×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বিজেপির পৌরসভার পার্টি ফান্ডে সরকারি অর্থ দান

    বিতান ঘোষ | 10-08-2021

    প্রতীকী ছবি।

    নির্বাচনী বন্ড নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বহু সময় নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলেছে। কিন্তু দলগুলির আয় ব্যয়ের হিসাবে যে যথেষ্ট স্বচ্ছতা নেই, তা আরও একবার প্রমাণিত হল সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে। নামী-বেনামী কর্পোরেট দানে দলগুলি যেমন পুষ্ট হচ্ছে, তেমনই পৌরসভার ‘অনুদান’ও বাঁকা পথে ঢুকে পড়ছে দলের কোষাগারে! আমলাতন্ত্র, লাল ফিতের ফাঁস এড়িয়ে, সরাসরি জনগণের টাকায় জনগণের ‘সেবা’র এমন জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত আর কোথাও মিলবে না।

     

     

    গণতন্ত্রের প্রহরী হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে নির্বাচন কমিশনে প্রদত্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করার কাজে দীর্ঘকাল যুক্ত ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ এবং এই সংস্থার রাজ্য শাখা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ’-এর উদ্যোগে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। 2019-2020 অর্থবর্ষে দেশের জাতীয় দলগুলি (যে দলগুলির আসনসংখ্যা ও ভোট শতাংশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জাতীয় দল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়) 20,000 টাকার পরে যত অনুদান পেয়েছে, সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই রিপোর্টে। রিপোর্টে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। বিজেপির রাজনৈতিক সাফল্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ বেড়েছে। আবার সিপিএম কিংবা সিপিআই-এর মতো বাম দলগুলিও কর্পোরেট অনুদান নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ছুঁতমার্গ দেখায়নি।

     

     

    2019-20 অর্থবর্ষে রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন সূত্র থেকে ঠিক কত পরিমাণ অনুদান পেয়েছে, তা নথি সহ নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল 2020 সালের 30 সেপ্টেম্বর। কিন্তু বিএসপি এবং এনসিপি ছাড়া বাকি দলগুলি, অর্থাৎ বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের এই সংক্রান্ত নথি কমিশনে জমা দেয়নি। আর একটি দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি নথি জমা দিলেও, কমিশনের সাইটে তার কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

     

     

    রিপোর্টে প্রত্যাশিতভাবেই দেখা যাচ্ছে বিজেপির কর্পোরেট ভাগ্য ভীষণই প্রসন্ন। একই অর্থবর্ষে 20,000 টাকা বা তার বেশি পরিমাণ অনুদানের মোট সংখ্যা 6363টি, যার মূল্য প্রায় 1013.865 কোটি টাকা। এর মধ্যে 5576টি অনুদান গেছে বিজেপির ঘরে, যার মূল্য 785.77 কোটি টাকা। কংগ্রেস পেয়েছে 350টি অনুদান (139.016 কোটি টাকা)। স্পষ্টতই বিজেপির প্রাপ্ত অনুদান বাকি দলগুলির প্রাপ্ত অনুদানের তিনগুণেরও বেশি! মায়াবতীর বিএসপি খানিক বিস্ময় জাগিয়েই জানিয়েছে, একই অর্থবর্ষে তারা 20,000 বা তার বেশি পরিমাণ অর্থের কোনও অনুদান পায়নি। 14 বছর ধরে তারা প্রায় একই তথ্য পেশ করেছে।

     

     

    অনুদান-তথ্য বিশ্লেষণে কমবেশি প্রতিটি জাতীয় রাজনৈতিক দলেরই শ্রীবৃদ্ধি লক্ষনীয়। 2019-20 অর্থবর্ষে জাতীয় দলগুলির মোট অনুদানের পরিমাণ 62,145 কোটি টাকা বেড়েছে, শতাংশের হিসাবে আগের অর্থবর্ষের তুলনায় বৃদ্ধির পরিমাণ 6.532019-20 অর্থবর্ষে বিজেপির প্রাপ্ত অনুদানের অঙ্ক 785.77 কোটি টাকা— আগের অর্থবর্ষের তুলনায় বৃদ্ধির পরিমাণ 5.88 শতাংশ। অবশ্য 2018-19 অর্থবর্ষে বিজেপির অনুদান প্রাপ্তির পরিমাণ আগের অর্থবর্ষের তুলনায় 70 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। কংগ্রেসের রাজনৈতিক রেচিত্রের নিম্নমুখীনতার প্রতিফলন তাদের অনুদান প্রাপ্তিতেও যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত অর্থবর্ষের তুলনায় তাদের অনুদান প্রাপ্তির পরিমাণ 6.44 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। 2018-19 অর্থবর্ষে অবশ্য কংগ্রেসের অনুদানের পরিমাণ আগের অর্থবর্ষের তুলনায় 457 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। কর্পোরেট খাতে বিজেপি যেখানে  2025 জন দাতার থেকে মোট 720.408 কোটি টাকা পেয়েছে, কংগ্রেস সেখানে 155 জন দাতার কাছ থেকেমোট 133.074 কোটি টাকা পেয়েছে।

     

     

    কেরালা বাদে দেশের প্রায় সর্বত্র দলের রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকলেও আলোচ্য অর্থবর্ষে সিপিএমের অনুদান প্রাপ্তির পরিমাণ 551 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত অনুদান গত অর্থবর্ষের তুলনায় 81 শতাংশ কমেছে। অনুদান দাতাদের মধ্যে শীর্ষতালিকায় রয়েছে প্রুডেন্ট ইলেকটোরাল ট্রাস্ট, আইটিসি লিমিটেডের মতো সংস্থাগুলি।

     

     

    আরও নিবিড় বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, 8টি জাতীয় দলের মধ্যে বিজেপি, কংগ্রেস, এনসিপি, সিপিএম, সিপিআই মোট 1697টি অনুদানের প্যান (পারমানেন্ট অ্যাকাউন্ট নাম্বার) সহ অন্যান্য নথি দেখাতে পারেনি— টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ 47,121 কোটি টাকা! এছাড়াও কমবেশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দাখিল করা তথ্যেই বেশ কিছু অস্পষ্টতা এবং গমিল লক্ষ্য করা গেছে। তবে চোখে পড়ার মতো গরমিল দেখা গেছে বিজেপির একটি অনুদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। মহারাষ্ট্রের বিজেপি শাসিত অমরাবতী পৌরসভা থেকে বিজেপি 4.80 লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, বিজেপি এই অনুদানের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের নাম, প্যান সহ কোনও তথ্যই কমিশনে পেশ করেনি। প্রসঙ্গত, দেশের কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কোনও রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিতে পারে না। সংবিধানের 12 ও 234Q অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার পরিচালিত একটি সাংবিধানিক সংস্থা হয়েও, অমরাবতী পৌরসভা কীভাবে একটি রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই রিপোর্টে।

     

    আরও পড়ুন: স্বাধীনতার সৈনিক কানাইলাল ভট্টাচার্য

     

    এই রিপোর্টে রাজনৈতিক দলগুলির জমা করা তথ্যে স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। কার্যত বহু সময়েই দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন কমিশনকে অনুদানের অসম্পূর্ণ তথ্য দেয়, কখনও প্যান হারিয়ে যাওয়ার দোহাই দেয়। এইসব ক্ষেত্রে কমিশনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং গৃহীত পদক্ষেপ সর্বসমক্ষে প্রকাশ করার সুপারিশ করা হয়েছে এই রিপোর্টে। তাছাড়াও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের তহবিলের উৎস ও পরিমাণ তথ্যের অধিকার আইন (RTI)-এর আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

     

     

    ভারতবর্ষে যারা রাজনৈতিক পরিসর, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কলুষমুক্ত দেখতে চান, এই রিপোর্ট নিশ্চয়ই তাঁদের কাছে আশাব্যাঞ্জক হবে না। নাগরিকদের একটা বড় অংশ অবশ্য এসব বিষয় নিয়ে ভাবিত নন, তাই রাজনৈতিক দলগুলিও স্রেফ নিয়মরক্ষায় একটা তথ্য কমিশনে পেশ করে দায় এড়ায়। তবু, এ কথা সকলেই মানবেন, দেশের সত্তরোর্ধ্ব গণতন্ত্রে আর একটু স্বচ্ছতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই স্বচ্ছতার অভিযানে না নামলে কমিশনকে কঠোর হতে হবে। প্রমাণ করে দিতে হবে, তারা শাসকের আজ্ঞাবহ নয়, যথার্থই স্বাধীন, স্বশাসিত একটা সংস্থা— যারা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মজবুত করার কাজে দায়বদ্ধ।


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    সেনাকে বুকে গুলি করার নিদান দেন যে দলের নেতারা, সেই দল উত্তর-পূর্ব ভারতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ছাঁটতে চ

    আসামের ফর্মুলায় বাংলা-জয় হল না বিজেপির।

    গত ভোটে মরুরাজ্যে যাও বা মরূদ্যানের দেখা মিলেছিল, সেটাও বোধহয় মরীচিকা হয়ে মিলিয়ে যেতে চলেছে।

    মাথা মুড়িয়ে গায়ে স্যানিটাইজার দিয়ে দলে ফেরানোর সংস্কৃতি কিন্তু একদিন ব্যুমেরাং হতে পারে

    সঙ্গীতের মহাকাশে ধ্রুবক হয়েই থাকবেন সন্ধ্যা-তারা।

    বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতির এই অধোগমনে রবীন্দ্রনাথ ব্যথিতই হতেন।

    বিজেপির পৌরসভার পার্টি ফান্ডে সরকারি অর্থ দান-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested