সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে 13মে 2022-এ মুক্তি পেল অনীক দত্তর ছবি "অপরাজিত'। ছবিটি তৈরি হয়েছে পথের পাঁচালী কী ভাবে তৈরি হয়েছে, সত্যজিৎ রায় কী ভাবে সিনেমা জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সেসব গল্প নিয়ে।
বাঙালির সত্যজিৎ এবং রবীন্দ্রনাথ, এঁদের দুজনকে নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই। আর পথের পাঁচালী সিনেমাটি দেখেননি এমন বাঙালি বোধহয় কমই আছেন! আর সেই ছবি নিয়ে আরেক ছবি তৈরি হচ্ছে স্বাভাবিক ভাবে শুরু থেকেই উত্তেজনা ছিল দর্শকদের মধ্যে। কিন্তু যেদিন এই ছবির প্রথম পোস্টার প্রকাশিত হয় সেদিন সকলেই ছিটকে গিয়েছিল। এ কে? স্বয়ং সত্যজিৎ নাকি জিতু কামাল! সময়ের সঙ্গে দর্শকদের অপেক্ষাও বাড়ছিল এই ছবি নিয়ে। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর দেখা গেল কয়েকটি সিনেমা হল ছাড়া আর কোথাও ঠাঁই হয়নি এই ছবির। এমনকি সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে যে নন্দনের উদ্বোধন হয়েছিল সেই নন্দনেও না। অবশ্য অনীক দত্তের ছবি নন্দনে না দেখানোর আর একটা কারণ সম্ভবত কয়েক বছর আগে নন্দনে চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালীন একটা ঘটনা। নন্দন চত্বরে সিনেমা সংক্রান্ত পোস্টার, কাট আউট, ডিসপ্লে বোর্ড ইত্যাদি ছাপিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাট আউট ও ছবির সোচ্চার উপস্থিতি দেখে অনীক দত্ত প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ করেছিলেন।
যে কটা মাল্টিপ্লেক্স বা সিঙ্গেল স্ক্রিনে অপরাজিত মুক্তি পেয়েছে তাদের অধিকাংশ সময়ই খারাপ এবং একটা কী দুটো টাইম স্লট। ফলে দর্শকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছিল। শোরগোল পড়ে যায় এই ছবি সর্বত্র প্রকাশের দাবিতে।
কিন্তু ছবিটি দেখতে গিয়ে বুঝলাম পথের পাঁচালী সত্যি সব দিক থেকেই পথের পদাবলীর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। কেন? বলছি।
অপরাজিত'য় দেখা যায় পথের পদাবলীর দারুন সাফল্যের পর অপরাজিত রায় আকাশবাণী তে একটি ইন্টারভিউ দিতে গেছেন। সেখানেই তাঁর এবং পথের পদাবলী সংক্রান্ত সমস্ত খবর ভাগ করে নিচ্ছেন দর্শকদের সঙ্গে। গল্পের মাধ্যমে উঠে আসে ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া গড়ে ওঠার কথা। সেই সময় সিনেমা দেখার ঝক্কি। অপরাজিতর কী করে সিনেমার প্রতি ইন্টারেস্ট বেড়ে ছিল এবং সব শেষে এই ছবি নির্মাণের কাহিনী। বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি অ্যামেচার শিল্পীদের জোগাড় করেছিলেন এই ছবি বানানোর জন্য। বেশ কিছু বছর ধরে এই ছবির শুটিং চলে। অবশেষে যখন ছবির শুটিং শেষ হয় তা বিদেশের মাটিতে দারুন সাফল্য এবং খ্যাতি অর্জন করলেও দেশের মাটির কেষ্টু বিষ্টুদের বিশেষ পছন্দ হল না। আর ঠিক এখানেই যেন সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী আর অনীক দত্তের অপরাজিত মিশে গেল। বিদেশের মাটিতে, টরেন্টোয় অপরাজিত ডাক পেয়েছে। কিন্তু বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় হল "নন্দনে" পায়নি। ঠিক যেমনটা নিউ ইয়র্ক এবং কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পথের পাঁচালী সমাদৃত হয়েই বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে তা ব্যাঙ্গের মুখে পড়েছিল। অথচ দুটো সিনেমার ক্ষেত্রেই জনসাধারণের উন্মাদনা ছিল দেখার মতো।
আরও পড়ুন:সিনেমা: কিশমিশ
এখনও পর্যন্ত যে যে হলে অপরাজিত এসেছে তার প্রত্যেকটাই মোটামুটি হাউজফুল। এই বিষয়ে অভিনেতা এবং পরিচালক কৌশিক সেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, "মাল্টিপ্লেক্সে অনেক সময় অনেক ভাল ছবিই জায়গা করে নিতে পারে না। কিন্তু নন্দনে আসে। কিন্তু এবার নন্দনে এই ছবি জায়গা না পাওয়ায় চমৎকৃত হয়েছি। সরকারি বা রাজনৈতিক কোনও যোগ আছে বলে মনে করছি না কারণ স্টার থিয়েটার সরকারি হল ওখানে ছবিটি চলছে। কিন্তু নন্দন কেন নিল না তাই বুঝতে পারলাম না। অথচ নন্দন কিন্তু এই মতাদর্শ থেকেই বানানো হয়েছিল যে একটু অন্যধারার ছবি যেগুলো, এক্সপেরিমেন্টাল ছবি সেগুলোই ওখানে দেখানো হবে। মাল্টিপ্লেক্সে এবং প্রাইভেট হলগুলোর নিজস্ব একটা হিসেব আছে, বাণিজ্যের ব্যাপার আছে কিন্তু নন্দনের ঘটনা ভাবনায় ফেলেছে। নন্দন পরিচালন সমিতির উচিত বিষয়টা আরেকবার ভেবে দেখার।' একই মত এই ছবির অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের। তিনি বলেন, "এটা একদমই সমর্থন যোগ্য নয়। আমার মনে হয় অপরাজিত-কে নন্দনে দেখানো উচিত। সত্যজিতের 100 বছরের উদযাপন এর থেকে ভাল করে করা সম্ভব নয়। ওদের ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করি।'
কৌশিক সেন আরও জানান, "নন্দনের আগে কোনও প্রি বুকিং ছিল কী না দেখতে হবে। কিন্তু যাই থাকুক, সেখানে এখন যে ছবিগুলো চলছে তার থেকে অনেক বেশি জরুরি এই ছবিটিকে ওখানে দেখানো। নন্দনে বিভিন্ন সিনেমাপ্রেমী মানুষ আসেন আর যেহেতু টিকিটের দাম কম অনেকেরই সুবিধা হয়।'
নন্দনে অপরাজিত আসবে কী না জানা নেই, কিন্তু দর্শকের দাবিতে অপরাজিত'র শো টাইম বাড়ছে, আরও দু একটি হলে নতুন করে এই ছবি দেখানো শুরু হয়েছে।
"ভাল বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান' স্লোগান তুলতে হয় না। যেটা ভাল ছবি হয় দর্শক স্বইচ্ছায় সেই ছবির পাশে যে দাঁড়ায় তাই যেন অনীক দত্তের এই ছবি দেখিয়ে দিল।
জিতু কামালের অভিনয় এই ছবিতে দুর্দান্ত। মেকাপ, চলন বলনে তিনি একেবারে রায় সাহেব হয়ে উঠেছিলেন এই ছবিতে। সঙ্গে চন্দ্রাশিস রায়ের ভয়েস ওভার অন্য মাত্রা যোগ করেছে এই ছবিতে। অনবদ্য। সুপ্রতিম ভোলের সিনেমাটোগ্রাফি বেশ ভাল। কিছু সিন দারুন ভাবে রিক্রিয়েট করা হয়েছে। মূলত অপু দুর্গা, থুড়ি, মানিক উমার কাশবনের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে ট্রেন দেখা, কিংবা সেই অবিস্মরণীয় বৃষ্টির সিন দারুন ভাবে তৈরি করা হয়েছে। দেবজ্যোতি মিশ্রের সঙ্গীত দারুন সঙ্গত করেছে এই ছবির। সর্বোপরি পরিচালক অনীক দত্ত যে যথেষ্ট পড়াশোনা করে, গবেষণার মাধ্যমে এই ছবি নির্মাণ করেছেন তা ছবিটি দেখলেই বোঝা যাবে।
পথ কুকুরদের জন্য শ্রীলেখার Pawsome Date
স্মরণকালের মধ্যে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় গরম বাড়ছে নজিরবিহীনভাবে!
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ, সরকারি লালফিতের ফাঁসে আটকে হালপাতালের পাওনাও
29 জুন ভারতীয় সরকার 59টি চিনা অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল, কিন্তু এতে কার কতটা লাভ আর ক্ষতি
যে জৈব চাষ স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের কারণে জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রমশ, তারই মাত্রাজ্ঞানহীন অপরিকল্পিত প্রয়োগে
কার্গিল যুদ্ধের নায়ক বিক্রম বাত্রার জীবনের নানান গল্প তুলে ধরেছে শের শাহ।