মা হওয়া কি মুখের কথা? হ্যাঁ এই প্রবচন আমরা প্রায়শই শুনে থাকি। এবং সেই কথাই আরও একবার লক্ষ্মণ উটেকর পরিচালিত এবং কৃতি শ্যানন অভিনীত ‘মিমি’ ছবিটি বোঝাল। বিদেশের মতো এই দেশেও সারোগেসি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। বিজ্ঞান যে কতটা উন্নত হয়েছে তার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে এই ‘সারোগেসি’।
বিদেশ থেকে বহু মানুষ ভারতে আসেন একজন স্বাস্থ্যবান, ভাল ‘সারোগেট’ মায়ের খোঁজে। টাকার বিনিময়ে সেই মা তার গর্ভ ভাড়া দেয়। এখানে বিষয়টা সম্পূর্ণ ভাবেই আর্থিক লেনদেন কেন্দ্রিক। যারা সন্তান চান, তারা টাকা এবং অন্যান্য ভাবে সারোগেট মাকে সাহায্য করেন, দেখভাল করেন। পরিবর্তে সেই মা তার গর্ভে সন্তানকে সুস্থ ভাবে বড় করে তোলে এবং সময় হলে তাকে জন্ম দিয়ে তাকে তার বাবা-মায়ের হাতেই তুলে দেয়। এমনই এক জোড়া হল সামার (ইভলিন এডওয়ার্ডস) আর জন (আইডেন হুয়টক), যাঁরা ভারতে এসেছেন সারোগেট মায়ের খোঁজে। ভানু (পঙ্কজ ত্রিপাঠী) তাঁদের গাড়ির চালক। ভানু সামার আর জনকে কথা দেয় অর্থের বিনিময়ে সে তাঁদের একজন সারোগেট মাকে খুঁজে দেবে। মিমির (কৃতি শ্যানন) সঙ্গে তাঁদের আলাপ হয় রাজস্থানের একটি হোটেলে। মিমির স্বপ্ন সে একজন বিশাল বড় অভিনেত্রী হবে, বম্বে যাবে। কিন্তু তার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন, তাই সে এবং তার বন্ধু সামা (সাই তামহানকার) হোটেলে নাচ করে এবং গান গেয়ে সেই অর্থ জোগাড় করছে। সামা আর মিমির দারুন বন্ধুত্ব। মিমির কাছে যখন 20লাখ টাকার বিনিময়ে মা হওয়ার সুযোগ আসে, সে সেটা নেয়। এবং পরিবারকে কিছু জানায় না, উল্টে মিথ্যে বলে সামার বাড়ি চলে যায়। ভানু ওদের সঙ্গেই থাকে এবং ওদের দেখভাল করে। দিন কাটে। কিন্তু একদিন জানা যায় মিমির গর্ভের সন্তান সুস্থ নয়, সে জন্মালে স্পেশাল চাইল্ড হবে। এই কথা শুনে সামার এবং জন সেই বাচ্চা নিতে চায় না। ভানু বারংবার বোঝালেও, অনুরোধ উপরোধ করলেও তারা সেটা শোনে না। তারা বুঝতেই চায় না যে রিপোর্ট ভুল হতে পারে বা এক্ষেত্রে মিমির কোনও দোষ নেই। উল্টে তারা সাফ সাফ জানিয়ে দেয় যে, তারা সুস্থ বাচ্চা চেয়েছিল, অসুস্থ বাচ্চা নেবে না তারা। এরপর সামার এবং জন ফিরে যায় আমেরিকায়। ভানু এবং মিমি পড়ে অথৈ জলে। তারা কী করবে না করবে ভেবে পায় না। এদিকে বাড়িতে জানাজানি হয়। সকলে ভাবে ভানুই মিমির স্বামী। কিন্তু আদতে তো তা নয়, দিল্লিতে তার স্ত্রী এবং মা আছে, এবং ঘটনাক্রমে সেটা প্রকাশ্যে আসে। দিন যায়, অবশেষে মিমির সন্তান হয়। এবং সুস্থ সন্তান হয়। কিন্তু সামার আর জন ফেরে না। তখন মিমি তার নিজের সব স্বপ্ন, শখ বিসর্জন দিয়ে তার সন্তানকে মানুষ করতে থাকে। মা তো! কী করে ফেলে দেয় সন্তানকে। একাধারে দৈবকী যশোদা হয়েই নিজের সন্তানকে লালন করতে থাকে। প্রায় চার বছর পর সামার আর জন ফিরে আসে এবং তাদের সন্তানকে ফেরৎ দেওয়ার দাবি করে। তখন কী হয় সেটাই জানায় এই সিনেমা। একজন মা তার সন্তানের জন্য কতদূর যেতে পারে, একটা বাচ্চার সঙ্গে কতগুলো মানুষ জড়িয়ে থাকে সবটা এই সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শর্ট ফিল্ম: Zoya
এই সিনেমায় দু’টো জিনিস খুব সুন্দর দেখানো হয়েছে। প্রথমত, সারোগেসিতে সুস্থ বাচ্চা হলে তাকে গ্রহণ করার কথা থাকলেও, সে অসুস্থ হলে কী হবে তা বলা থাকে না। এবং এমন বহু ঘটনা ঘটেছে যেখানে সন্তানের আসল বাবা-মা এমন কথা শুনে বাচ্চা রেখেই পালিয়ে গেছে। তারপর সেই সারোগেট মাকে কী সহ্য করতে হয় তা এই গল্পে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সারোগেসির বদলে অনাথ শিশুদের দত্তক নেওয়া অনেক ভাল, তাতে নতুন একটা শিশুকে পৃথিবীতে আনার থেকে যে শিশু আছে অথচ তার ঘর নেই, মা-বাবা নেই, সে একটা পরিবার পায় দত্তক নিলে, এই সুন্দর মেসেজটি দেওয়া হয়েছে।
এবার আসা যাক অভিনয়ের কথায়। মিমি চরিত্রটি যে কৃতি শ্যাননের অন্যতম ভাল কাজের একটি, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। অন্যদিকে পঙ্কজ ত্রিপাঠী অনবদ্য অভিনয় করেছেন এই সিনেমায়, আরও একবার তাঁর জাত চিনিয়েছেন। তাঁর চরিত্রের দু’টি দিককে এত সুন্দর করে গল্পে তুলে ধরা হয়েছে যে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। একদিকে দায়িত্ববোধ যার কারণে কোনও দায় না থাকা সত্ত্বেও সে মিমির সঙ্গে থেকে যায়, দুই কমেডি। বাকি চরিত্ররাও যথাযথ। ক্যামেরার কাজ, গান সবই ভীষণ সুন্দর।
রেটিং: 4/5
সব শাশুড়ি কি সমান হয়? ভাল মন্দ কি সকলের মধ্যেই থাকে না?
সুন্দরবনের একটি অতি সাধারণ মেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেখানকার স্বাদ পৌঁছে দিচ্ছেন একা হাতে।
বেলস পলসি কী, কেন হয় জানেন কী?
অনীক দত্তের অপরাজিত এবং সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
বাঁধ দিয়ে সুন্দরবনের সদ্যোজাত নিচু দ্বীপগুলি বাঁচানো সম্ভব নয়, জনবসতি সরিয়ে নেওয়াই সমাধান
ওষুধ, খাবার, মাদক, মারণ বোমা সবই ডেলিভারি দিচ্ছে ড্রোন– এবার তাকে সামলাতে হবে!