×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • জয় শ্রী রাম বনাম জয় বাংলা

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 19-02-2021

    প্রতীকী ছবি

    মোদীর ‘জয় শ্রী রাম’-কে সমানে সমানে টেক্কা দিচ্ছে মমতার ‘জয় বাংলা'বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে অন্য রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা বিশেষ শোনা যাচ্ছে না প্রধান দুই প্রতিপক্ষের মুখে। এক ঈশ্বরের নামে রণহুঙ্কার বনাম এক জাতিসত্তার নামে জয়ধ্বনিই হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলার রাজনীতি। এই প্রসঙ্গে চলে আসছে দুটি স্লোগানের মধ্যে কোনটি বহিরাগত, কোনটি স্বদেশী সেই বিতর্কও।

     

    কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে 23 জানুয়ারি নেতাজির জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তৃতা দিতে উঠলে জয় শ্রী রামধ্বনি ওঠে দর্শকাসন থেকরেগে যান মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। এমনটা প্রথমবার ন। এর আগেও তিনি জয় শ্রী রাম ধ্বনি শুনে তেড়ে গিয়েছেন। তাঁর মতে, এটি রাজনৈতিক স্লোগান, যা কখনই এই ধরনের সরকারি অনুষ্ঠানে (নেতাজির জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে) ব্যবহার করা যেতে পারে না। এর বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ জানান এবং জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। এরপরই শুরু হয় জয় শ্রী রামবনাম জয় বাংলাবিতর্ক।

     

    বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তাঁর সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে প্রশ্ন তোলেনমমতা ব্যানার্জি কি গ্রেটার বাংলাদেশবানাতে চাইছেনতাহলে ইসলামিক বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ব্যবহার করছেন কেন?  দলের রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতা এই প্রশ্ন তুললেও বিজেপি যে মূল রাজনৈতিক বিচারধারা অনুসরণ করে, তার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল অখণ্ড ভারত নির্মাণ এবং সেই অখণ্ড ভারতের মধ্যে আজকের পাকিস্তান, বাংলাদেশ সবই পড়ে। দিলীপবাবুর অনুগামীদের অবশ্য সকলের সেটা জানা নাও থাকতে পারে!

     

    জয় শ্রী রামএর উৎপত্তি বা প্রথম ব্যবহার নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও এর জনপ্রিয়তা যে টেলিভিশনের যুগ থেকেই শুরু, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। 1980 সালে দূরদর্শনে রামানন্দ সাগরের রামায়ণছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান এবং সেখানে রামভক্ত হনুমানের মুখে এই ধ্বনি বারবার শোনা যায়। এরপর অযোধ্যার রামজন্মভূমি আন্দোলনের মূল স্লোগান হয়ে ওঠে এটি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদবিজেপি এবং সংঘ পরিবারের অন্যান্য সংগঠনগুলোর মুখে এই স্লোগান ধ্বনিত হতে থাকে বারংবার। 1992 সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়েও শোনা যায় জয় শ্রী রামস্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক একটি অধ্যায়ের সঙ্গে এই ধ্বনিটি জড়িত বলেই বিজেপি-বিরোধী রাজনীতিদৃষ্টিতে এটি একটি বিভাজনপন্থী রণহুঙ্কার। এর রাজনৈতিক ব্যবহার শুরু গোবলয়েঅর্থাৎ উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাঙালির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এটি তাই একটি বহিরাগত স্লোগান।

     

    জয় বাংলাএই স্লোগানটির জন্ম হয় 1922 সালে অবিভক্ত বাংলায়। জন্মদাতা বিদ্রোহী কবি নজরুল। তিনি তাঁর পূর্ণ অভিনন্দন’ কবিতার পঞ্চম স্তবকে লেখেন, ‘জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্রজয় জয় আদি অন্তরীণ।' 1922 সালে যখন অবিভক্ত বাংলা তথা গোটা দেশ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসছে, তখন এই কবিতাবা কবিতাগুলোর বিশেষ কোনও লাইন মানুষের মুখে মুখে স্লোগান হিসেবে ঘুরতে থাকতউদ্দীপনা জোগ বিদেশি শাসকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সংগ্রামেস্বাধীনতার পর ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উত্থানের ফলে তদানীন্তন বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের উপর শুরু হল উর্দুভাষী পশ্চিমের পীড়ন। বাংলাদেশের সেই মুক্তিযুদ্ধেই বারংবার এই স্লোগান মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করতে শোনা যায়। নজরুলের এই কবিতা তখন তাদের কাছে অনুপ্রেরণা ছিল। 1972 সালে নজরুলকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় স্বাধীন বাংলাদেশ এবং জয় বাংলাহয়ে ওঠে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান। যদিও পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হত্যার পর 1975 সালে জয় বাংলা’- বদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ হয়ে ওঠে তাদের জাতীয় স্লোগান। কিন্তু আবারও একটি জনস্বার্থ মামলার সূত্র ধরে আদালতের রায় অনুসারে এর 10মার্চ 2020 থেকে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগানের তকমা পায় জয় বাংলাঅতএব, আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি-র গলায় বারবার যে জয় বাংলাশোনা যাচ্ছে তার বহুল ব্যবহার বাংলাদেশে হলেও জন্ম অবিভক্ত বাংলায়। সুতরাং, এই স্লোগানকে এপার বাংলার মানুষ নিজেদের বলে দাবি করলেও করতে পারে। সেখানে ভুল নেই। 

     

    আজকের ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রচারকেন্দ্রিক রাজনীতি ঠিক ভুলের ধার ধারে না। জয় শ্রী রাম এবং জয় বাংলা একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতেআসলে এটা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বনাম ভাষা পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির লড়াই


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    সরকারি স্কুলের বাচ্চারা তো স্কুলে ফিরল, বেসরকারি স্কুলের বাচ্চাদের কী হবে?

    মা কি সবার ক্ষেত্রে এক হয়? নাকি তফাৎ থাকে কোথাও?

    মহামারীজনিত আইনগত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করল সরকার, প্রায় দু’বছর পর মুক্ত জীবন ফিরে পেল দেশবাসী।

    উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি অংশের যোগাযোগের প্রধান সেতু আজ বিপন্ন

    বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারের খালবিলে থিকথিক করছে রাক্ষুসে সাকার মাছ

    শাহিনবাগ, সিংঘু বা চেন্নাই, প্রতিরোধের সামনের সারির দখল এখন মহিলাদের হাতেই।

    জয় শ্রী রাম বনাম জয় বাংলা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested