×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ড্রোনের যুগ

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 29-06-2021

    প্রতীকী ছবি

    প্রযুক্তির নিরিখে এক একটি দশককে এক একটি আইডিয়ার নাম দিয়ে চিহ্নিত করা গেলে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকটি হবে মোবাইল ফোনের, দ্বিতীয়টি হোয়াটসঅ্যাপ জাতীয় সোশাল মিডিয়ার। তৃতীয়টি সম্ভবত ড্রোনের।

     

    হেলিকপ্টারের প্রযুক্তি বহু পুরনো। সেই প্রযুক্তিকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকারে এনে তার উদ্ভাবনী ব্যবহারের কথা ভাবতে কিন্তু অনেক সময় লেগেছে মানুষের। এতদিন ড্রোনকে সাধারণ মানুষ প্রধানত ছবি তোলার কাজেই ব্যবহৃত হতে দেখেছে, কখনও বিয়েবাড়িতে, কখনও অনুষ্ঠানে কখনও বা স্রেফ প্রকৃতির ছবি তোলার জন্য। আবার কখনও উঁচু পাঁচিলের আড়ালে রৌদ্রস্নানরত নায়িকার ছবি তোলার জন্য পাপারাৎজির ড্রোন ব্যবহার নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। ভারতীয়দের অনেকেরই ড্রোনবস্তুটির সঙ্গে পরিচয় আমির খান অভিনীত থ্রি ইডিয়েটস সিনেমা থেকে। যেখানে আমির খান অভিনীত চরিত্রটি এমন একটি ড্রোন বানায়, যার সাহায্যে আশপাশের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হবে, এবং সেটির মাধ্যমেই তাদের হোস্টেলের একটি ছাত্রের সুইসাইড প্রকাশ্যে আসে, যার মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল ওই ড্রোন। এছাড়াও উরির মতো সিনেমাতেও এর ব্যবহার দেখা গিয়েছে। পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে কীভাবে ভারতীয় সেনা ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালিয়েছিল, তা অনেকেরই জানা। কিন্তু 27 জুন, রবিবার ভোররাতে তার আরও একটি ব্যবহার দেখল ভারতবাসী!

     

    জম্মুর ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের স্টেশনে 2কেজি ওজনের দুটো লো ইনটেনসিটি ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা IED ফেলা হয় এই ড্রোনের সাহায্যে। যদিও একজন বায়ুসেনার অফিসারের সামান্য আঘাত এবং একটি বাড়ির সামনের দিকটায় অল্প ক্ষতি ছাড়া তেমন বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানি হয়নি বলেই খবর। তবুও আগামীদিনে এই ড্রোনের সাহায্যে যে বড়সড় জঙ্গি আক্রমণ ঘটতে পারে, তা স্পষ্টই বোঝা গিয়েছে এই ঘটনার পর। আর এরপরেই নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে। এই ঘটনার ঠিক একদিন পরেই অর্থাৎ সোমবার ভোররাতে কালুচকের মিলিটারি স্টেশনেও সন্দেহজনক দুটি ড্রোন দেখা যায়, যদিও তা কর্মরত অফিসাররা গুলি করে প্রতিহত করেন সঙ্গে সঙ্গে। লাগাতার এমন ঘটনায় আশঙ্কার প্রহর গুনছে কাশ্মীর উপত্যকা

     

    আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত নগরায়নের ফল আর্বান সিঙ্কহোল

     

    ভারতে ড্রোনের সাহায্যে আক্রমণ এই প্রথম হলেও গোটা বিশ্বে 1994-2018 সালের মধ্যে প্রায় 18টি এমন জঙ্গি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, যা এই ড্রোনের সাহায্যেই ঘটানো হয়েছে

     

    আব্রাহাম কারেমের আবিষ্কার হচ্ছে এই ড্রোন। যা 2000 সাল থেকে অনেকে ব্যবহার করতে শুরু করলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শেষ এক দশকে। এতদিন ফটোগ্রাফি, নজরদারি চালানো, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইট প্রভৃতি জায়গায় এটি ব্যবহৃত হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে এই আবিষ্কার যত জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে, ততই তার অপব্যবহার বাড়তে থাকে। গত দুবছরের বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় এটা বোঝা গিয়েছিল যে, পাকিস্তান ভারতের জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে ড্রোনের সাহায্যেই অস্ত্র পাঠাচ্ছে। সীমান্তের ওপার থেকে মাদক চোরাচালানেও ড্রোন ব্যবহারের কথা জানা ছিল। কিন্তু ড্রোনের সাহায্যে সশস্ত্র বাহিনীর উপর জঙ্গি আক্রমণ এই প্রথম। এই আঘাত ছোট হলেও আগামীদিনে তা ভয়াবহ হতেই পারে, কারণ ড্রোনের সাহায্যে একাধিক জায়গায় একইসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব, কোনও মানুষকে না পাঠিয়েও

     

    কিন্তু শুধুই কি জঙ্গি সংগঠন ব্যবহার করছে ড্রোন? না। বর্তমানে আরও নানান সংস্থা নানান কারণে এই ড্রোন ব্যবহার করতে চলেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থা সুইগির নাম। ডেলিভারি টাইম কমানোর জন্য, চটজলদি খাবার ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা আগামীদিনে ড্রোন ব্যবহার করবে বলেই জানা যাচ্ছে। আনরা (ANRA) টেকনোলজির সঙ্গে কোলাবরেশন করে সুইগি খাবার ডেলিভারিতে ড্রোনের ব্যবহার আনতে চলেছে। এখন ট্রায়াল চালাচ্ছে, সব ঠিক থাকলে কয়েক মাসের মধ্যেই হয়তো ড্রোনের সাহায্যে খাবার পাঠানো শুরু হবেশুধুই খাবার নয়, সঙ্গে আছে ওষুধও। ডানজো (Dunzo) সংস্থা তাদের নতুন প্রকল্প শুরু করেছে মেডিসিন ফ্রমদ্যা স্কাই। আকাশপথে ওষুধ পৌঁছে যাবে বাড়ি বাড়ি, এই ড্রোনের সাহায্যেই। ওষুধ, খাবার, পিপিই কিট প্রভৃতি পাঠানো হবে ড্রোনের সাহায্যেইফলে ড্রোনের যে শুধুই অপব্যবহার আছে এমনটা নয়, তার ভাল দিকও যথেষ্ট আছে।

     

    আরও পড়ুন: ভারতীয়ের স্বপ্নের ডানায় ভর করে হেলিকপ্টার উড়বে ভিন গ্রহের আকাশে

     

    তবে জঙ্গি আক্রমণের ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, আগামীদিনে ড্রোনের ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার দরকার হবে। তার জন্য ডিজিটাল স্কাই নামক এক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গিয়ে ড্রোনের মালিককে রেজিস্টার করতে হবে। আননেমড এরিয়াল ভেইকেল বা UAV, যা 250 গ্রামের বেশি ওজনের এবং প্রায় 50 ফিট উঁচু অবধি উড়তে পারে, সেই সমস্ত ড্রোনকে নিউ ড্রোন রেগুলেশন অনুযায়ী এই প্ল্যাটফর্মে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। বর্ডার এরিয়ায় কড়া নজরদারি থাকে, কিন্তু বাকি জায়গায় তো তা থাকে না। তাই এই ব্যবস্থা। বিশেষ করে যে ড্রোন মাল বহন করতে পারে, তা বিশেষ চিন্তার কারণ এবং ভয়াবহ, সাধারণ ছবি তোলার কাজে ব্যবহৃত ড্রোনের তুলনায়

     

    ফলে একদিকে যেমন নানা গঠনমূলক কাজ, দ্রুত খাবার বা ওষুধ পৌঁছনোর মতো জরুরি কাজে ড্রোন ব্যবহার হতে চলেছে, আগামীদিনে তেমনই তারই সাহায্যে বড় নাশকতা, জঙ্গি আক্রমণও ঘটতে পারে। যে কোনও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের উপরই বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়। ড্রোনও তার ব্যতিক্রম নয়। আবার একইসঙ্গে ড্রোনের বিপুল সম্ভাবনার অপব্যবহার করার জন্য সন্ত্রাসবাদী, অপরাধীরাও চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কারণ যুগটা যে ড্রোনের!


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    আর্বানাইজেশন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারণে দিল্লি তপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হয়েছে

    লেখকদের কলমে উঠে আসা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কাহিনী আজকেও নির্মম বাস্তব

    এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে

    কলোরাডো নদীর জল প্রতি 1 ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে 9.3 শতাংশ কমে যাচ্ছে।

    হাত ধোওয়া বা স্যানিটাইজ করা উচিত, এই অভ্যেস থাকা অবশ্যই ভাল। কিন্তু অমূলক ভয় থাকা নয়।

    ফ্লিপকার্ট জানায় যে নাগাল্যান্ড ভারতের বাইরে বলে সেখানে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব না।

    ড্রোনের যুগ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested