লকডাউনের পর দিন রবিবার সন্ধ্যায় নন্দর চায়ের দোকানের সামনে আড্ডা চলছে। ঠিক আড্ডা বলা ভুল, ওটা ভক্ত শিরোমণির বক্তৃতা প্র্যাক্টিসের আসর। মাঝে মধ্যেই পার্টির চিন্তা-ভাবনা, ভোটের লাইন-বেলাইন, সাম্প্রতিক কালে দলের কোনও নেতা বোমা ফাটালে তা ম্যানেজ করা ইত্যাদি ইত্যাদি কাজের জন্য চায়ের দোকান বেস্ট জায়গা। একসঙ্গে অনেক লোক এবং অনেক রকম লোক। সকলকে একটু বাজিয়ে-খুঁচিয়ে দেখে নেওয়া। সঙ্গে চায়ের গেলাসে সুরুত-সুরুত শব্দ তোলা। রথ দেখা কলা বেচা দুই-ই।
শিরোমণির সে দিনের বিষয় ছিল রাম মন্দির। সাম্প্রতিক কালে এর চেয়ে বড় ললিপপ জনতার মুখে ঢোকেনি। কিছু ভক্ত তো অমন খান দশেক ললিপপ মুখে ভরে বসে রয়েছে। শিরোমণিও তাদের মধ্যে অন্যতম তা বলাই বাহুল্য। তিন নম্বর চায়ে প্রথম চুমুকটা দিয়ে সে বলল, ‘আর মাত্র হপ্তা খানেক। তোরা মিলিয়ে নিস। করোনা পালানোর পথ পাবে না। দাদা তো ঠিকই বলেছে। হাসপাতাল বানিয়ে কী হবে? তার চেয়ে মোড়ে মোড়ে মন্দির বানালে এ দেশের কোনও অমঙ্গল হবে না। রোগ-ব্যধি তো অমঙ্গলই। যেই না ভদ্রলোক কথাটা বলেছে, অমনি শুরু হয়ে গেছে কাটাছেঁড়া। দাদারা ঠিকই বলে। জনতা বেশি কথা বলতে গেলেই ক্যালানো দরকার। স্ট্রেট ক্যালানো।’
আরও পড়ুন: চাকরি নেই তো কী! মন্দির তো আছে
এক নাগাড়ে কথা বলে খানিক দম নেয় শিরোমণি। এ ক’মাসে দাদাদের ক্লাসে পর পর ট্রেনিং নিয়ে শিরোমণির বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ বেশ খানিকটা পাল্টে গেছে। তার সঙ্গে মুখের ভাষাও। ধীরে ধীরে স-শ গন্ডগোল হওয়া বা র-ঋ ইত্যাদি উচ্চারণেও বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ‘আদস্য’ রাজনৈতিক কর্মীর মতো কথা বলা প্র্যাক্টিস করে সে। দম নেওয়া হলে সে বলে, ‘আরে মন্দির হচ্ছে এ দেশের আত্মা, প্রাণ। কত লোক রোজ মন্দিরে যায় বল তো। তার অর্ধেকও হাসপাতালে যায় না। তা হলে কোনটা বেশি দরকার তোরাই বুঝে নে। শোন, বিরোধীরা তো বিলিক-ছিলিক বকবেই। ওদের কাজই হল বকা। বকতে বকতে বকাসুর হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী জী অবতার হয়ে সব অসুর শেষ করবেন, দেখে নিস তোরা।’
শিরোমণির স্যাঙাতদের মধ্যে জনা কয়েক পড়াশোনা জানে। শিরোমণি নিজেও আকাট-মুখ্যু নয়। তবে দলে কয়েকজন আছে যারা ও সবের ধারপাশ দিয়েও যায়নি। দাদাদের হুকুমে বেশিরভাগ ‘মেইন কাজ’ ওরাই করে। মিটিং মিছিল করার সময় অবশ্য আশপাশে শিক্ষিত ট্যাগ মারা ছেলেপিলে সঙ্গে রাখে সে। এ সব দাদারাই শিখিয়েছে। তারা বলেছে বাংলার মন বুঝতে হবে। এখানে লোকেরা বেশি নেঁকাপড়া করে ফেলেছে। তাই ছুঁৎমার্গ আছে। যদিও পচা-কালুয়ারা বেশ বাধ্য। যা বলে তাই শোনে। শিরোমণি আটভাট যা বকে মুখ বুজে সমর্থন করে। তবে বেশি মুখ বুজে থাকলে শিরোমণি বেশ রাগ করে। আর সমর্থন করলে একটু তোল্লাই তো দিতে হবে। সেটাও ব্যাটারা দেয় না।
আরও পড়ুন: স্যানিটাইজারে GST! এ বার পাকিস্তান শেষ
খানিক বিরক্ত হয়ে শিরোমণি বলে, ‘কী রে, তোদের কি সব সাপ শুঁকে গেল নাকি? মুখে কোনও কথা নেই।’ এটা শিরোমণির নতুন অভ্যাস। কথায় কথায় হিন্দি প্রবাদ বাংলা করে বলে সে। কালুয়া মাধ্যমিক পাশ করেছে বছর দশেক আগে। সে বলে ওঠে, ‘শিরোমণি দা, দাদা সে দিন একটা কথা বলেছিল, সেটা কিন্তু হাসপাতাল রিলেটেড। ওটা দাদার বলা উচিত হয়নি।’ শিরোমণি ভ্রূ কুঁচকে কালুয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘কোন কথাটা?’
উত্তরে কালুয়া বলে, ‘আরে ওই যে বলল না, হাসপাতাল কালচার ছাড়তে হবে। আরে দাদা কী বলব, পাঁচ মাস আগে বাবার শরীর খারাপ হল। গেলাম সরকারি হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তার দেখে বলে পেচ্ছাপের কয়েক রকম পরীক্ষা করাতে হবে। তার মধ্যে একটার রিপোর্ট হতে তিন দিন লাগবে। পর দিন পরীক্ষার কাউন্টারে গিয়ে বাবার হিসু জমা দিয়েছিলাম। এক পিস কম্পাউন্ডার গোছের মাল ছিল, সে বলেছিল, কালচার রিপোর্ট নিতে শুক্কুরবার আসতে হবে। একদিন বেশি সময় লাগবে। আমি তো শুনে থ। সালা হিসুরও আবার কালচার হয় নাকি। আমি তো জানতাম সব সমান। আমাদের মতো সব গটরে ভেসে যায়। অদিতির বাপটাও এই বলে আমায় একদিন গালাগাল করেছিল। বলেছিল, গটরের কীট। সালা খুব ইচ্ছে করেছিল মালটার গলায় দিই একটা পোঁচ লাগিয়ে। ওর মেয়ের কথা ভেবেই সে দিন...’
আরও পড়ুন: রেল-কয়লা-জাহাজ-পেট্রোলিয়াম-LIC বিক্রি আছে-ইয়াই
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই শিরোমণি বলে ওঠে, ‘ও, হাফসোল খাওয়া ব্যর্থ প্রেমিক, বাস্তবে ফিরে আয়। তোর চাহিদাটা কী সেটা বল।’ কালুয়া জিভ কেটে বলে, ‘সরি শিরোমণি দা, কালচারে ফিরি। তা হাসপাতালে যদি হিসুর কালচার বন্ধ হয়ে যায় তবে মন্দিরে কী ভাবে...’ ধমকে ওঠে শিরোমণি ‘চোপ... এই বুদ্ধি নিয়ে তুই দলে নাম লিখিয়েছিস! আরে মানুষের হিসু তো গলতাই মাল। মন্দিরে গরুর হিসু মানে গোমূত্র থাকবে। ও সব কালচার-ফালচারের কোনও প্রয়োজনই পড়বে না। সব রোগ ফিনিস। শোন, তোদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, এ রাজ্যে দাদা যেটা বলছে, সেটাই দলের এজেন্ডা। দাদা সৎ মানুষ, দুমদাম সবার সামনে বলে ফেলে। মোদ্দা কথা গোবর-গোমূত্র খাওয়ার কালচার ফিরিয়ে আনতে হবে। বামুনদের পৈতে হওয়ার সময় দেখিসনি ওদের খাওয়ানো হয়? তার মানে কী, শাস্ত্রে খাওয়ার কথা লেখা আছে রে পাগলা। লোকে বাজে তর্ক করতে এলে এ সব তোদের বলতে হবে।’
আরও পড়ুন: বাড়ছে GDP, ভক্তগণ বাজাও তালি
শিরোমণি ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বলে, ‘বেশ রাত হয়েছে। তোরা সব বাড়ি যা। আর কালুয়া, কাল থেকে এক ঘণ্টা আগে এসে ক্লাস করিস। মেয়েদের পিছনে ঘুরঘুর না করে মন দিয়ে দলটা কর। দেখেছিস আমাদের অবতার জীকে, কেমন করে বউকে ছেড়ে, সংসার ছেড়ে সাধারণের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। শেখ কিছু, শেখ। জ্যায় সিরি রাম...’ বলে কপালে হাতজোড় করে শিরোমণি।
বাকিরাও দেখাদেখি, ‘জ্যায় জ্যায় সিরি রাম’ বলে কপালে হাত ঠেকায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে “রামের নামে” ফের চলল গুলি। ৭২ বছর পরেও যে নাথুরাম গডসে জীবিত রয়েছে
হলফ করে বলা যায়, সিরিজটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সিনেমার আকারেও তৈরি করা যেত।
সম্প্রতি দিল্লিতে হিন্দু মহাসভা ‘ভগবানের অবতার করোনা ভাইরাস’ থেকে বাঁচতে গোমূত্র পার্টি অরগ্যানাইজ ক
এ বারের বক্তিমে “ছাত্রোঁ কে লিয়ে”। ওই “মিত্রোঁ”বলতে গিয়ে ছাত্রোঁ বলে ফেলেছেন। তা বলে ফেলেছেন যখন, তখ
শুধুমাত্র বিদ্যা বালানের অভিনয়ের জন্যেই সিনেমাটি একাধিকবার দেখে ফেলা যায়, ‘বিদ্যা কসম’।
করোনার কালো গ্রাসে এ বছর সবই গিয়েছে। না রয়েছে বিক্রেতাদের পসার, না হয়েছে মেলা, বাতিল হয়েছে বাউল গান