হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, দেশের আকাশ থেকে নীলকন্ঠ পাখিগুলো খোয়া গেছে। কারা যেন শিকার করে নিয়েছে সেগুলো। যেগুলো হাতের নাগাল এড়িয়ে উড়তে চেয়েছিল, তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার উপকারিতা বোঝানো হয়েছে। নগরে বন্দরে কোলাহলমুখর হয়ে দেশ চলছে। সকলেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে ধাবিত। আর একদল মানুষ ওই হারিয়ে যাওয়া নীলকন্ঠগুলোকে খুঁজছে, উদভ্রান্তের মতো খুঁজছে— অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসের পাগল বড় ঠাকুরের মতো মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তুলে চিৎকার করে বলছে ‘গ্যাৎচোরেতশালা’। আসলে বলতে চাইছে, আমার ওই পাখিগুলো ফিরিয়ে দাও, যারা এই কয়েককাল আগেও এই দেশের আকাশে ডানা মেলে উড়ত।
স্ট্যান স্বামীরা সেই নীলকন্ঠগুলোকে দেশের আকাশে আবার ওড়াতে চেয়েছিলেন। দর্পী শাসক তাই নীলকন্ঠগুলোর সঙ্গে স্ট্যানদেরও বন্দি করেছিল। মুক্তির আগল খুলে গেলে, রাষ্ট্রের বাঁধন কঠিন হয়, অল্প কয়েকদিনের জন্য হলেও হয়। রাষ্ট্রের যন্তরমন্তর ঘর থেকে যারা মুক্তি আর অধিকার লুঠ করে, তাদের নামে প্রথম সমন জারি হয়। কিন্তু খাঁচায় বন্দি থাকতে চায় কোন চিড়িয়া? যদি মরার পরেও না মরে এরা? ওই তোতা পাখিটার মতো মরে যাওয়ার ভান করে উড়ে পালায়? তাই মরণটায় নিঃসন্দিগ্ধ থাকা ভাল।
স্নায়ুবৈকল্যে শরীর কাঁপে, হাতে করে জলটাও তুলে খেতে পারেন না অশীতিপর মুক্তি-সেনানী। তবু এইসব অদ্ভুত চিড়িয়াকে দিয়ে ‘বল হরেকৃষ্ণ’, ‘বল রাম রাম’ বলিয়ে নেওয়া যায় না। রাজা চিৎকার করে বলেছিল ‘ইয়ে আজাদি...’, খাঁচা ভাঙতে চাওয়া চিড়িয়া বলে উঠেছিল, ‘সব ঝুটা হ্যায়’। রাজার নির্দেশে রাজপেয়াদা শীর্ণ পায়ে বেড়ি বেঁধে দিল। কিন্তু তার অপরাধটা কী?
আরও পড়ুন: কেন 84 বছরের বুড়োটা এত বিপজ্জনক!
পরের দিন সংবাদপত্রে শিরোনাম বেরোল, ‘ওড়ায় প্ররোচনা দিয়ে বেড়িতে আটকা পড়ল চিড়িয়া’। তলায় বিস্তারিত, ‘রাজার আদেশে ওড়া মানা, ওড়ার বিদ্যা কয়েক প্রজন্ম ধরে শেখানো হয়নি, তাই অনেকেই আকাশে ডানা মেলে উড়তে ভুলে গেলেও, একজন চিড়িয়া পুরনো অভ্যাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। রাজদ্রোহে তাকে খাঁচাবন্দি করা হয়েছে।' সেইদিন থেকে প্রচন্ড ঝড় শুরু হল। সবার বাসা গেল ভেঙে। আকস্মিক বিপদের মুখে পড়ে আমরা অনেকেই খেয়াল করলাম নীলকন্ঠগুলো আবার উড়ছে। উড়ছে তো উড়ছেই, সবাই উড়ছে— যারা ডানা মেলে উড়তে ভুলে গিয়েছিল।
মনে আছে ঝড়ের পরের দিন সংবাদপত্রে অবিচুয়ারি লিখেছিল নীলকন্ঠ পাখিরা। তার শিরোনাম ছিল, ‘আমাদের মুক্তি দিতে গিয়ে যারা নীলকন্ঠ হল, তাদের স্মরণ করছি আমরা।' স্ট্যান স্বামীর এপিটাফে কারা যেন লিখে গেছে, ‘বেড়ি বেঁধেও যাদের ওড়া আটকানো যায়নি, তারা আজীবন মনে রাখবে এখানে শায়িত মানুষটাকে।'
যুদ্ধ-যুদ্ধ আবহে আপাতত ‘দেশপ্রেমী' সাজতে চাইছেন সবাই
‘আসিতেছে বিপদের দিন, চাষিরা করিতেছে হম্বিতম্বি, চোখ রাঙাইছে চিন!’
সংবিধান দিবসের স্মরণ: নাগরিকের কাছে ধর্মগ্রন্থের মতোই পবিত্র এই নথি।
সংখ্যাগুরুর জন্য,তাঁদেরই দ্বারা শাসিত ভারতবর্ষের একজন নাগরিক হিসাবে খুরশিদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী
কথা রাখে না সরকার, রেললাইনে মরাই যেন ভবিতব্য পরিযায়ী শ্রমিকদের।
কাজ দেয় না সরকার, চাকরি হবে কীসে?