ছোটবেলায় আঁকার খাতায় বাদামি রঙের পাহাড়, সবুজ মাঠ, নীল নদীর সঙ্গে একটা কী দু’টো বাড়ি আর মানুষ আঁকা থাকত। সঙ্গে থাকত হরেক রকম ভাবনার প্রতিফলন। কী ভালই না লাগত, কিন্তু কতজন ছোটবেলার সেই ভাললাগাকে আজীবন বইতে পারে? ছোটবেলার ভাললাগাগুলো সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। সেই খাতা, রং বাক্স-বন্দি হয়ে পড়ে থাকে স্মৃতিতে। দিন বদলেছে, বদলেছে আঁকার সংজ্ঞা, সরঞ্জাম, মাধ্যম। খাতা, রং, ক্যানভাসে আর সীমাবদ্ধ নেই আঁকার জগৎ। মুঠোফোন, কম্পিউটারেও দিব্যি কল্পনা-রং-রেখা ফুটিয়ে তোলা যায়, আর এরই পোশাকি নাম "ডিজিটাল আর্ট’।
ডিজিটাল আর্ট জিনিসটা আসলে কী? এটি এমন এক ধরনের মাধ্যম যেখানে ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনই হয়ে ওঠে ক্যানভাস, সেখানেই ধরা পড়ে শিল্পীদের ভাবনা। শিল্পীমহলে ডিজিটাল আর্টের প্রচলন ইদানিং হয়েছে এমনটা নয়, কিন্তু ইদানিং সর্বসাধারণের মধ্যে তার চর্চা বেড়েছে। কারণ, লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষের হাতে প্রচুর সময়। কাজ, পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় অনেকটা সময় দিচ্ছেন। শুধু শিল্পীরা নন, ছোটবেলার শখ অথবা শুধুমাত্র ভাললাগার জায়গা থেকে ডিজিটাল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ছবি এঁকে সময় কাটাচ্ছেন অনেকেই। এমনকী লকডাউনে এই নিছক ভাললাগাকেই অনেকে উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
আর্ট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, শিল্পী সপ্তদীপ দে সরকার জানান, "বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকের কাছেই আঁকার সরঞ্জাম প্রায় শেষ, আমারই যেমন সব রং শেষ। কিন্তু মানুষের কাছে ডিজিটাল প্যাড, কম্পিউটার আছে, আর সেখানে সহজেই আঁকা যায়। ফলে এই লকডাউনে ডিজিটাল আর্ট সহজলভ্য। তা ছাড়া ডিজিটাল আর্টের জন্য আর্ট কলেজ থেকে বা কোনও শিল্পীর থেকে আঁকার তালিম নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যে কেউ আঁকতে পারে। পেন পেপারে অনেক সময় যা করা যায় না, ডিজিটালি তা করা সম্ভব। আর ইদানিং ডিজিটাল আর্ট বিভিন্ন প্রোডাকশনের কাজ বা ফিল্মের কাজেও ব্যবহার হয়।'
ডিজিটাল পেইন্টার জয়িতা কর্মকার জানান, "আমি ইতিহাস নিয়ে পড়লেও ছোট থেকেই আমার ঝোঁক আঁকার দিকে। আগে খাতায় আঁকতাম, এখন দেড় বছর ধরে এই ডিজিটালি আঁকছি। ছোটবেলায় আমায় আঁকার স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল, তারপর থেকে ক্যানভাস, রং তুলি এসব দিয়েই আঁকতাম। একদিন দেখলাম একটি অ্যাপে আঁকা যাচ্ছে। সেটা দেখে বেশ মজা লাগল, ভাবলাম নতুন কিছু করা যাক। সেই থেকে শুরু, ইদানিং তো ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করছি। দারুণ লাগছে।'
শিল্পী: জয়িতা কর্মকার
শিল্পী: জয়িতা কর্মকার
আরও একজন ডিজিটাল পেইন্টার, কলকাতার শর্মিষ্ঠা পাল। তিনি বলেন, "আমি বিসিএ পড়ছি, সারাদিন কোডিং, প্রোগ্রামিং এর মাঝে আঁকা আমায় শান্তি দেয়। 2019-এর আগস্ট থেকে আমি ডিজিটাল আর্ট শুরু করেছি। কোনওদিন এটাই করব বলে শুরু করিনি, আসলে সবসময় সব জায়গায় আঁকার সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া যায় না। কিন্তু ফোন সবসময় সব জায়গায় সঙ্গে থাকে, ফলে যখন খুশি আঁকা যায়। আমি আমার মুডের উপর নির্ভর করেই আঁকি, ফলে সুবিধা হয়। এক একটা ছবি আঁকতে 6-7 ঘণ্টা লেগে যায়। ডিজিটাল আর্টের ফলে আমার ধৈর্য অনেক বেড়েছে। ভাল লাগে বেশ।'
শিল্পী: শর্মিষ্ঠা পাল
একই সুর বাদলাপুর নিবাসী শাশ্বত মন্ডলের গলায়। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার শাশ্বত জানান, "ক্লাস টুয়েলভ থেকেই আঁকা শুরু করি। কিন্তু যা হয়, সময়ের অভাবে আর এদিকে মন দেওয়া হয়নি। লকডাউন আবার সেই সুযোগ করে দিল। খাতায় রং, তুলি দিয়ে আঁকতে অনেকেই পারে না, ডিজিটাল আর্ট তাদের কাছে একটা সুযোগ মনের ভাব ফুটিয়ে তোলার। এখন কাজের পর অবসর সময়ে আঁকা নিয়েই আছি।'
‘ডিজিটাল আর্ট’ই কি তাহলে লকডাউনের অন্যতম সুফল? বিশিষ্ট শিল্পী সমীর আইচ অবশ্য বলছেন, "ডিজিটাল আর্টকে পেইন্টিং না বলে গ্রাফিক্স বলা ভাল। আর গ্রাফিক্স বহুদিন ধরেই আছে, বিশেষ করে কমার্শিয়াল কাজে তো ব্যবহার হয়ই। বর্তমানে সেটাই ডিজিটালি করা হচ্ছে। এটা অবশ্যই একটা নতুন মাধ্যম। এটাকে এক্সপ্লোর করা যেতেই পারে, ভবিষ্যতে আরও বেশি করে কাজে আসতে পারে। কিন্তু এটাকে পেইন্টিং বলা ঠিক নয়।'
কলকাতা মেডিক্যালের ইন্টার্নরা জানিয়েছেন, প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মী N95 মাস্ক পাননি। হচ্ছে না স্বাস্থ্
আগের ফুলে থেকে কাজ করতে পারছিল না বলে মউদি ফুল বদল করল
এই 2020 সালেও সমাজের চোখে নব বিবাহিত বরের মৃত্যু মানেই কনে অপয়া রাক্ষসী
মানুষ যাতে নিজেকে বাঁচাতে পারে, তার জন্য বাতাসে কতটা বিষ মিশছে, প্রতিনিয়ত তার হিসেব দেবে জলবায়ু ঘড
উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি অংশের যোগাযোগের প্রধান সেতু আজ বিপন্ন
শাহিনবাগ, সিংঘু বা চেন্নাই, প্রতিরোধের সামনের সারির দখল এখন মহিলাদের হাতেই।