগুলো নানা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়িয়ে দেয়, একই সঙ্গে বায়ুদূষণ ঘটায়। যে বাজি শব্দদূষণ করে তা ফাটানো তো এমনিতেই অবৈধ। কিন্তু নজরদারি নেই তেমন, ফলে শব্দদূষণও ঘটে। তাই এই বছর করোনা পরিস্থিতিতে সব দিক বিচার করে বাজি পোড়ানো রোধ করা প্রয়োজনীয় ছিল।'
মহাকাশ গবেষণায় যেন এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল নাসার এই নতুন আবিষ্কার।
কলকাতা কেন্দ্রিক দক্ষিণবঙ্গ দিন দিন বাজ পড়ার হটস্পট হয়ে উঠছে।
ভয় দেখিয়ে অস্ত্রের নাচ দেখিয়ে রাম নবমী পালন
পাতাখোর হলে যেন চুরির অপরাধ আর ধর্তব্য নয়!
আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি কেন তুলনামূলক ভাবে কম হয়? হলেও তা ওমান বা গুজরাটের দিকে বাঁক নেয় কেন?
নিজেদের প্রাণ দিয়ে মানুষের ভুলের খেসারত দিচ্ছে উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণীরা।