পাড়ায় কাল সে কী হইচই! বাব্বা! হবে না? আমাদের হিন্দু চক্কোত্তিদা কুম্ভমেলায় যাবেন। তাই নিয়ে শোরগোল আর কী! বাড়ির বাকিরা বলেছে যেতে দেওয়া হবে না, এখন বাজারে ফগের বদলে করোনা চলছে তখন এসবের কী দরকার? আগে প্রাণ না আগে পুণ্য?
এই কথা শুনেই তো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন চক্কোত্তিদা। কী! ধম্মের সঙ্গে প্রাণের তুলনা? ধম্ম আছে বলেই না প্রাণ আছে। ওটাই তো আধার, মূর্খ লোকজন। কুম্ভ মেলায় গিয়ে মনের সুখে ডুব দিয়ে পুণ্যি অর্জন করবেন, এসব বিদেশি রোগের জন্য নিজের ধর্ম থেমে থাকবে? এ কেমন অলক্ষুণে কথা?
চক্কোত্তিদা যাবে আর বাড়ির বাকি সদস্যরা যেতে দেবে না। মেয়ে বলে, গত বছর দিল্লির নিজামুদ্দিনের তাবলিঘি জামাতের পর কত কী বলেছিলে ভুলে গেলে? মুসলিমরা রোগ ছড়াচ্ছে। ওদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হোক। আর এখন এটা কী হচ্ছে? নিজের বেলায় আঁটিসুটি, পরের বেলায় দাঁত কপাটি?
কী! সনাতন হিন্দু ধম্ম আর ওই ‘পাপিষ্ঠ’দের ধর্ম এক হল? মজাকি হচ্ছে? কুম্ভমেলায় স্নান করলে জানো কত পুণ্য হয়? এই পুণ্যের জন্য না হয় প্রাণ গেল, দু’টো লোক বেশি আক্রান্ত হল, তাতে কীই বা এমন হবে?
ফলে চক্কোত্তিদা সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রাণ যায় যাক, কুম্ভমেলায় তিনি যাবেনই। বাড়ির লোক অগত্যা মেনে নিল। কী আর করবে? পুণ্যস্নান বলে কতা! কিন্তু সঙ্গে এও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল, পুণ্যস্নানের পর বাড়িতে আগামী 14 দিন ঠাঁই হবে না। মানে? তবে থাকবে কোথায়? কেন সাধু সন্ন্যাসীরা যেমন রাস্তাঘাটে থাকে। বিশ্বের সব থেকে পুরনো ধম্ম, সনাতন হিন্দু ধম্মের জন্য এতটুকু পারবে না? পারবে পারবে খুব পারবে।
বাড়ির লোকের এমন আক্রমণের পর চক্কোত্তিদা গোঁজ হয়ে ঘরে বসে আছেন। বলেন কিনা সব মাকুদের চক্রান্ত! হিন্দু ধর্মকে নীচু করার জন্য এসব ছড়াচ্ছে। পুণ্যস্নান কখনও কোভিড স্প্রেডার হতে পারে? কিন্তু কী আর করা, গালি দিয়েই আপাতত মনের ঝাল মেটাচ্ছেন। পুণ্যস্নান সেরে অতি বড় হিন্দু বীর যে পথে থাকতে পারবেন না। তার থেকে না হয় পরের বছরই হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মনের আনন্দে পুণ্য অর্জন করবেন! ঈশ্বর দেখো, তুমি দেখো।
দূষণ যে এত ভয়াবহ হতে পারে তা কে জানত!
প্রাণ যায় যাক, পুণ্যস্নান চাই!
ছোটু আর বান্টির স্বপ্ন কি ওদের গিন স্কিন পূরণ করতে পারবে?
বাড়ির কাজের লোককে আমরা ঠিক কতটা সম্মানের চোখে দেখি বা বিশ্বাস করি? সত্যি করে বলুন তো?
জীবনের কিছু সার সত্য কথা গল্পের আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
ভোটের সময় ছাড়াও অন্যান্য সময় সরকার তৎপর হলে মানুষ বাঁচে।