×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • রিভিউ: Paatal Lok

    রজত কর্মকার | 30-05-2020

    পচাগলা সিস্টেম আর গোবলয়ের হিংস্রতা

     

    রেটিং: 4.5/5

     

    ‘এটা একটা ওয়েল অয়েলড মেশিনারি। এমনভাবেই চলে আসছে। মেশিনের কোনও অংশ যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাকে পাল্টে দেওয়া হয়। কিন্তু সিস্টেম পাল্টায় না।’

     

    সিরিজেরই একটি সংলাপ দিয়েই শুরুটা করা হল। গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা রাজনীতির ব্যবসায়ী এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের আঙুলের ইশারায় কীভাবে চলছে, তা বোঝানোর জন্যআপাতপক্ষে অকর্মণ্য পুলিশ কীভাবে সেই সিস্টেমের কোনও অবাঞ্ছিত অংশকে বাদ দিতে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তার অভিঘাতই বা কী হয়, তা নিয়েই আমাজন প্রাইমের নতুন ওয়েব সিরিজ পাতাল লোকএই মুহূর্তে নেটিজেনদের কাছে অন্যতম চর্চার বিষয় এই সিরিজ।

     

    গল্পের প্লট মোটামুটি এই রকম: সৎ দায়বদ্ধ সাংবাদিক সঞ্জীব মেহরাকে খুন করতে চারজনের একটি দলকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। খবর প্রকাশ্যে আসতেই মিডিয়ার লাফালাফি শুরু হয়। নিজের চাকরি জীবনে বহু দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের কেরিয়ার শেষ করেছেন সঞ্জীব। তাঁর স্টিং অপারেশনে বড় ব্যবসায়ী থেকে নেতামন্ত্রী, বহু মানুষকে বেইজ্জত করে ছেড়েছেনস্বাভাবিকভাবেই তাঁর উপর অনেক প্রভাবশালী মনুষের রাগ রয়েছে। ঘটনাক্রমে তদন্তের ভার গিয়ে পড়ে আউটার যমুনাপার্ক থানার ইন্সপেক্টর হাতিরাম চৌধুরী-র কাঁধে। কুড়ি বছরের কেরিয়ারে যিনি কোনও বড় কেস হ্যান্ডেল করেননি। তবে কেন তাঁকে এমন হাই প্রোফাইল কেস দেওয়া হল? সেই অর্ডার দিলেন স্বয়ং ডেপুটি কমিশনার, কিন্তু কেন? আসল টার্গেট কি সঞ্জীব মেহরাই ছিলেন? কেন ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেয়েও তাঁকে খুন করে না?

     

    এই কেন-র উত্তর খুঁজতে গিয়েই দেশের চাটুকার মিডিয়া, সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা পায়ের তলায় পিষে দেওয়া মিডিয়ার কদর্য এক রূপ ফুটে উঠবে স্ক্রিনে। টিআরপি-র যন্ত্রে কী ভাবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন হয়ে ওঠে মিডিয়ার প্রাইমটাইম, তাও নজরে আসবে। তার সঙ্গে দেশের গোবলয়ের মানুষের হিংস্রতা আর মনস্তত্ত্বও নাড়িয়ে দেবে দর্শকদের। কেমন সেই মানসিকতা তা বোঝার জন্য একটি সংলাপই যথেষ্ট, ‘আরে বুন্দেলখন্ড মে লড়কিওকে সাথ ছোটিমোটি কাণ্ড তো হোতে হি রহতি হ্যায়। ছোটা কাম মতলব উংলিবাজি, বড়া কাম মতলব রেপ, অউর পুরা কাম মতলব রেপ অউর মার্ডার।’ অর্থাৎ কোনও পরিবারকে বা কোনও শত্রকে শাস্তি দিতে হলে সেই পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে এ সব হামেশাই হয়ে থাকে। কিন্তু সে সব মামলার অধিকাংশই থানা পর্যন্ত পৌঁছয় না।

     

     

    গোমাংস খাওয়ার সন্দেহে পিটিয়ে মারা হোক বা মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ, দেশের সাম্প্রতিকতম বিভিন্ন ইস্যু খুব পরিষ্কার ভাবে দেখানো হয়েছে সিরিজে। যা দেশের শাসকদলের পক্ষে বেশ অস্বস্তির। হলফ করে বলা যায়, সিরিজটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সিনেমার আকারেও তৈরি করা যেত। গল্প, টানটান চিত্রনাট্য এবং বলার ধরন সবই রিয়েলিস্টিক সিনেমার কথাই মনে করাবে। কিন্তু সিনেমা হলে এ ছবি মুক্তি পেত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পরিচালকদ্বয় অবিনাশ অরুণ এবং প্রসিত রায় সম্ভবত সে কারণেই ওয়েব সিরিজের স্বাধীনতা ছাড়তে চাননি।

     

    অভিনেতাদের নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। প্রায় প্রত্যেকেই পরিচিত মুখ। অনেকেই বহু ভাল সিনেমায় নিজেদের অভিনয়ের ছাপ রেখেছেন। ইনস্পেক্টরহাতিরাম চৌধুরীর চরিত্রে জয়দীপ আহলাওয়ত, সঞ্জীব মেহরার চরিত্রে নীরজ কবি এবং বিশাল ত্যাগী-র চরিত্রে অভিষেক ব্যানার্জির কথা আলাদা করে বলতেই হবে। মূলত এই তিনজনের কাঁধেই সিরিজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভার ছিল। চোখ দিয়ে অভিনয় কাকে বলে তা অভিষেকের কিছু দৃশ্য দেখলে ভালই বুঝবেন দর্শকরা। এঁদের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেছেন জগজীৎ সান্ধু, ইশওয়াক সিং, গুল পনাগ, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, নীহারিকা দত্ত, আসিফ খান, বোধিসত্ব শর্মা, রাজেশ শর্মা, মাইরেম্বাম রোনাল্ডো সিং, বিপিন শর্মা, আসিফ বসরা, মনীশ চৌধুরী, আকাশ খুরানা প্রমুখ। এ ছাড়াও খুব ছোট ছোট চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন অনেকে।

     

    শেষ করার আগে স্বামীজির একটি বাণী দিয়ে শেষ করা যাক, না হলে রিভিউ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ‘জীবে প্রেম করে যেই জন’, পশুপ্রেমের জোরে সেই জনের প্রাণ বেঁচে যেতে পারে।

     

    কেন? জানতে হলে নয় পর্বের এই অসাধারণ সিরিজটি দেখতে হবে।

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতে আপাতত মলমের কাজ করছে ওয়ার্ক ফর্ম হোম।

    মাননীয় হঠাৎ আটের আস্ফালন ছেড়ে ৯-এর ঘাড়ে চড়ে বসলেন কেন? কারণ নিশ্চয়ই আছে।

    ৫ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ ঢাকা গুন্ডাদের আক্রমণের পর এ ভাষায় গর্জে

    করোনার কালো গ্রাসে এ বছর সবই গিয়েছে। না রয়েছে বিক্রেতাদের পসার, না হয়েছে মেলা, বাতিল হয়েছে বাউল গান

    অসহায় চোখে ওরা দেখছিল আর ভাবছিল, যদি ফুলের পাপড়ির বদলে ওগুলো রুটি, বাতাসা, মুড়ি, মিষ্টি হত, তবে...

    এই লেখা সেই সব ব্যক্তিদের জন্য যাঁরা এই পেশাকে প্রতিদিন চরম অপমান করে চলেছেন।

    রিভিউ: Paatal Lok-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested