মা দুর্গা চিন্তিত হয়ে মণ্ডপে পায়চারি করছেন। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন কারও অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ পর হাঁপাতে হাঁপাতে অসুর ফিরল বাইরে থেকে। মুখ ডাবল মাস্ক। হাঁপাচ্ছে কী ভীষণ! চোখে মুখে ত্রাস! মা দৌড়ে এসে অসুরের পাশে বসলেন, ‘কী রে এই অবস্থা কেন তোর? কী হয়েছে? কী দেখলি?’
অসুর কোনও মতে ঢোঁক গিলে বলল, ‘আজ্ঞে মা কী বলব। রাস্তাঘাটে কী অবস্থা। কত কত ডেডবডি।'
মা দুর্গা বলেন, ‘সেকি! কাদের? কোনও দুর্ঘটনা হল বুঝি?’
‘আজ্ঞে না মা। লোকের চাপে শতাধিক করোনা পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছে। কী ভিড় কী ভিড়। কারও মুখে মাস্ক নেই!’ চিন্তিত গলায় অসুর বলল। মা দুর্গাও মাথা নেড়ে বললেন, ‘বটে! এই অবস্থা! তবে তো দেখছি হাইকোর্ট আমাদের সুবিধা করল। আমরা অন্তত সুস্থভাবে কৈলাশে ফিরতে পারব। কিন্তু আমার বাপের বাড়ির সবার কী হবে রে? এঁদের কী মরলেও বুদ্ধি হবে না?’
মা আর অসুর যখন বার্তালাপে ব্যস্ত, তখন সরস্বতী নাচতে নাচতে এল। আদুরে সুরে ‘মা’ ডেকে মা দুর্গার গায়ে হেলান দিয়ে বসল।
‘কী রে? কী হল?’
‘জানো মা, সবাই বলছিল আমার এখন আবার ছুটি। আবার নাকি স্কুল, কলেজ খুলবে না। মামাবাড়ির লোকজন এত বোকা কেন বলো তো? ডাক্তাররা, জ্ঞানী ব্যক্তিরা এত করে বলল তাও কেউ শুনল না! সবাই এভাবে বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়! এখানে খাচ্ছে ওখানে ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখছে। কী বোকা না? হিহি।' সরস্বতী গদগদ স্বরে বলল।
মা দুর্গা মাথায় হাত দিয়ে বসলেন।
‘কী হল মা?’ সরস্বতী, অসুর দু’জনেই সমস্বরে বলে ওঠে। মা দুর্গা বলেন, ‘তোদের বাবা বারবার বারণ করেছিলেন এবার আসতে। দেখি দেখি ফোনটা দে। ফোন করে বলে দিই দশমীতে যেন আমায় মণ্ডপের মধ্যে দিয়েই তুলে নিয়ে যায়, তোদের চার ভাই বোনের এখনও ভ্যাকসিন হয়নি। বলি, গণশা, লক্ষ্মী, কেতো কই রে?’
সরস্বতী ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ‘ওই যে মণ্ডপের বাইরে ভোগ দিচ্ছে ওটা আনতে গিয়েছে। আমায় নিল না।'
মা দুর্গা অসুরকে বলেন, ‘সেকি! যা তো হতভাগাগুলোকে নিয়ে আয় জলদি। আমাকে পাগল করে তুলল এরা সবাই মিলে!’ তারপর কী ভেবে আবার হো হো করে হেসে উঠলেন।
‘কী হল মা?’
‘তোর বাবা এবার খুশি হবেন বুঝলি সরস্বতী! কালী সেজে আর আসতে না হবে না এবার মনে হয়। তখন কে আর প্যান্ডেলে যাবে সবাই তো বেলেঘাটা আইডিতে যাবে।‘ বলেই মুখ গোমড়া করে ফেললেন, ‘কিন্তু আমি যে এমনটা চাইনি রে। আমি তো চাইনি আমার সন্তান, বাপের বাড়ির সকলের খারাপ হোক, ক্ষতি হোক তারপর আমি ছুটি পাই। ওরা কেন বুঝল না বল তো আমি তো আছি, প্রতি বছরই আসব, তাও কেন একটা বছর সংযত থাকতে পারল না?’
মায়ের চোখে জল। মা কাঁদছে। সরস্বতী মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মায়ের মনের চিন্তা? তার কী হবে? জানে না। কেউ জানে না।
যৌনকর্মীরা সামাজিক স্বীকৃতি আর আইনগত অধিকারের মধ্যে কোনটা কতটা পেলেন সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে
মহামারীর সুযোগে কিছু কোভিড কিচেনের দৃষ্টিকটু রমরমা ব্যবসা।
করোনার সংক্রমণ রুখতে প্রচারে আপস করে রাজনীতিতে দায়িত্বশীলতার বিরল নজির দেখাল বামেরা।
সাহায্য করতে গিয়ে আগামীদিনের জন্য আরও বেশি বড় ক্ষতি করে আসছি না তো আমরা?
জীবনের কিছু সার সত্য কথা গল্পের আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার বেহালার ঐতিহ্যবাহী চণ্ডীপুজোর শেষ দিন।