নাটকের মূল ভিত্তি- মঞ্চ এবং দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। করোনার বিধি-নিষেধে যেহেতু এই মুহূর্তে তা করা যাচ্ছে না, তা-ই লকডাউনে ঘরে বসেই নাটক নিয়ে নতুন ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করেছে ‘ফোর্থ বেল থিয়েটার’। আগের মতো নাটকের যৌথ মহড়া এখন প্রায় অসম্ভব। তাই, কয়েকজন থিয়েটার শিল্পীকে নিয়ে ‘অডিও প্লে’ সিরিজ বানাচ্ছেন তাঁরা। কোয়ারেন্টাইনে তাঁরা প্রত্যেকেই বাড়িতে বসে অডিও-অ্যাকটিং রেকর্ড করেছেন এবং তারপর এডিটিং-এর মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের অভিনীত কন্ঠ, ইলাস্ট্রেশন, মিউজিক। বিশেষত্ব এটাই। ‘মনে রেখো’, ‘তৃতীয় ইচ্ছে’, ‘লকডাউন কোলাপ্স’, ‘মনের কাজ’, ‘কোয়ারেন্টাইন টেলস্’-এর পর ‘বিরিঞ্চি বাবা' তাঁদের আরেকটি উপস্থাপনা। মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ সরকার এবং দলের অন্যান্য সদস্যরা। লকডাউনে ‘বিরিঞ্চি বাবা'-তে অভিনয়ের অভিনব অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ফোর্থ পিলার্স-এর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন কলাকুশলীরা।
‘বিরিঞ্চি বাবা’ নি:সন্দেহে একটি প্রসিদ্ধ এবং ভাল নাটক। আমার কেন, অনেকেরই ইচ্ছে হয়েছে এই নাটকটি করার। পুরনো ক্লাসিক নাটকের মধ্যে 'বিরিঞ্চি বাবা' অন্যতম, সেই নাটক যাতে এই সময়ের দর্শকের কাছে পৌঁছে যায়, তা-ই এই নাটকে আমার অংশ নেওয়া। আমরা সবাই লকডাউনে বাড়িতে বসে বসে এই নাটকটা তৈরি করেছি, সাধারণত যেভাবে শ্রুতিনাটক হয়, সেরকমভাবে হয়নি এটা। ফলে, কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। ফোনে ফোনে নাটক প্র্যাকটিস করেছি। এরকম হয়েছে, নিজের সংলাপ সহ-অভিনেতাকে রেকর্ড করে পাঠিয়েছি, সে আবার তার সংলাপটা আমায় রেকর্ড করে পাঠিয়েছে, এভাবে একে অপরের ‘রেকর্ডেড’ সংলাপ শুনে শুনে নিজেদের ‘রিঅ্যাকশন’ দিয়েছি। এটা করতে গিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, যেটা আমার ভীষণ ভাল লেগেছে,“ বলছিলেন কাঞ্চন মল্লিক।
আরও পড়ুনঃ |
নতুন প্রযোজনায় নিজের অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিনেত্রী স্নেহা চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “আমি ‘বিরিঞ্চি বাবা’-তে ‘মিসেস মল্লিক’ চরিত্রটি করেছি, যে প্রথমে বিরিঞ্চি বাবা-তে মশগুল হয়ে গেছিল। আরে বাপরে! সে এক কাণ্ড! তবে সবটা জানার পরে সে একেবারে সিরিয়াস হয়ে যায়। এত বড় একটা প্রোডাকশন, এত সুন্দর ব্যবস্থাপনা, তার একটা অংশ হতে পেরেই আমার খুব ভাল লেগেছে। এই চরিত্রটা একেবারেই আমার মতো নয়। আমায় বলা হয়েছিল গলার স্বর পাল্টে ফেলতে, গলায় একটা ‘ন্যাকান্যাকা’ ব্যাপার আনতে। সেটা ভীষণ মজার ছিল আমার জন্য। এ ছাড়াও কিছু কোরাসের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গলা করেছি এখানে। লকডাউনের মধ্যে মানুষের শোনার অভ্যেসটা ফিরে এসেছে বলেই মনে হয়, যাতে সবার এই অভ্যাসটা থেকে যায় তারই প্রচেষ্টা এটা।“
‘বিরিঞ্চি বাবা'র পরিচালক রোমিত গাঙ্গুলির কথায়, “নাটকটা করার কারণ অবশ্যই পরশুরামের গল্পের স্পিরিট, যা অবিকৃত রয়েছে উজ্জ্বল মণ্ডলের নাট্যরূপে। প্রথমত, গল্পের মধ্যে আছে সহজ এবং বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরস, যা মধ্যবিত্ত বাঙালির অত্যন্ত নিজস্ব। আমাদের এটা ভাল লাগে। আমাদের এটা আনন্দ দেয়। দ্বিতীয়ত, আমাদের অতি ভক্তি এবং অকারণ ভয়ই যে আমাদের প্রশ্ন করতে দিচ্ছে না - এই বিষয়টার প্রতি পরশুরাম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই গল্পে। এহেন গুরত্বপূর্ণ বিষয়কে উনি ‘কমিউনিকেট’ করেছেন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। যার মধ্যে কোনও violence নেই। কোনও vulgarity নেই। আর এই কারণেই এই সময়ে ওনাকে আমাদের প্রয়োজন। তৃতীয়ত, গল্পটার মধ্যে আমি একটা সেলিব্রেশন খুঁজে পাই। একটা সাধারণ মানুষের জিতে যাওয়ার গল্প এটা। ‘ফোর্থ বেল’ চেষ্টা করে শক্ত কথা সহজ ভাবে বলতে, নাচ, গান, হিউমারের আঙ্গিকে বলতে, যাতে সেটা সহজে মানুষের কাছে পৌঁছয়। সর্বপরি নাটকটা দেখে মানুষ যাতে আনন্দ পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তাই এই নাটক নির্বাচন।
আরও পড়ুনঃ |
এই নাটকেও গান একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে গল্পের বক্তব্যকে মজার ছলে তুলে ধরতে। গান লিখেছেন ও সংগীত পরিচালনা করেছেন ইন্দ্রনীল মজুমদার। দৃশ্যত আমরা স্কেচ ব্যবহার করেছি যাতে দর্শক ছোটবেলার গল্পের বই-এর পাতা ওল্টানোর আমেজ পান। ছবি এঁকেছেন সূর্যকান্ত পাঠক।
এই নাটকে আমার অন্যতম প্রিয় চরিত্র ‘সায়েন্টিস্ট’ ননী, যিনি একজন বৈজ্ঞানিক হয়েও ভয়ে-লজ্জায় শ্বশুরমশাইকে বলতে পারছেন না যে, ‘বাবাজি ভন্ড’। আমার মনে হয়, বাবাজিদের থেকেও বেশি 'ননী'দেরকে উদ্দেশ্য করেই পরশুরাম হয়তো এই গল্প লিখেছেন। ননী সায়ন্টিস্ট হলেও, ননী আমাদের চারপাশে দেখা একজন ছাপোষা, 'সাতে নেই পাঁচে নেই' বাঙালি, একজন শিক্ষিত সাধারণ মধ্যবিত্ত। শিক্ষিত সাধারণ মধ্যবিত্ত সারাক্ষণ তার ‘ভ্যালু-সিস্টেম’ নিয়ে স্ট্রাগল করে। তার ভিতর সারাক্ষণ একটা দোলাচল চলে। এদিকে না ওদিকে, কোনদিকে থাকব? এইখানেই ‘হিউমারটা’।“
শহরের অচেনা 'গানওলা' স্বপন সরকার
দূরত্ববিধি মেনে চলার বিষয়টা একপ্রকার 'মিথ'ই। টলিপাড়ায় করোনা-পরিস্থিতি 'বিট' করছে কীভাবে?
শিয়ালদহে রেল প্রথমবার ঝড় থেকে বাঁচতে ‘সিকিউরিং' প্রক্রিয়ার সাহায্য নিচ্ছে।
সোশাল মিডিয়া জুড়ে যুবসমাজের এক বিশাল অংশকে এই ‘করোনা উৎসব'কে ব্যঙ্গ করতে দেখলাম।
দশ টাকার চাল-ডালের জন্য মরিয়া ভারতসন্তান তোমার।