United States: The country where liberty is a statue : Nicanor Parra
বিশ্বের ইতিহাস অনেকটাই হননের ইতিহাস। আর তাতে মানুষ এক সংখ্যা মাত্র। সেখানে মূল্যবোধ, সমানাধিকার, কিংবা স্বাধীনতার মতো বিষয় অপ্রাসঙ্গিক, উপেক্ষিত। ঘোষণা অনুসারে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সমতায় বিশ্বাসী আমেরিকার ইতিহাসও এর ব্যতিক্রম নয়। সে দেশে অ্যাফ্রো-আমেরিকান তথা কালো চামড়ার মানুষদের ওপর অত্যাচারের যে সুদীর্ঘ দলিল, তাতে জর্জ ফ্লয়েডের নামটা নতুন সংযোজন মাত্র। ফ্লয়েড একা নন, আমেরিকাও একমাত্র দেশ নয়। একটা অদৃশ্য গ্যাস চেম্বারের ভিতরে আটকে দেশে দেশে অগণিত মানুষ। সত্যিই আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছি না সেখানে। এই বিশ্বের প্রতিটি কোণায় যারা সংখ্যালঘু, কেউ বর্ণে, কেউ ধর্মে, কেউ বা ভাষাগত কারণে, তাদের সত্যি এভাবেই শ্বাসবায়ু রোধ করে মারা হচ্ছে। বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রত্যক্ষভাবে প্ররোচনা জোগাচ্ছেন, যাতে এই মানুষগুলো আর কখনও এই পৃথিবীর বুকে শ্বাস নিতে না পারে।
আমেরিকার সর্বশেষ আদমশুমারি জানাচ্ছে, সে দেশে অ্যাফ্রো-আমেরিকানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র 13.4%। আবার বিবিধ অপরাধমূলক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে এদের 28%-ই কারাবন্দি। এত কিছু সত্ত্বেও এই অ্যাফ্রো-আমেরিকান আর কিছু ‘উটকো' মেক্সিকান নাকি গোটা আমেরিকাকে তছনছ করে ফেলছে। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিছুতেই তাদের প্রতি অনুকম্পা করতে পারছেন না। আমেরিকার ভয়াল করোনো সংক্রমণ এবং সেই কারণে মৃত্যুর পরিসংখ্যানের সিংহভাগ জুড়েই এই কালো চামড়ার মানুষরা। আর মাত্র পাঁচ মাস পরেই চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউস দখলের লড়াই। আমেরিকায় এই জাতি বিদ্বেষের আবহ উত্তুঙ্গ মাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ট্রাম্পকে আবার জিতিয়েই পরিত্রাণ পেতে চাইবে।
জর্জ ফ্লয়েডের গলায় নিজের হাঁটু চেপে ধরে যে পুলিশ অফিসার তার ‘শৌর্যের' পরিচয় দিয়েছেন, তার নাম ডেরেক শভিন। কি প্রতীকী নাম! আধিপত্যবাদী শভিনিস্ট রাষ্ট্র এবং তার রাষ্ট্রপ্রধানের সকল গুণাগুণ নিজের হাঁটুর মধ্যে পুরে ফেলা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এই বিদ্বেষ ও নৃশংসতার শিকড় কিন্তু অনেক গভীরে। সমাজের দুর্বলতর অংশকে হেয় জ্ঞান করে, তাদের প্রতি ঘৃণা পুষে রেখেই আজ কিছু মানুষ মসনদে আসীন হয়েছেন। এককালে ক্যাসিনো ব্যবসায় হাত পাকানো ট্রাম্প তো কালো চামড়ার মানুষদের তার বিলাসবহুল বলরুমে পর্যন্ত ঢুকতে দিতেন না। আবার ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভূরাজনৈতিক ও আরও অন্যান্য কারণে বর্তমানে ট্রাম্পের সুহৃদ; নরেন্দ্র মোদীও কিশোর বয়স থেকেই অনুরূপ ‘এলিমিনেশন ফর বেটার ফিউচার' ধারণায় বিশ্বাসী। স্বাভাবিকভাবেই, এই এলিমিনেশনের কোপ এসে পড়বে দেশের সংখ্যালঘু শ্রেণীর ওপর। ‘দ্য নিউ ইয়র্কার'-এ জনৈক ডেক্সটার ফিলকিন্সের ‘দ্য ব্লাড অ্যান্ড সয়েল ইন নরেন্দ্র মোদী'জ ইন্ডিয়া' নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। 2019 সালের 2 ডিসেম্বর তারিখে। সেখানে প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী আশীষ নন্দী জানাচ্ছেন, কিশোর ‘স্বয়ংসেবক' নরেন্দ্র মোদী তাঁকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, দেশের মুসলমানরা ভারতের উন্নতির পথে প্রধান অন্তরায়। অর্থাৎ প্রশাসক হওয়ার অনেক আগে থেকেই এই ধরনের শাসকদের মনে ওই সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা কখনও না কখনও লালিত হয়েছে।
2015 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর একটা রিপোর্ট বলছে, 2015 সালের মে মাস থেকে 2018 সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে গণপ্রহারে 44 জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে সিংহভাগই ধর্মীয় সংখ্যালঘু শ্রেণীর এবং এরকম 23টি ঘটনায় আক্রমণকারী দলের সদস্যরা কোনও না কোনও উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলের সদস্য। অথচ আগাগোড়া এই বিষয়ে নীরব থেকেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার হয়ে ব্যাট ধরেছেন, দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতো ‘স্টেটসম্যান' হতে চাননা, বরং বিদ্বেষে ভর করেই রাজনীতির রথের চাকা ঘোরাতে চান।
দেশের 2 কোটি 40 লক্ষ মানুষ রাষ্ট্রের খেয়ালে হঠাৎই ‘অনুপ্রবেশকারী' হয়ে যান। অসমের বরাক উপত্যকার বাংলাভাষী মানুষকে এখনও নাগরিকত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হচ্ছে। বিশ্বজোড়া সঙ্কটে বিশ্বের এইসব রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন মানুষের জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম চাহিদাটুকু পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তখনই শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে দিচ্ছেন সমাজের দুর্বলতর অংশটাকে। সবল সংখ্যাগুরুর অত্যাচারে নিষ্পেষিত হচ্ছে সংখ্যালঘুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব। শুধু নির্বাচনী রাজনীতির কূটকৌশল হিসাবেই নয়, এই অকারণ বিদ্বেষ দেশনেতাদের মনের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে। সংখ্যালঘুর প্রতি সংখ্যাগুরুর রাষ্ট্রের স্পষ্ট বার্তা, হয় তুমি সংখ্যার সঙ্গে সুর মেলাও, নয় হারিয়ে যাও। রাজস্থানের পহেলু খানকে যেমনটা বলা হয়েছিল। হয় ‘জয় শ্রী রাম' বলতে হবে, নয়তো গরুচোর অপবাদ নিয়ে মরতে হবে। সীমান্ত পেরিয়ে দেশে দেশে সংক্রামক ব্যধির মতোই ছড়িয়ে পড়ছে এই বিদ্বেষ। সত্যিই, আমাদের দমবন্ধ হয়ে আসছে। উই ক্যান নট ব্রিদ।
কুমিল্লার দেবীমূর্তি কিংবা অযোধ্যার মসজিদ- ধর্মে নয়, ঘা পড়ছে উপমহাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনায়।
নিজেদের দুর্বলতা কাটানোর দাওয়াই খুঁজে না পেলে অন্যরা দল ভাঙাবেই।
কালো চামড়ার মানুষদের ওপর অত্যাচারের যে সুদীর্ঘ দলিল, তাতে জর্জ ফ্লয়েডের নামটা নতুন সংযোজন মাত্র।
সেনাকে বুকে গুলি করার নিদান দেন যে দলের নেতারা, সেই দল উত্তর-পূর্ব ভারতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ছাঁটতে চ
জন্মিলে মরিতে হইবে, ক্যাপিটালিজম সঙ্গ দেবে!
ধর্ম যাদের সঞ্জীবনী, সেনাশাসন যাদের গণতান্ত্রিক আভরণ, তাদের পথ আমরা কেন অনুসরণ করব?