×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কারও উল্লাস, কারও তীব্র ব্যঙ্গ

    অর্যমা দাস | 06-04-2020

    প্রতীকী ছবি

    5 এপ্রিল, রাত 9টা। দমদম হনুমান মন্দির চত্ত্বর হঠাৎ কেঁপে উঠলো শব্দবাজির আওয়াজে। ছাদে উঠে চারদিকটা দেখে গুলিয়ে গেল, এটা একটা লকডাউনের রবিবার না কালীপুজো। দেখলাম গুনে গুনে 8-10টা বাড়ির ভিতরে আলো জ্বলছে। এছাড়া সমস্ত বাড়ি অন্ধকার। এদিকে লাইন করে ছাদের পাঁচিল বরাবর মোমবাতি দিয়ে দীপাবলির মতো সাজানো হয়েছে, আকাশে ফাটছে বড় বড় রকেট, শেল, রাস্তায় তুবড়ি, রঙমশাল, চরকি। চারদিক থেকে শব্দবাজির মারাত্মক আওয়াজ, তারস্বরে উল্লাস এবং থালা-শাঁখ বাজানো। উৎসব পালিত হল। রাত ন’টা থেকে 9মিনিট কখন ছাড়িয়ে গেল মনেই থাকল না কারও।

     

    আমার বাড়ির একটা আলোও নেভেনি তখন। পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে তখন কম করে 15টা মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বলছে সোশাল ডিসট্যান্সিংকে গুলি মেরেই। সবক’টা ফ্ল্যাশলাইট আমাদের ঘরের জ্বালানো আলোর দিকে তাকিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ করে যাচ্ছে উঁচু গলায়, যেন আমার এই এলাকায় থাকারই যোগ্যতা নেই। আমার ল্যাপটপে তখন জোরে গান বাজছে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে'। 

     

    9.30 নাগাদ এক বান্ধবীর সঙ্গে ফোনে কথা হল। সে বলল, স্কুলে পড়াকালীন এক মামা মলেস্ট করেছিল তাকে। এই পৃথিবীতে কাউকে যদি ও চরম ঘেন্না করে, তাহলে সেই মামা। কিন্তু, কোনও দিন যদি শোনে তিনিও করোনা আক্রান্ত, তবে ওরও কষ্ট হবে। যে দেশে 4 হাজারেরও বেশি লোক করোনা আক্রান্ত, একশো জনের বেশি মানুষ মৃত, সেখানে কীভাবে মানুষ উৎসব করছে? মেয়েটির খুড়তুতো বোনের 3 বছর বয়স। ও রাজনীতি বোঝে না, কিন্তু এই তীব্র আওয়াজে ভয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছে। মায়ের কোল থেকে নামছে না সে। 

     

    তবে রবিবার রাতের এই মহোৎসবের পর আমি অন্য এক আশা দেখছি। শিক্ষার আশা, যুক্তিবাদের আশা, কৌশল ধরে ফেলার আশা। কালকে সোশাল মিডিয়া জুড়ে যুবসমাজের এক বিশাল অংশকে ‘করোনা উৎসব'কে ব্যঙ্গ করতে দেখলাম। তাঁদের মতে "এর আগের জরুরি অবস্থায় কর্মরত মানুষদের শ্রদ্ধা জানাতে থালা-কাঁসর বাজানোটা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজকেরটা যে কেবলমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেটা বোঝাই যাচ্ছে। বিজেপি দলের জন্মদিন উদযাপন হল সারা দেশ জুড়ে।’ যুবসমাজের একাংশের কাছে রবিবার রাতে অকাল দীপাবলি পালনের এটাই গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা। করোনা প্রতিহত করার জন্য যে শুধুমাত্র সোশাল ডিসট্যান্স বজায় রাখতে হবে এবং গৃহবন্দি থাকাই একমাত্র ওষুধ তা বুঝেছেন বহু মানুষ। সমাজের একাংশের উল্লাসকে তীব্র ভর্ৎসনা করার সৎসাহসও হয়েছে সোশাল মিডিয়া নেটিজেনদের, অর্থাৎ সমাজেরই আর একটা বড় অংশের।
     


    অর্যমা দাস - এর অন্যান্য লেখা


    জীবন গোছানোর তাগিদে তাঁর পড়াশোনাটা হয়ে ওঠেনি কখনোই

    বিরল এক শিল্পকর্মের জন্য ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডে নাম উঠল জলপাইগুড়ির শুভ্রা মণ্ডলের।

    আমার নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়ার তুমি কে হে বাপু?

    অনলাইন আদানপ্রদানের ফলে কীভাবে খরচ এবং পরিশ্রম কমানো যায়, তা বুঝেছেন অনেকেই।

    শিয়ালদহে রেল প্রথমবার ঝড় থেকে বাঁচতে ‘সিকিউরিং' প্রক্রিয়ার সাহায্য নিচ্ছে।

    দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে তৈরি হল গান-

    কারও উল্লাস, কারও তীব্র ব্যঙ্গ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested