×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • স্ত্রী কার্যত পরিত্যক্ত, পালিত গ্রাম অবহেলিত

    রজত কর্মকার | 08-06-2020

    দোমারি গ্রাম থেকে দূরে বারাণসী শহর দেখা যাচ্ছে

    নরেন্দ্র মোদীর সাধের বারাণসী। গত দুই লোকসভা নির্বাচনে এই বারাণসীই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে হাত খুলে ভোট দিয়েছে। সেই বারাণসীর অদূরেই নরেন্দ্র মোদীর দত্তক নেওয়া গ্রাম দোমারি-তে লকডাউনে দিনের পর দিন অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছেন বহু মানুষ।

     

     

    2018 সালে সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনায় চতুর্থ গ্রাম হিসাবে দোমারি-কে দত্তক নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর থেকে বরাণসী এবং আশপাশের গ্রাম থেকে অনেকে দোমারিতে সস্তায় জমি কিনে পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে আসেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সাড়ে তিন হাজার থেকে গ্রামের জনসংখ্যা পৌঁছয় পাঁচ হাজারে। সকলেই ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দত্তক নেওয়া গ্রামে নিশ্চয়ই কাছাকাছির মফস্বল বা গ্রামের তুলনায় একটু ভাল থাকা যাবে। যেখানে কাজের অভাব থাকবে না, বিদ্যুতের জোগান থাকবে, রেশন ব্যবস্থা ভাল হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে দোমারি সে সব থেকে আপাতত বেশ খানিকটা দূরেই অন্ধকারে পড়ে রয়েছে।

     

     

    লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। গ্রামের বহু মহিলা বারাণসীতে পরিচারিকার কাজ করতেন। তাঁরাও গত দু’-তিন মাস বাড়িতেই বসে রয়েছেন। শিশুদের মুখে প্রয়োজনীয় দুধও তুলে দিতে পারছেন না তাঁরা। লকডাউনের মধ্যেও খাবারের খোঁজে প্রতিদিন সকালে বেরতে হয়েছে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের। ভাগ্য সহায় হলে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেই সামান্য খাবার জোগাড় করতে পেরেছেন তাঁরা। কখনও সারাদিন পথে পথে ঘুরেও অভুক্ত বাড়ি ফিরতে হয়েছে। খাবারের আশায় মুখ চেয়ে থাকা তাঁদের পরিবারও সে দিন খালি পেটেই রাতে ঘুমিয়েছে।

     

     

    গত ফেব্রুয়ারি মাসে দোমারিতেই দীনদয়াল উপাধ্যায়-এর 63 ফুটের বিরাট মূর্তি উন্মোচন করতে আসেন নরেন্দ্র মোদী। দিনে সেই মূর্তির ছায়া অভুক্ত মানুষের মিছিল দেখে। গ্রামের প্রত্যেকেই ভেবেছিলেন, লকডাউনে বিনামূল্যে রেশন মিলবে। দীর্ঘদিন ধরে অনেক মানুষ রেশন কার্ডের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। তাঁদেরও আশা ছিল, মহামারীর সময় অন্তত কার্ডের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু তা হয়নি। যাঁদের কার্ড ছিল, তাঁরাও নিয়মিত রেশন পাননি। যাঁদের ছিল না তাঁদের পাওয়ার প্রশ্নই ছিল না।

     


    সহায়-সম্বলহীন রঞ্জু দেবী

     

    ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্ট করা সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, ফ্রি রেশনের আশায় তিন সন্তানের মা রঞ্জু দেবীও পঞ্চায়েত অফিসে বার বার হত্যে দিয়েছেন। কিন্তু সাহায্যের বদলে জুটেছে তিরস্কার। রঞ্জু বলেন, ‘যাঁদের রেশন কার্ড ছিল তাঁরা অনেকেই বিনামূল্যে রেশন পেয়েছেন লকডাউনে। আমরা বহুদিন ধরেই রেশন কার্ড তৈরির জন্য আবেদেন করেছি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। লকডাউনেও পঞ্চায়েত অফিসে বার বার কার্ডের আশায় গিয়েছি। কার্ড তো মেলেইনি, উল্টে দূর দূর করে আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

     

     

    উত্তর প্রদেশ সরকার পরবর্তীকালে 30 জুন পর্যন্ত রেশন বা আধার কার্ড না থাকলেও বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। ঘোষণা শুনে অনেকেই রেশন দোকানে ভিড় করেন। কিন্তু তাতেও লাভ কিছু হয়নি। দোকানের মালিক রেশন দিতে সরাসরি অস্বীকার করেন। এ অবস্থায় অনেকেই ভিক্ষা করেই দিন গুজরানের রাস্তায় হাঁটেন। কিন্তু ভিক্ষা দেওয়ার লোকও মেলেনি।

     

     

    আশ্চর্ষের বিষয়, এত কিছুর পরেও এখন বহু গ্রামবাসী বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী দোমারির জন্য নিশ্চয়ই রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু দুর্নীতির ফাঁসে তা হয়তো কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। লকডাউন উঠে গিয়ে এখন আনলক শুরু হয়েছে। এখনও তাঁরা প্রায় অনাহারেই দিন কাটাচ্ছেন। তবে এখনও আশা ছাড়েননি তাঁরা। এখনও ভাবছেন নিশ্চয়ই তাঁদের জন্য আলাদা করে রেশনের ব্যবস্থা করা হবে।

     

     

    কতটা ধৈর্য থাকলে মানুষ এত অবিচলিত থাকতে পারেন তা গবেষণার বিষয় হতে পারে। এত সবের পরে একটা বিষয় স্পষ্ট, সাধারণ মানুষের ধৈর্যই এই ভঙ্গুর সিস্টেমকে খানিকটা ঠেকিয়ে রেখেছে। না হলে সেটা বহু দিন আগেই সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ত।

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    এ এমন এক অন্ধকার, যা সূর্যের আলোতেও দূর হওয়ার নয়। গ্রহণের সময় তো আবার সেই আলো কমে যায়।

    পোশাক এবং গড়ন দেখে যে কেউ একবাক্যে বলবেন, মধ্য বয়সি এই ভদ্রলোক আফগানিস্তানের বাসিন্দা।

    হলফ করে বলা যায়, সিরিজটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সিনেমার আকারেও তৈরি করা যেত।

    ওহঃ, একজন পুরুষ বটে! না, তিনি পুরুষ নন, মহাপুরুষ। না হলে এমন কথামৃত মুখ থেকে বার হয়?

    ৫ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ ঢাকা গুন্ডাদের আক্রমণের পর এ ভাষায় গর্জে

    দাদা তো ঠিকই বলেছে। হাসপাতাল বানিয়ে কী হবে? তার চেয়ে মোড়ে মোড়ে মন্দির বানালে এ দেশের কোনও অমঙ্গল হ

    স্ত্রী কার্যত পরিত্যক্ত, পালিত গ্রাম অবহেলিত-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested