"অনিলদার করোনা হয়েছে শুনেছ? হসপিটালে ভর্তি করল।'
খবরটা পেয়ে রীতিমত চমকে উঠেছিলাম। এতদিন এর হয়েছে, তার হয়েছে খবর পেতাম, এখন সে ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে এমন খবর শুনলে ভয় তো লাগবেই।
সঙ্গে সঙ্গে অন্তরাকে ফোন করি, জিজ্ঞেস করায় ও জানাল, ‘হ্যাঁ রে জেঠুর করোনা ধরা পড়েছে, বাবারও।' পাশের বাড়ির একই পরিবারের দুজনের পজিটিভ রিপোর্ট, এটুকু কথাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু পরের কাহিনি আরও ভযঙ্কর।
অন্তরা মজুমদার, আমার ছোটবেলার বন্ধু, একই সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা আমাদের। আজ তার গোটা পরিবার এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তাদের পাশে কেউ নেই, সরকার, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিছুই না। গত 18 জুলাই অনিল জেঠুর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপর দশ দিন পেরিয়ে গেছে, বাড়ি স্যানিটাইজ করতে আসেনি কেউ, জেঠুকে হসপিটালে ভর্তি করতে হিমসিম খেতে হয়েছে বছর চব্বিশের মেয়েটাকে।
অন্তরা জানায় "16 জুলাই থেকেই জেঠুর শরীর খারাপ হতে থাকে। কিডনির সমস্যা ছিলই, হঠাৎ করে শরীরে সোডিয়াম পটাশিয়াম মাত্রাও কমে যায়। অবস্থার অবনতি হতে থাকে ক্রমশ। বাধ্য হয়ে নারায়ানা হসপিটালে নিয়ে যাই, কিন্তু তারা COVID-19 টেস্ট করিয়ে আনতে বলে। সিএমআরআই-তে গেলে সেখান থেকে বলা হয় ওই অসুস্থ রোগীকে নিয়ে 6 ঘণ্টা বসে থাকতে হবে। কী করে সম্ভব? আবার তখন নারায়ানায় ফোন করলে ওরা বলে নিয়ে আসুন এখানেই টেস্ট করে নেওয়া হবে। ওখানে ভর্তি করি জেঠুকে। 18 তারিখ রিপোর্ট পজিটিভ আসায় ওরা জেঠুকে COVID হসপিটালে সরিয়ে নিতে বলে। তারপরই শুরু হয় আমার যুদ্ধ। স্বাস্থ্য দফতরকে বারবার ফোন করে পাইনি, অবশেষে যখন পেলাম তখন জানাল, ‘সরকারের ঘরে আর বেড নেই। নিজেরা ব্যবস্থা করুন।' নিজেরা কী ব্যবস্থা করব? বেড যদি নেই তবে খবরে কেন বারবার বলে যে বেড আছে? এরপর ঢাকুরিয়া AMRI-তে গেলে বলা হয় 509 নম্বরে নাম, অর্থাৎ মোটামুটি 2-3 সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে বেড পেতে। সেখান থেকে উডল্যান্ডসে যাই। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যা বেড আছে সব রিসার্ভড। উপর মহলের কারও কিছু হলে তবেই সেই বেড পাওয়া যাবে। সাধারণের জন্য নয় সেই বেড। তখন বুঝলাম বাইরে পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে থাকা পর্শে, মার্সিডিজের পাশে আমার ছোট্ট সুইফট ডিজায়ারের জায়গা হবে না। উপর মহলের সঙ্গে ভাব থাকলে হত। ওদিকে জেঠুর অবস্থা ক্রমশ খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। বন্ধু'রা বলে ক্ষমতাশালী কারও রেফারেন্স নে, নইলে হবে না। তখন সেই সোর্স ধরেই ডিসানে ভর্তি করাই। এদিকে বাবারও তখন করোনার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। দেরি না করিয়ে সোজা হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখন দু’জনই ভর্তি। বাবা ঠিক আছে, তবে জেঠুর কী হবে জানি না। আমাদের কারও টেস্ট করায়নি সরকারের তরফে, আমরা নিজেরা নিজেদের উদ্যোগে বেসরকারি ল্যাবরেটরি থেকে COVID পরীক্ষা করিয়েছি। রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বাড়ির বাকিদের।'
অন্তরার গোটা বক্তব্য শুনে অবাক হয়ে গেলাম। সোর্স ছাড়া চিকিৎসা পাওয়া যাবে না? যাদের সোর্স নেই তারা তবে বিনা চিকিৎসায় হয় সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করবে নইলে প্রাণ দেবে? রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই চিত্র দেখে শুধু শঙ্কিত নই, আতঙ্কিতও। গোটা পাড়ায় ত্রাস ছড়িয়ে গেছে। লক ডাউনের দিনগুলো ছাড়াও পাড়া জনমানব শূন্য।
কিন্তু দশ দিন পর কেন স্যানিটাইজ করা হল? অন্তরা বারবার স্বাস্থ্য দপ্তরকে ফোন করলে তারা এড়িয়ে যায় বিষয়টা। কাউন্সিলরকে জানাতে বলে তারা। অন্তরা জানায়, "কাকে জানাব? সে তো দেখাই করছে না। যোগাযোগই করা যাচ্ছে না ওঁর সঙ্গে। ক’দিন আগে গোপাল কাকু যখন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়ে একদিন বাড়িতে পড়ে রইল, গোটা রাজ্য সেই খবরে তোলপাড় হল তখনও তো তিনি বের হননি। আজও যখন যোগাযোগ করতে চাইলাম সাড়া মিলল না তাঁর। সেই সোর্স ব্যবহার করেই বাড়ি স্যানিটাইজ করাতে হল।'
করোনার ভয়ে ঘরে খিল দিয়েছেন কাউন্সিলর। তবে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়লে কার কাছে যাবে? কী করে তাদের সমস্যা সুরাহা করবে? নাকি এখন থেকে সবারই অন্তত একটা করে ক্ষমতাশালী সোর্স রাখতে হবে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য, অন্তত অন্তরার ঘটনা সেই দিকেই নির্দেশ দিচ্ছে। করোনার সঙ্গে লড়াই তো পরে আগে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হবে বর্তমান পরিস্থিতিতে।
পরবর্তীকালে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। কিন্তু যাওয়ার সময় পুলিশের সামনেই হুমকি দিয়ে যায়
কলকাতা মেডিক্যালের ইন্টার্নরা জানিয়েছেন, প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মী N95 মাস্ক পাননি। হচ্ছে না স্বাস্থ্
বাংলা সিনেমার দর্শক সংখ্যা কী কমছে? নেপথ্যে কী কারণ?
জয় শ্রীরাম বনাম জয় বাংলা ধর্মীয় সত্তার রাজনীতি বনাম ভাষা সত্তার রাজনীতি
সারদা থেকে নারদা হয়ে ভ্যাকসিন, ‘কেলো’ যেন আর তৃণমূলের পিছু ছাড়ছে না!
সব শাশুড়ি কি সমান হয়? ভাল মন্দ কি সকলের মধ্যেই থাকে না?