‘হ্যালো এটা কি আমি ‘জাস্ট ফর রুটস’-এর সঙ্গে কথা বলছি?’
‘হ্যাঁ ম্যাম বলছেন।'
‘আপনাদের এখানে নন ভেজে মিলের দামটা একটু বলবেন? সঙ্গে কী কী মেনুতে থাকছে সেটাও।'
‘শিওর ম্যাম। আমরা দিনের দু'টো নন ভেজ মিলে ভাত, রুটি, ডাল, একটা মাখা বা সেদ্ধ সবজি, আর একটা তরকারি, 1 পিস মাছ, 2 পিস চিকেন দিচ্ছি। ফর সেভেন ডেজ দাম পড়বে 2450 টাকা।'
উত্তরটা শুনে রীতিমত বিষম খেতে খেতে বেঁচেছিলাম। 7দিনে একজনের খাবারের দাম 2450 টাকা, মানে পরিবারে 4জন আক্রান্ত হলে 7দিনে মোট 9800 টাকা লাগবে! সর্বনাশ! এই কোভিড কিচেনের নমুনা হলে তো সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষকে না খেয়েই থাকতে হবে!
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার নিলে কলকাতা সহ আশপাশের মফঃস্বল অঞ্চলে বহু কোভিড কিচেন চালু হয়। সবারই ঘোষিত উদ্দেশ্য করোনা আক্রান্তদের সেবা করা। পাশাপশি অনেকেই যাঁরা কাজ হারিয়েছেন তাঁদের কাছে একটা বিকল্প আয়ের পথ হিসেবে গড়ে উঠেছে এই কোভিড কিচেন গুলো। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় খাবার দেওয়ার নাম করে লাগামহীন ব্যবসা চালাচ্ছে অনেক কোভিড কিচেন। বাধ্য হয়ে যাদের কোভিড কিচেনের শরণাপন্ন হতেই হচ্ছে তাদের পড়তে হচ্ছে সমস্যায়।
অবশ্যই শহরের গোটা চিত্রই যে এমন তা নয়। কেউ কেউ বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, তো কেউ ন্যায্য মূল্যেই খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের কাছে। কিন্তু মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে রমরমিয়ে ব্যবসাও চলছে দেদার।
এবার একটা হিসেব দেখা যাক। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে পরিবার পিছু বাৎসরিক গড় আয় এক লাখ 10 হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে কম বেশি 9200 টাকা মতো। যা ‘জাস্ট ফর রুটস’ সংস্থার 4 জনের 7 দিনের খাবারের দামের থেকেও কম। সেক্ষেত্রে মানুষ কী করবে? খাবারটাই তো একমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস নয়, সংসারে আরও অনেক খরচ থাকে যা আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু খাবারের পিছনেই যদি এত টাকা ব্যয় করতে হয় তাহলে তো হয়েছেই!
শুধু একমাত্র ‘জাস্ট ফর রুটস’ নয়, দক্ষিণ কলকাতার শৈলজা সুতদিয়া নামে এক মহিলা একটি কোভিড কিচেন চালু করেছেন, যার কাছে মূলত দু’ধরনের নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়। নর্মাল নিরামিষ খাবার নিলে 360 টাকা একদিনে, এবং স্পেশাল থালি নিলে মাত্র 470 টাকা দাম। নর্মাল থালির মেনুতে থাকছে দুই ধরনের সবজি, ডাল আর ভাত। আর স্পেশাল থালিতে ভাত, ডাল, দুই রকমের সবজি এবং একটা মিষ্টি। আর সঙ্গে নৈশভোজে দু’টো সবজি, মিষ্টি আর রুটি। এ খাবার সাধারণ মানুষের কতজনের আয়ত্তে? মনে রাখতে হবে, এটা এক বেলার শখ করে বাইরে খাওয়া নয়। যারা খাবার নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের 15 থেকে 17 দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকার কথা, এবং বাজার বা রান্না করার ব্যবস্থা না থাকলে পুরোটা সময়ই বাইরের খাবরই ভরসা।
কোথাও কোথাও একটু কমে খাবার মিলছে বৈকি! বারাসাত অঞ্চলের একটি কোভিড কিচেন একদিনের দু’বেলার খাবার 320 টাকায় দিচ্ছে, মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, একটি ডিম সেদ্ধ, দু’টি সবজি, সুজি/পোহা, মাছ/মুরগির মাংস (দু’বেলার খাবার)। অর্থাৎ সাত দিনে চার জনের একটি পরিবারের 8960 টাকা লাগছে।
4thPillar WeThePeople এই সমস্ত কোভিড কিচেনের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের মেনু সম্পর্কে জেনে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান অর্পিতা রায় চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে। তিনি জানান, ‘করোনার তো আলাদা তেমন কোনও ডায়েট চার্ট নেই। সাধারণত, ফ্লুতে যে ধরনের খাবার খাওয়া উচিত সেগুলোই দেওয়া হয়। সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত এই সময়, নইলে হজমে সমস্যা হতে পারে। অ্যানিমেল প্রোটিন মাস্ট, তবে অতিরিক্ত তেল ঝাল, ভাজাভুজি না খাওয়াই উচিত। এর সঙ্গে আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে, শুধু প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, আর নৈশভোজ খেলেই হবে না। প্রতি দু’তিন ঘণ্টা বাদে বাদেই খাবার খাওয়া উচিত। যেমন আর্লি মর্নিং, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, আফটার লাঞ্চ, ইভনিং স্ন্যাক্স, ডিনার। কিন্তু কোভিড কিচেনগুলো তো এত খাবার দিচ্ছে না। তাই নিজেদেরই সচেতন থাকতে হবে। সব থেকে ভাল হয় যদি বাড়িতেই খাবার বানিয়ে খাওয়া যায়। একান্ত উপায়ন্তর না থাকলে তখন ক’দিনের জন্য খাওয়া যেতে বাইরের খাবার।'
আরও পড়ুন: অশ্লীল ছবি বানিয়ে ব্ল্যাকমেলের নতুন ছক
অর্পিতার কথা মতো একটা সাধারণ হিসেব কষি আমরা। চার জনের একটি পরিবারে চাল, ডাল, এই সময়ের সাধারণ সবজি, তেল, মশলা ইত্যাদির সঙ্গে মাথাপিছু এক পিস পোনা মাছ এবং দু’পিস চিকেন এবং তারও উপরে রান্নার খরচ যোগ করলে খরচ 400 থেকে 450 টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অনেকের জন্য একসঙ্গে বাজার, রান্না করলে খরচ আরও কমে আসারই কথা। ফলে লাভের মাত্রা যে অতিরিক্ত রাখছেন এঁরা তা স্পষ্ট, বোঝাই যাচ্ছে এক শ্রেণীর কোভিড কিচেন বেশ ভালই ব্যবসা করছে মহামারীর বাজারে।
তবে আশার কথা একটাই, এই ব্যবসার পাশাপাশি অনেকে কম বা ন্যায্য মূল্যে, এমনকি বিনামূল্যেও রোগীদের এবং তার পরিজনদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।
ভোট পুজোর আগে এই ছড়া, কার্টুন, ইত্যাদির মধ্যে দিয়েই বাংলার সুস্থ সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।
রিখটার স্কেলে 9.4-9.6 মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে বলে গবেষকরা দাবি করছেন।
দূষণ যে এত ভয়াবহ হতে পারে তা কে জানত!
হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামকে ছাপিয়ে সিগন্যাল এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
সমকামিতার ইঙ্গিতপূর্ণ বিজ্ঞাপন তুলে নেবে না জানিয়ে সদর্থক বার্তা ক্যাডবেরির।
গত বছরের শ্রমজীবী ক্যান্টিন থেকে এবারের রেড ভলেন্টিয়ার্স, মানুষের পাশে বামপন্থী তরুণ দল।