×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • দেরিতে হলেও স্বাগত

    বিতান ঘোষ | 23-03-2020

    কল্লোলিনী তিলোত্তমার কলতান যেন এক অদৃশ্য শক্তির জাদুস্পর্শে সহসাই থেমে গেছে। শহরের আনাচে কানাচে জনমনিষ্যির দেখা নেই। যারা কল্পনাবিলাসী তাদের অনেকেই হয়তো এমন কলকাতাকে দেখতে পছন্দ করেন। বন্‌ধ হরতালময় শহরে এমন দিনগুলোয় সচরাচর ছেলেরা পথে ক্রিকেট খেলে, স্থানীয় চায়ের ঠেকে আড্ডা জমে। কিন্তু এখন এইসব দৃশ্যগুলোও প্রায় অন্তর্হিত হয়েছে। শহরের প্রশস্ত রাজপথে মৃণাল বাবুর মতো আধশোয়া হয়ে চুরুট খাওয়া কিংবা হাওড়া সেতুর নাটবল্টু গোনার মত সময় নয় এটা

    সোমবার বিকাল ৫টা থেকে আগামী ২৭ তারিখ রাত ১২টা পর্যন্ত রাজ্যের বেশির ভাগ জায়গাই লকডাউন। অভিধানের কেঠো কথায়, "A lockdown is an emergency protocol that usually prevents people or information from leaving an are.’ সহজ কথায় কোনও বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন বিশেষ এলাকার মানুষকে ওই স্থানেই আটকে দেওয়াআসল উদ্দেশ্য ভাইরাসকে আটকানো, যার বাহন হল মানুষকরোনা মহামারী মোকাবিলায় ওড়িশা, বিহার এবং দিল্লি সরকারের মতোই পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এই পথে হাঁটল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের বিজ্ঞপ্তিতে 'লকডাউন' শব্দটি ব্যবহার করেনি। তার পরিবর্তে কমপ্লিট সেফটি রেস্ট্রিকশন' বা পূর্ণ নিরাপত্তা বিধিনিষেধ' লব্জটি ব্যবহার করেছে। এই নির্দেশিকায় সুস্পষ্ট ভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং জরুরি পরিষেবার বাইরে থাকা যাবতীয় কার্যকলাপ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

    গতকাল দুপুরে এই নির্দেশিকা প্রকাশিত হওয়া ইস্তক জনমানসে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তাতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বহুশ্রুত একটি কবিতার লাইনকে ধার করা যেতে পারে। "দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে বসে থাকা ভীত মুখগুলো ভয় থেকেই দুয়ার এঁটেছে। এরা বিশেষ দরকার ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছে না। বেরোলেও যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেই বেরোচ্ছে। কালকের জনতা কার্ফুতে এইধরণের মানুষগুলো কিন্তু প্রমাণ করে দিয়েছেন, শিয়রে যখন মৃত্যুভয় তখন সংযত থাকতে তাঁরা জানেনএর পাশাপাশি আর এক শ্রেণীর মানুষ আছেন, যারা আক্ষরিক অর্থেই ঘুমোচ্ছেন। তবে, চোখ বুজে নয়, চোখ খুলেই ঘুমোচ্ছেন। প্রশাসন, প্রচারমাধ্যমের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা ও সাবধানবাণীকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। পড়ে পাওয়া ১৪ আনার মতো পাওয়া ছুটিতে কেউ লং ড্রাইভে বেরোচ্ছেন, কেউ বা পাড়ার নাটমন্ডপে করোনা বিষযক জ্ঞানে তাঁদের অগাধ পান্ডিত্যের পরিচয় দিচ্ছেন!

    এই দ্বিতীয় গোষ্ঠীভুক্ত মানুষগুলোই কিন্তু প্রশাসন এবং আমাদের সকলের কাছে চিন্তার কারণ। এমন নয় যে তারা প্রশাসনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলির সঙ্গে অবহিত নন। কিন্তু হয়তো তারা এখনও ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করতে অক্ষম হচ্ছেন। তাই তাদের শুভবুদ্ধির ওপর আর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। বোঝানো যাচ্ছে না যে সরকারের যাবতীয় সিদ্ধান্ত "সব আমাদের জন্য। লকডাউনের এই সিদ্ধান্ত তাই অত্যন্ত জরুরি ছিল বলেই মনে হয়। নরমেধ যজ্ঞে কিছু মানুষ তাদের অজ্ঞতা এবং অসংবেদনশীলতার জন্য ঘৃতাহুতি দেবেন, এটা মানা যায় না। অনেকে বলবেন, অনেক আগেই এটা করা উচিত ছিল। আর এই দুর্দিনেও আমার মতো আশাবাদীরা বলবেন, “বেটার লেট দ্যান নেভার'।

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    রাজনৈতিক দলকে দানের নামে আর্থিক অনাচার, অস্বচ্ছতার লজ্জাজনক কাহিনি।

    শুধুই কি উন্মাদনা, জনারণ্য আর আবেগ? মানুষের রুজিরুটিও তো এসব মেঠো সভা সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত ছিল

    কালো চামড়ার মানুষদের ওপর অত্যাচারের যে সুদীর্ঘ দলিল, তাতে জর্জ ফ্লয়েডের নামটা নতুন সংযোজন মাত্র।

    প্রতিস্পর্ধা-সঞ্জাত, স্বাতন্ত্রমন্ডিত আলোকবর্তিকাই 2022-এর অন্ধকার দিকগুলোয় আলো ফেলবে।

    নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রে গণতন্ত্রের চূড়ান্ত অবমাননা থেকে নিষ্কৃতির পথ কি আমেরিকার গৃহযুদ্ধ?

    নীলকন্ঠ পাখি ওড়াতে গিয়ে যারা নীলকন্ঠ হল যারা, তাদের প্রণাম।

    দেরিতে হলেও স্বাগত-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested