‘আসছি সাবধানে থেকো তোমরা।'
‘সাবধানে যাবেন দাদাবাবুরা।'
জনা দশ পনেরো ছেলে মেয়ে যাঁরা এসেছিল তাঁরা ফিরে যাচ্ছে। হাতে প্লাস্টিকের বোঁচকা নিয়ে এক হাঁটু কিংবা গোড়ালি জলে দাঁড়িয়ে গ্রামের মানুষজন। সবার মুখেই হাসি। খাবার এল, প্রয়োজনীয় জিনিস এল। আর পাশের বাদাবন? লক্ষ্য করেছেন? প্লাস্টিক ব্যাগ, জলের পাউচ ইতিউতি পড়ে আছে। কোনটা আবার জলে ভাসছে।
এভাবেই ত্রাণের সঙ্গে প্লাস্টিক সুন্দরবনে প্রবেশ করছে
এ যেন ভাল করতে এসে আরও বিপদ বাড়িয়ে যাওয়ার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। কিন্তু ত্রাণ তো দেওয়াই হচ্ছে মানুষকে সাহায্য করার জন্য, এখানে তবে ক্ষতির কথা আসছে কোথা থেকে তাই ভাবছেন তো? ক্ষতির কথা আসছে কারণ আমরা সচেতন নই। শর্টটার্মের কথা ভেবে যে সাহায্য করে আসছি তাতেই আখেরে গোটা বাদাবনের লংটার্ম ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
প্লাস্টিক ব্যাগ বন্দি ত্রাণের সামগ্রী, নিজেদের এবং গ্রামবাসীদের জন্য জলের পাউচ সবই ত্রাণের সঙ্গে গ্রামে পৌঁছচ্ছে। একসঙ্গে প্রায় কয়েক হাজার। কী করে? ধরা যাক বাসন্তীর ভরতগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের কথা। রোজ অন্তত 2থেকে 3টি দল আসছেন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে, তাঁরা এক একজন অন্তত 200-250 পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, এক একদিনে 750 থেকে 1000টি প্লাস্টিক গ্রামে ঢুকছে। এরপর গোটা সুন্দরবনের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। শুধু তাই নয়, এই ত্রাণ নিয়ে আসা সরকারি বেসরকারি দলগুলো যে জলের পাউচ আনছে তা খেয়ে ওখানেই ফেলে রেখে যাচ্ছে। গোসাবার রাঙাবেলিয়ার ঘাটে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে প্লাস্টিক পাউচের স্তূপ। জোয়ারের সময়ে এই প্লাস্টিকগুলো ভাসতে ভাসতে অন্যান্য জায়গায় গিয়েও দূষণ ছড়াবে। ক্ষতি করবে বাদাবনের বাস্তুতন্ত্রকে। বাদ যাবে না মাছ পশুরাও। এর আগেও বহুবার এমন প্রমাণ মিলেছে। হরিণ বা কুমিরের পেট থেকে আগেও প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। আবারও যে তেমন কিছু হতে পারে তা সহজেই অনুধাবন করা যাচ্ছে। শুধু বাদাবন বা পশুদের ক্ষতি হবে এমনটাও নয়। একেই বাদাবন কেটে ফেলার জন্য ভূমিক্ষয় হচ্ছে। এই প্লাস্টিক দূষণ ভূমিক্ষয়ের মাত্রা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে।
পরিবেশবিদ এবং একটি বেসরকারি স্কুলের পরিবেশের শিক্ষিকা সুচেতনা বসুরায় এই বিষয়ে জানান, ‘আমাদের অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। প্লাস্টিক ব্যবহার এমনিও কম করা উচিত, বিশেষত সুন্দরবনের মতো এলাকায় তো একদমই না। প্রয়োজনে চটের ব্যাগ বা যে ব্যাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য, তেমন কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর জন্য।' কিন্তু একজন সমাজসেবী যিনি তার দল নিয়ে সুন্দরবন গিয়েছিলেন তাঁর কথায়, ‘জুটের ব্যাগ বা অন্যান্য ব্যাগের দামের থেকে প্লাস্টিক ব্যাগের দাম অনেক কম। ফলে আমরা বেশি পরিমাণে খাবার বা অন্যান্য জিনিস দিতে পারি। ইকোফ্রেন্ডলি ব্যাগে জিনিস দিতে গেলে খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে।' এই সমস্যার সহজ সমাধান করে সুচেতনা জানান, ‘একান্তই যদি না হয় সেক্ষেত্রে যে প্লাস্টিক বাইরে থেকে সুন্দরবনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেগুলো নিজেদেরই দায়িত্বে ফিরিয়ে আনতে হবে। একমাত্র সচেতনতা এবং সতর্কতাই সুন্দরবনকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে পারে।'
গোসাবার বিডিও প্লাস্টিক পরিস্কার করছেন
সুচেতনা যেমন একটি সমাধান দিলেন তেমনই আশার কথা এই যে হিঙ্গলগঞ্জ, গোসাবার মতো কিছু জায়গার বিডিওরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে এই প্লাস্টিক পরিষ্কারের কাজে ব্রতী হয়েছেন। তাঁরা বারবার প্রচারও করছেন যেন প্লাস্টিকে করে ত্রাণ সামগ্রী না আনা হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! তাই যতই বিডিওরা প্লাস্টিক সরানোর কাজ করুন, যেভাবে প্লাস্টিক সুন্দরবনে প্রবেশ করছে তাতে যে বাস্তুতন্ত্র, মাটি এবং পরিবেশের ক্ষতি হবে এবং তাকে সহজে রোধ করা যাবে না এটা আপাতত স্পষ্ট, যতক্ষণ না আমরা সতর্ক এবং সচেতন হচ্ছি।
64 বছর বয়সে মেডিক্যাল পড়তে ভর্তি হলেন জয় কিশোর।
রাজ্যে একদিকে চলছে ভোট প্রচার, আর একদিকে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকদিনেই 400 ছাড়িয়ে গেছে।
বিজেপি সরকার চাইছে আগামী লোকসভার বছরেই আদমশুমারি প্রকাশ করতে। কিন্তু কেন?
নিয়তি আজ সময়ের কাছে, অর্থের কাছে, ক্ষমতার কাছে অসহায়। সে শুধু ধ্বংস খেলা দেখে চলেছে।
চন্দননগরের শ্রীশচন্দ্র এবং কানাইলাল চারুচন্দ্র রায়ের থেকে স্বদেশমন্ত্রের দীক্ষা পেয়েছিলেন।
: ছক ভেঙে যুবদেরএগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বামনেতৃত্ব।