×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মুরগির ঘাড় ভার নিতে নিতে যে ছিঁড়ে পড়ার উপক্রম

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 27-11-2020

    বিপন্ন সেবক ব্রিজ

    উত্তরবঙ্গের তথা গোটা ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ হচ্ছে করোনেশন ব্রিজ বা সেবক ব্রিজ, যা স্থানীয়দের কাছে বাঘপুল নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ শাসনকালে প্রায় 4 বছর ধরে, 1937 থেকে 1941 অবধি তখনকার সময়ে আনুমানিক 4 লক্ষ টাকা খরচ করে বানানো হয় এই ব্রিজ। এই ব্রিজ প্রস্তুতকারক ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছিলেন, সমস্ত নিয়ম মেনে এই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন ও মালবোঝাই গাড়ি গেলে এর আয়ু একশো বছর হতে পারে। সময় পেরিয়েছে, নিয়ম মানা হয়নি, হয়নি সেই অর্থে কোনও রক্ষণাবেক্ষণওকিন্তু তাও প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন এই সেতু এখনও তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। তবে আর কতদিন? এবার তার যত্ন না নিলে যে তাকে হারাতে হবে, সঙ্গে সমস্যায় পড়বেন বহু মানুষ। হয়তো ফিরে আসতে পারে কলকাতার মাঝেরহাট ব্রিজ বা বিবেকানন্দ রোড ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার মতো ভয়াবহ স্মৃতি। তবু টনক নড়ছে না কোনও সরকারেরই।

     

    উত্তর-পূর্ব ভারতের সব থেকে জরুরি সেতু হচ্ছে করোনেশন ব্রিজ কারণ তার অবস্থান। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের 22 কিলোমিটার লম্বা চিকেন নেক করিডোর’, যা পূর্ব ভারতকে বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করে, তার একদিকে বাংলাদেশ আর একদিকে নেপাল, এইখানেই অবস্থিত সেবক ব্রিজ। 2011 সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এই ব্রিজের ঠিক মাঝের অংশে একটা প্রায় 2.5 ফুট লম্বা ভাঙন দেখা যায়। এরপর থেকে বলে দেওয়া হয় অতিরিক্ত ওজনের কোনও গাড়িই এখান থেকে যেতে পারবে না। কিন্তু এই না শুধুমাত্র খাতায় কলমেই আছে, আদতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সহ অন্যান্য জিনিস বোঝাই ট্রাক, গাড়ি ইত্যাদি অতিরিক্ত ওজন নিয়েই এই ব্রিজের উপর দিয়ে পারাপার করে রোজ। ভ্রুক্ষেপ নেই সরকারের। তাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকরা।

     

    এই ব্রিজ ভেঙে পড়লে গোটা ডুয়ার্স, ভূটান সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। সেবকের এক স্থানীয় বাসিন্দা রয়িতা কর বলেন, ‘সেবক ব্রিজ ভেঙে পড়লে আমাদের এখানকার অন্যতম ঐতিহ্যশালী নির্মাণ ভেঙে পড়বে। আমবাড়ি, গজলডোবা রুটে চাপ পড়বে তখন। আগে যে রাস্তা অল্প সময়ের ছিল, তাই তখন বাগড়াকোট, দামদিম, লাভা লোলেগাঁও যেতে হলে অনেকটা ঘুর পথে গজলডোবা হয়ে যেতে হবে। একই আশঙ্কার কথা জানান কলকাতার এক ট্রাভেল এজেন্সির কর্ণধার সুপ্রতিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সেবক ব্রিজ না থাকা মানে, অতিরিক্ত সময় লাগা ডুয়ার্স পৌঁছনোর জন্য, জলপাইগুড়ি হয়ে ঘুরে যেতে হবে, ফলে খরচও বাড়বে।'

     

    এতদিন অতিরিক্ত ভার বহন করে সেবক ব্রিজের এমনই দুর্দশা, তার উপর চোখ রাঙাচ্ছে তার পিলারের নিচে থাকা মাটি ও পাথর। করোনেশন ব্রিজ নির্দিষ্ট খিলান দিয়ে তৈরি, যা নদীর দুপারে থাকা পিলারের উপর স্থিত। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, এই পিলার দুটোর একটির নিচ থেকে মাটি ও পাথর সরে যাচ্ছে ক্রমশ। একটা ফাঁপা জায়গা তৈরি হয়ে আছে, যা কোনওদিন ধসে গিয়ে বড়সর দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। কিন্তু কেন এমন অবস্থা? বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক গুরুপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘তিস্তার উপর বাঁধ নির্মাণের ফলে তিস্তার বয়ে আনা পলিমাটি, পাথর ইত্যাদি সব সেই বাঁধেই জমা হচ্ছে। এবং তারপর যখন নদী আবার বইতে শুরু করেছে তার ভার কমে যাওয়ার ফলে ক্ষয় ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে এটি ঘটছে বলেই মনে হচ্ছে।

     

    কিন্তু দেশের শতাব্দী প্রাচীন এক ঐতিহ্যশালী এই সেতুর ভবিষৎ কী তবে? রয়িতা কর বলেন, ‘আমরা চাই সরকার অনতিবিলম্বে এই ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করুক, একই সঙ্গে একটি বিকল্প সেতু তৈরি করে দিক। সরকারের কাছে ডুয়ার্স ফোরামের পক্ষ থেকে এই আবেদন জানানো হয়েছে, কিন্তু বিকল্প সেতুর জন্য জায়গা নির্ধারণ এখনও সম্ভব হয়নি, কিংবা সেবক ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের তৎপর হতে এখনও দেখা যায়নি। ফলে এই ব্রিজ এবং স্থানীয়দের জন্য কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তা অজানা।


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    রসিকতা নয়। কলকারখানা বন্ধ, আকাশ ও সড়কপথে যান চলাচল অনেক কম। সব মিলিয়ে সারা পৃথিবীতেই দূষণের মাত্রা

    পদক পেলে তবেই উন্নয়ন দোরগোড়ায় আসবে, নতুবা নয়।

    কলোরাডো নদীর জল প্রতি 1 ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে 9.3 শতাংশ কমে যাচ্ছে।

    বহুদিনের খোঁজের পর অবশেষে মিলল বিকল্প তাপশক্তির উৎস।

    ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্য তথা সাংস্কৃতিক জগতে এক বিশাল শূন্যতা রচনা করে চলে গেলেন বিরজু মহারাজ। 

    এক মহিলার রাজ্যেই অন্য মেয়েরাই নিরাপদ নয়, কারণ তিনি ধর্ষণের অজুহাত দিতে ব্যস্ত! 

    মুরগির ঘাড় ভার নিতে নিতে যে ছিঁড়ে পড়ার উপক্রম-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested