পুজোর রেশ তখনও ঠিক ভাবে কাটেনি। চারদিনের টইটই, গরমের ঘেমে ক্লান্ত হয়ে দুপুরের আহার সারার জন্য কোনও রেস্তোরাঁয় ঢোকা এবং অফুরন্ত ঠাণ্ডা পানীয় খাওয়ার পর এমন কিছু যে অপেক্ষারত তখনও বুঝিনি। বুঝলাম একাদশীর রাতে। হঠাৎই লক্ষ্য করি জল খেতে গেলে পড়ে যাচ্ছে। খাবার খেতে গেলে জিভ একপাশে সরে যাচ্ছে, জড়িয়ে যাচ্ছে। কথাও জড়াচ্ছে হালকা। প্রথমে অতটা বুঝিনি। বুঝলাম পরদিন, যখন পুরো মুখ বেঁকে একদিকে চলে গিয়েছে। মনে প্রথম কথাটাই এল প্যারালাইসিস এবং স্ট্রোক। বাড়িতে যথারীতি কান্নাকাটি, ছোটাছুটি। প্রথমে একজন ডাক্তার ভয় দেখালেও পরবর্তীকালে অন্যজন জানান ভয়ের কিছু নেই, এ সাধারণ রোগ। "বেলস পলসি’ (Bell's Palsy)।
বেলস পলসি নতুন নাম। অথচ ডাক্তারবাবু বললেন সাধারণ রোগ। অনেকের হয়। কই শুনিনি তো। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট থেকে জানতে পারলাম ব্যাপারটি অনেকেই জানেন আবার জানেন না। তাই যাঁরা জানেন না তাঁদের জন্যই ব্যাপারটা কী, কেন হয় ইত্যাদি প্রশ্ন সাজিয়ে উত্তর জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের (Burdwan Medical College) সহকারী অধ্যাপক ডক্টর রূপলেখা মিত্র মুস্তাফির থেকে।
বেলস পলসি কী এবং কেন?
ডক্টর রূপলেখা জানান, "ফেসিয়াল নার্ভের দুর্বলতাকে বেলস পলসি বলে। আমাদের শরীরে মোট বারোটা ক্রেনিয়াল নার্ভ আছে, তার সপ্তম নার্ভটি হল ফেসিয়াল নার্ভ। এর কাজ হচ্ছে মুখের মাংস পেশীর কাজে সহায়তা করা এবং মোটর ও সেন্সরি ফাঙ্কশনে সাহায্য করা। মুখের মোটর ফাঙ্কশন বলতে ফুঁ দেওয়া, চিবানো, মাসেল ব্যালেন্স, প্রভৃতি। যখন এই ফেসিয়াল নার্ভ দুর্বল হয়ে পড়ে তখন সে স্বাভাবিকের তুলনায় কম কাজ করে, যার ফলে এই বেলস পলসি হয়।’ কিন্তু বেলস পলসি আর ফেসিয়াল প্যারালাইসিস কী এক? তিনি জানান, "না। সব বেলস পলসি ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হয় না। এটা স্রেফ নার্ভের দুর্বলতা। আকস্মিক হয়। এবং যে কারও হতে পারে, বাচ্চা বয়স্ক, যে কারও।’
বেলস পলসি কেন হয় জানতে চাওয়া হলে ডক্টর মুস্তাফি জানান, "এটি একটি ইডিওপ্যাথিক রোগ, অর্থাৎ যার কারণ জানা যায় না। তবুও মনে করা হয় প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগলে, ভাইরাল ইনফেকশন হলে, বা অন্যান্য রোগের কারণে এই রোগ হতে পারে। এর সঙ্গে স্ট্রোকের মিল থাকলেও দুটো আলাদা। স্ট্রোক হলে শরীরের যে কোনও একটা দিক পুরোটা এফেক্টেড হয়, অর্থাৎ হাত পা সব অবশ হয়ে আসে। বেলস পলসির ক্ষেত্রে শুধু মুখের এক পাশ এফেক্টেড হয়।’
আরও পড়ুন:প্রশাসনিক ঔদাসীন্যে কলকাতায় বাড়ছে ডেঙ্গু
এই রোগ কি সারে? কী কী করণীয়?
আমি প্রথম যাঁকে দেখাই সেই ডাক্তারবাবু আমায় নেহাতই ভয় দেখিয়ে বলেছিলেন, "সারবে না, সারলেও অনেক সময় লাগবে।’ এই কথা ডক্টর রূপলেখাকে বলাতেই তিনি হেসে বলেন, "না, একদম ভুল কথা। এই রোগ যদি চিকিৎসা নাও করানো হয় তবেও সেরে যায়। কিন্তু তাই বলে বাড়ি বসে না থেকে বেলস পলসি হলে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়াই উচিত। ওষুধ এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। 48ঘণ্টা থেকে সারতে শুরু করে এই রোগ। অধিকাংশ মানুষের 2-3 সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। কারও কারও দু থেকে ছয়মাস অবধি সময় লাগে। কিন্তু ছয়মাসের মধ্যে সারবেই। এই রোগে সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। ভয়ের কোনও কারণ নেই। তবে হ্যাঁ, এই রোগ কিন্তু আবার হতে পারে।’ তাহলে উপায়? ডক্টর মুস্তাফি জানান, "ঠাণ্ডা না লাগানোই শ্রেয়। হলে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিত, কারণ তিনি দেখে বুঝতে পারবেন কী হয়েছে কেন হয়েছে। হলে অযথা ভয় পাবেন না। ওষুধ, এক্সারসাইজ এবং ফিজিওথেরাপি চালিয়ে যাবেন। অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে ওঠা যায় এই রোগে।’
বিপুলা পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি। তারই একটি হল বেলস পলসি। সাধারণ অথচ কম জানা রোগ। অনেকেই জানেন, অনেকেই জানেন না। যাঁরা জানেন না তাঁদের প্রাথমিক ভাবে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তাই সাবধানে থাকা উচিত, সচেতন থাকা উচিত। কিছু মনে হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সরকারি স্কুলের বাচ্চারা তো স্কুলে ফিরল, বেসরকারি স্কুলের বাচ্চাদের কী হবে?
আরে বাবা এ গ্রাম পঞ্চায়েত না। এটা খাপ পঞ্চায়েত। এখানে কেউ দুষ্টুমি করলেই বিচার হয়।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ, সরকারি লালফিতের ফাঁসে আটকে হালপাতালের পাওনাও
সোশাল মিডিয়াকেই অস্ত্র বানিয়ে নেমে পড়েছেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে
এটাই হেডলাইন। সঙ্গে পাওয়া গেছে এই সুইসাইডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আর একটা চিরকূট।
নাছোড় বৃষ্টিতে নাজেহাল ভারতবাসী।